কলকাতা: ভারতীয় ক্রিকেটে ইতিহাসে অন্য়তম সেরা ম্যাচগুলোর মধ্যে একটি। ইডেনে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। ২০০১ সালের সেই ম্যাচ ভারতীয় ক্রিকেটের দর্শন বদলে দিয়েছিল। আজ ১৪ মার্চ, সেই স্মরণীয় দিনের ২১ বছর পার। ক্রিকেটের নন্দনকাননে আজকের দিনেই ২১ বছর আগে স্টিভ ওয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে ইতিহাস গড়েছিল সৌরভের ভারতীয় দল।


সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত। তখনকার সময়ের অস্ট্রেলিয়া দলকে হারানো দেশে-বিদেশে সব জায়গাতেই ছিল একপ্রকার অসাধ্য। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার মধ্যেই তো রয়েছে বীরত্বের পরিচয়। সেটাই করে দেখিয়েছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়। টেস্টে ''কামব্যাক'' শব্দটা শুনলেই এই দুজনের নাম মনে পড়ে যেন। ২০০১ সালের মার্চে কলকাতা টেস্টে মহাকাব্য রচনা করেছিলেন লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৪৫ রান তুলে চাপে ফেলেছিল ভারতকে। জবাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দল গুটিয়ে গিয়েছিল ১৭১ রানেই। ফলো অনে নেমে সবার সব হিসেব পালটে দেওয়া শুরু করল লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের সেই জুটি। ৬৩১ মিনিট ক্রিজে ছিলেন লক্ষণ, খেলেছিলেন ৪৫২টি বল। ৪৪টি চারের মারে খেলেছিলেন জীবনের সেরা ইনিংস ২৮১। ওদিকে লক্ষ্মণের সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে ১৮০ রান করেছিলেন দ্রাবিড়। ৩৫৩ বল খেলেছিলেন ৪৪৬ মিনিটের ইনিংসে। দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ২০টি চার। সাত উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৬৫৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। পরে হরভজন সিংয়ের তাণ্ডবে ২১২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। হারের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অসাধারণ এক ইতিহাসের জন্ম দেয় ভারত।


সেই সিরিজে ১-০ ব্য়বধানে পিছিয়ে থেকে ইডেনে খেলতে নেমেছিল ভারত। মুম্বইয়ে ১০ উইকেটে আগের ম্যাচে হারের দগদগে ঘা। তার ওপর আবার ইডেন টেস্টে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৪৪৫ রানের বিশাল স্কোরের সামনে ১৭১ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ফলো অনের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে একটা সময় ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান বোর্ডে তুলেছিল ভারত। ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তৃতীয় দিনের শেষে ৪ উইকেটে ২৫৪ রান বোর্ডে তুলেছিল ভারত। লক্ষ্মণ ১০৭ রানে ও দ্রাবিড় ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। 


তৃতীয় দিন পর্যন্তও পুরোদমে ম্যাচ স্টিভ ওয়ার দলের দখলে ছিল। তবে পালটে গেল তা চতুর্থ দিনেই। গ্লেন ম্যাকগ্রা, মাইকেল কাসপ্রোইচ, শেন ওয়ার্ন, জেসন গিলেসপিদের বোলিংয়ের সামনে মাথা উঁচু করে গোটা দিন মাটি কাঁমড়ে পড়ে থাকলেন ২ যোদ্ধা। সেদিন মোট ৯০ ওভারে ৩৩৫ রান বোর্ডে যোগ করেছিলেন লক্ষ্মণ-রাহুল। তৃতীয় দিনের শেষে ভাইরাল ফিভারে ভুগছিলেন রাহুল। তবে লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন যে ম্যাচ বাঁচাতেই হবে। তাই নিজের শরীরের অসুস্থতার তোয়াক্কা না করেই লক্ষ্মণের সঙ্গী হয়ে পরের দিন মাঠে নেমেছিলেন। আর শুধু নামাই নয়, ৪৪৬ মিনিট সেই জ্বর নিয়ে, ট্যাবলেট খেয়ে ক্রিজে কাটিয়ে দিলেন। ২০টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৫৩ বলে ১৮০ রান করে যখন রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, তখন দল বিপদসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেই ইনিংসে ৭ উইকেটে ৬৫৭ বোর্ডে তোলার পর ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। 


ম্যাচের পরেরটুকু বিশ্বের সব ক্রিকেটপ্রেমীদেরই জানা। প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন হরভজন সিংহ। তাঁর ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়ার সুবাদে অস্ট্রেলিয়া ৩৮৪ রান তাড়া করতে নেমে ২১২ রানে অল আউট হয়ে যায়।