কলকাতা: সুনীল গাওস্করের পাশাপাশি ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকালের সর্বসেরা ওপেনারদের নাম বললেই অবশ্যই নাম আসবে বীরেন্দ্র সহবাগের (Virender Sehwag)। লাল বলের ক্রিকেটে প্রায় ৫০-র গড়ে শতাধিক টেস্ট খেলে ৮৫০০-র বেশি রান করেছেন বীরু। ওপেনার হিসাবে রয়েছে জোড়া ৩০০ রান। তবে এই সহবাগকে টেস্ট ওপেনার হিসাবে একেবারে শুরুর দিকে ভরসাই করতে পারেননি রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)।


ওপেনার সহবাগকে নিয়ে দ্রাবিড়ের ভয়


টেস্ট ক্রিকেটে দ্রাবিড় সাধারণত তিন নম্বরেই নামতেন। ওপেনাররা দ্রুত আউট হলে তাঁকে শুরুতেই নামতে হত। এদিকে সহবাগ ছিলেন মারকাটারি ব্যাটার। প্রথাগত টেস্ট ক্রিকেটের সুনীল গাওস্করের মতো প্রথম ঘণ্টা বোলারকে দেওয়ার পাঠশালায় তিনি অন্তত পড়েননি। তাই ২০০২ সালে প্রথমবার যখন টেস্টে ওপেন করতে নামছিলেন তখন তাঁকে ভরসাই করে উঠতে পারেননি রাহুল দ্রাবিড়। ওপেনাররা মাঠে নামার আগেই ভয়ে আগেভাগেই ব্যাট প্যাড নিয়ে সাজঘরে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। সহবাগ জিজ্ঞেস করায় তাঁকে বলেই ফেলেছিলেন, 'আমার মনে হচ্ছে তুমি আমায় প্যাড পরার সময়টুকুও দেবে না।'


সেই স্মৃতিচারণ করে সহবাগ একদা জানান, 'আমার মনে আছে আমি যখন প্রথমবার ভারতের হয়ে টেস্টে ওপেন করতে নামছিলাম, সেই দিনের কথা। আমি ব্যাটে নামার জন্য তখনও প্রস্তুতও হয়নি। তার আগেই দেখি রাহুল দ্রাবিড় ব্যাট প্যাড নিয়ে মাঠে নামার জন্য তৈরি। তো আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বিষয়টা। জবাবে ওঁ বলে যে আমি (দ্রাবিড়) জানি তুমি আমায় প্যাড পরার সময়টুকুও দেবে না। তবে প্রথম ম্যাচের পরেই ওঁর ধারণা বদলে গিয়েছিল। ওঁ বুঝেছিল যে আমি ওকে যথেষ্ট সময় দেব।'


মাস্টারস্ট্রোক


সত্যিই দ্রাবিড়ের ধারণা বদলে দিয়েছিলেন সহবাগ। দলে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় জাহির খানের পরামর্শেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) তাঁকে ওপেন করতে পাঠান বলে জানিয়েছিলেন সহবাগ। আর এই পরিকল্পনাই মাস্টারস্ট্রোক হয়ে টেস্ট ওপেনারদের সংজ্ঞাই বদলে দেয়। লর্ডসে ওই সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৪৮৭ রানের জবাবে ব্যাটে নেমে দুরন্ত আগ্রাসী মেজাজে ৯৬ বলে ৮৪ রানের একটি ইনিংস খেলেন সহবাগ। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ১০টি চার ও একটি ছক্কায়। অপরদিকে, ওয়াসিম জাফর শুরুতেই আউট হয়ে গেলেও নিজের সাধারণ খেলা থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটেননি বীরু।


ম্যাচে অবশ্য শতরান হাতছাড়া করে কিন্তু সৌরভ, দ্রাবিড়ের কাছে বকুনিও খেয়েছিলেন তিনি। সহবাগের দুরন্ত ইনিংস সত্ত্বেও বেশিরভাগ ব্যাটাররা দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হওয়ায় ভারত ১৭০ রানে এই ম্যাচ হেরে যায়। লর্ডসে শতরান হাতছাড়া করেও অবশ্য ঠিক তার পরের ম্যাচেই ট্রেন্ট ব্রিজে ১০৬ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার সহবাগ। এই সিরিজের পরেই এক যুগন্তকারী ওপেনার পেয়ে যায় ভারত।


আরও পড়ুন: 'আমি ম্যাচ বাঁচাব', নেপিয়ারে ১০ ঘণ্টার ইনিংসের শুরুতেই বন্ধুকে ফোনে বলেছিলেন গম্ভীর