নয়াদিল্লি: ভারতে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা জনপ্রিয়তা, খ্যাতি, সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে সেরা। কিন্তু সেটা শুধু বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ক্ষেত্রে। দৃষ্টিহীন ক্রিকেটাররা পরপর দু’বার বিশ্বকাপ জেতার পরেও ন্যূনতম আর্থিক সুবিধা পান না। কেউ অর্থ রোজগারের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বেড়ান, কেউ খেতমজুর হিসেবে কাজ করেন, আবার কেউ দুধ বিক্রি করেন। তাঁরাই দেশকে সম্মান এনে দিয়েছেন। বিনিময়ে কিছুই মেলেনি। দারিদ্র্য তাঁদের নিত্যসঙ্গী।

বিরাটদের তুলনায় ভারতের দৃষ্টিহীন ক্রিকেটারদের সাফল্য অনেক বেশি। তাঁরা গত ৫৯ মাসে দু’বার টি-২০ বিশ্বকাপ, দু’বার একদিনের বিশ্বকাপ, একবার এশিয়া কাপ এবং চারটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতেছেন। তারপরেও দলের ১৭ জন সদস্যর মধ্যে ১২ জনেরই স্থায়ী চাকরি নেই। তাঁদের মধ্যে সাতজন বিবাহিত। যাঁরা চাকরি করেন, দেশের হয়ে খেলতে যাওয়ার জন্য তাঁরা ছুটি পান না। ফলে বিনা বেতনের ছুটি নিয়েই তাঁদের জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়।

সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরা হওয়া অল-রাউন্ডার গণেশ মুন্দকরের বাবা-মা খেতমজুর হিসেবে কাজ করেন। সেই কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি একটি ছোট মুদিখানা দোকানও চালান গণেশ। তিনি বলেছেন, ‘পরিবারের লোকজন খেলা ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু এটা আমার প্যাশন। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর গুজরাত সরকার আমাকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখনও চাকরি পাইনি।’

অপর এক দৃষ্টিহীন ক্রিকেটার প্রেম কুমার গান করেন। তিনি বলেছেন, ‘সাত বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে আমি দৃষ্টিশক্তি হারাই। ক্রিকেট খেলে টাকা রোজগার করতে পারি না। তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাই। প্রতিটি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে আমি এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পাই। মাসে দু-তিনটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ডাক পাই। বিনায়ক চতুর্থীর সময় অবশ্য প্রায় ১০টি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ পাই। তাতে যা রোজগার হয়, সেটা দিয়ে পরিবারের সব খরচ মেটানো সম্ভব নয়।’

অল-রাউন্ডার অনিল আর্যর পরিবারে আটজন সদস্য। পরিবারের মাসিক রোজগার ১২,০০০ টাকা। অনিলের বাবা খেতমজুর। এই ক্রিকেটার দুধ বিক্রি করেন। স্থায়ী চাকরি না করায় বিয়ে করতে পারছেন না বেঙ্কটেশ্বর রাও।

ভারতের দৃষ্টিহীন দলের অধিনায়ক অজয় রেড্ডি বলেছেন, ‘আমাদেরও কোহলি, ধোনির মতোই প্যাশন আছে। কিন্তু আমরা স্বীকৃতি পাই না। ক্রীড়ামন্ত্রক বা বিসিসিআই আমাদের স্বীকৃতি দেয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

কোচ জন ডেভিড বলেছেন, ‘দৃষ্টিহীন ক্রিকেটারদের সংগঠন বিসিসিআই-এর অনুমোদিত না। সরকার নামমাত্র সাহায্য করে। সুযোগ-সুবিধা তো দূর, আমাদের অনুশীলনের মাঠ পাওয়াই মুশকিল হয়। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’