সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তাঁকে সকলে চেনে পাহাড়-কন্যা নামে। চন্দননগরের পিয়ালি বসাক (Piyali Basak)। দুর্গম কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়েছিলেন। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শৃঙ্গ জয় করার অঙ্গীকার নিয়ে। তবে পাহাড়চূড়োয় অসুস্থ হয়ে পড়েন পিয়ালি। যে কারণে চার নম্বর সামিট ক্যাম্প থেকে ফিরতে হচ্ছে বঙ্গকন্যাকে।

এর আগে পৃথিবীর চতুর্দশ উচ্চতম শৃঙ্গ শিশাপাংমা অভিযানে যেতে চেয়েছিলেন পিয়ালি। যে শৃঙ্গের উচ্চতা ২৬,৩০০ ফুট। উত্তর দিকে তিব্বত। সেদিক দিয়েই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযান শুরু করতে চেয়েছিলেন পিয়ালি। কিন্তু চীন প্রশাসন অনুমতি না দেওয়ায় সেই অভিযান মুলতুবি রাখতে হয় পিয়ালিকে। পরিবর্তে তিনি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ, ২৮১৭০ ফুট উচ্চতার কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়েছিলেন। প্রায় শৃঙ্গজয়ের কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলেন।

কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়েন পিয়ালি। সঙ্গে আবহাওয়াও খারাপ হয়। যে কারণে তাঁকে ফিরে যেতে বলেন পর্বতারোহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থা। তাই ফিরতে হচ্ছে পিয়ালিকে।

নেপালের দিক থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরোহণ শুরু করেছিলেন পিয়ালি। অভিযান সমাপ্ত না করেই ফিরতে হচ্ছে বলে মন খারাপ। ফেরার সময় ট্রেনের টিকিট পাননি। তাই রক্সৌল থেকে বাসে প্রায় ১৬-১৭ ঘণ্টার সফর করে বর্ধমানে আসছেন। সেখান থেকে শনিবার দুপুরের দিকে চন্দননগরের তাঁর বাড়িতে ফিরবেন পিয়ালি।

বাসে সফরের ফাঁকেই মোবাইল ফোনে পাহাড়-কন্যা এবিপি লাইভ বাংলাকে বললেন, 'মন খারাপ লাগছে তো বটেই। এত কাছে গিয়ে ফিরে আসতে হল। কিন্তু পাহাড়ের কাছে জেদ দেখালে চলে না।' কী হয়েছিল তাঁর? পিয়ালি বললেন, 'চার নম্বর সামিট ক্যাম্পে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জ্বর হয়। সঙ্গে কাশি। এর আগে কখনও পাহাড়ে উঠে কাশি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা প্রথম। জানলাম, পাহাড়চূড়োয় কাশি কী মারাত্মক। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ওষুধ দিয়েছিলেন। খেয়ে কিছুটা সুস্থও হয়েছিলাম। সমস্যা তৈরি হয় অন্য দুটি বিষয়ে।'

কী সমস্যা? পিয়ালির কথায়, 'কয়েকজন শেরপা উচ্চতাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের প্রাণসঙ্কট হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ওঁদের প্রাণরক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। তার ওপর আবহাওয়া খারাপ হয়ে পড়ে। ঝঞ্ঝার মধ্যে ওপরে ওঠার ব্যাপারে আপত্তি জানায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সি। যদিও সেনাবাহিনী থেকে ওপরে ওঠার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হয়ে পড়ায় আর সম্ভব হয়নি। এমনিতেই বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের চেয়েও দুর্গম কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান।'

দু'বছরের ব্যবধানে প্রথমে মা ও তারপর বাবাকে হারান পিয়ালি। মা-বাবার মৃত্যুর ধাক্কা কাটাতে পাহাড় অভিযানেই মনোনিবেশ করেন। পিয়ালি বলছেন, 'আমার এবারের অভিযান স্পনসর করেছিল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। হতাশ তো লাগছেই। তবে মা-বাবার আশীর্বাদে আবার পাহাড়ে যাব। আমি এখন সুস্থ। বাড়ি ফিরেই নতুন পরিকল্পনা শুরু করে দেব।'