ভুবনেশ্বর: ভারতে ক্রীড়াবিদদের প্রস্তুতির জন্য আর্থিক সাহায্য না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দীপা কর্মকারের কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী। এ বছর দ্রোণাচার্য পুরস্কার পাওয়া বিশ্বেশ্বর বলেছেন, ‘এটা ভারত। এখানে আগে পারফর্ম করতে হয়, তারপর সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পাওয়া যায়। সাংবাদিকরাও সাফল্য পাওয়ার পরেই সংশ্লিষ্ট ক্রীড়াবিদদের নিয়ে লেখেন।’

ভুবনেশ্বরে ক্রীড়া সাংবাদিক ফেডারেশনের ৩৯-তম জাতীয় সম্মেলেনে দীপা ও তাঁর কোচকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ভারতীয় হকি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক দিলীপ তিরকে সহ বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ। তাঁদের মতে, রিও অলিম্পিকে যোগ দেওয়ার আগে দীপা সহ ভারতীয় অ্যাথলিটদের আর্থিক সাহায্য করা হলে ভাল হত। এতে তাঁদের পারফরম্যান্স উন্নত হতে পারত। কিন্তু বিশ্বেশ্বর বলেছেন, ভারতে কোনওদিনই উঠতি তারকাদের সাহায্য করা হয় না। সাফল্য পাওয়ার পরেই স্বীকৃতি মেলে।

দীপাকে দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিশ্বেশ্বর। তিনি প্রিয় ছাত্রী সম্পর্কে বলেছেন, ‘একদম শুরুতে দীপা একগুঁয়ে ও বদমেজাজী ছিল। ওর বাবাও আমাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। দীপা যখন আমার কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে, তখন আমি ওর এই স্বভাবের পরিচয় পেয়েছিলাম। ও দীর্ঘক্ষণ অনুশীলন করার পর আমি যখন থামতে বলতাম, তখনই ও রেগে যেত। আমার ভয় লাগত, অতিরিক্ত অনুশীলন করলে ও চোট পেতে পারে। কিন্তু ও শুনত না। পরে আমি ওর এই স্বভাবটা জিমন্যাস্টিক্সে ছড়িয়ে দিই। ওর মধ্যে ভাল পারফরম্যান্স দেখানোর জেদ তৈরি হয়।’

দীপার কোচ আরও বলেছেন, প্রথমে দীপার বাবা তাঁকে অন্য একজন কোচের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কোচ দীপার পা দেখে তাঁকে বাতিল করে দেন। তবে বিশ্বেশ্বর দীপাকে সাত-আটটি ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। নিয়মিত সেই ব্যায়াম করে ৯ মাস পরে বিশ্বেশ্বরের কাছে যান দীপা। এরপর শুরু হয় তাঁর জিমন্যাস্টিক্স অনুশীলন।

দীপা তাঁর সাফল্যের যাবতীয় কৃতিত্ব দিচ্ছেন কোচকে। তিনি বলেছেন, ‘আমার জিমন্যাস্টিক্সে কোনও আগ্রহ ছিল না। আমি খেলাটা বুঝতামও না। স্যারই আমাকে সবকিছু শেখান। তিনি আমার কাছে ঈশ্বরের সমান। আমার প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল লন্ডনে। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের দ্বিতীয় ট্রায়ালে সিনিয়রদের হারিয়ে দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু স্যার বলেন, লক্ষ্য আরও বড় করতে। সেই কমনওয়েলথ গেমমে প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসেবে পদক জেতেন আশিস কুমার। তাঁকে দেখে আমি অনুপ্রেরণা পাই। এরপর সাফল্যের লক্ষ্যে নিজেকে উজাড় করে দিই।’

আজ সারা দেশ দীপাকে নিয়ে মাতামাতি করছে। কিন্তু ত্রিপুরার এই জিমন্যাস্ট শুরুর দিনগুলির কথা স্মরণ করে বলেছেন, ২০০৭ সালের জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে দলগত ইভেন্টে সোনা জেতার পর ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় শিবিরে ডাক পান। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক কি না। পারফরম্যান্স দিয়েই সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন দীপা। ভবিষ্যতেও সাফল্য পেয়ে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিতে চাইছেন এই বাঙালি কন্যা।