কলকাতা: দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু  ভারতীয় ফুটবলের অর্জুন পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বয়স হয়েছিল ৮৩।



জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন, জলপাইগুড়িতে। ছোটবেলা থেকেই রক্তে ফুটবল। অসামান্য গোলার শটে যেমন লক্ষ্যভেদ করেছেন বারবার, তেমনই ট্রেড মার্ক ভোক্যাল টনিকে বের করে এনেছেন ফুটবলারদের সেরা খেলাটা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে খেলেন। ১৯৫৪ তে কলকাতায় চলে আসেন। দীর্ঘদিন খেলেছেন ইস্টার্ন রেলওয়ের হয়ে। তাঁর অধিনায়কত্বেই ১৯৫৮-তে কলকাতা ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্টার্ন রেলওয়ে। খেলেছেন তিনটি এশিয়ান গেমসে। ১৯৫৮, টোকিও এশিয়ান গেমস ১৯৬২, জাকার্তা এশিয়ান গেমস ও ১৯৬৬, ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমস।

এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী। কৌশলী কোচ হিসেবে জমিয়ে দেওয়া ময়দানের ফুটবল-লড়াই। ফুটবল কিংবদন্তি প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়দানের বড় আপন পিকে। তাঁর প্রয়াণে হঠাত্ করে নিঃস্ব কলকাতার ময়দান, রিক্ত ভারতীয় ফুটবল।

মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে কার্যত খেলেননি। বড় ক্লাব নয়, প্রতিভা আর স্কিলই আদায় করে নিতে পারে সম্মান আর কুর্ণিশ, কথাটা প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন মাঠে।

দীর্ঘদিন খেলেছেন ইস্টার্ন রেলওয়ের হয়ে। তাঁর অধিনায়কত্বেই ১৯৫৮-তে কলকাতা ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্টার্ন রেলওয়ে। তারপর, বহুদিন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান এই তিন প্রধান ছাড়া লিগ আর কেউ পায়নি।

(দুই কিংবদন্তি, পিকের সঙ্গে পেলে)

১৯৫৫ তে জাতীয় দলে অভিষেক। তারপর? ভারতীয় ফুটবল সাক্ষী রইল এক ফেনোমেননের। অলিম্পিক্সেও দাপুটে পারফরমেন্স। ১৯৫৬-তে মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪-২ গোলে ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। ১৯৬০-তে রোম অলিম্পিক্সে তাঁরই নেতৃত্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে ভারত। সেই ম্যাচে দেশের হয়ে সমতা ফেরান পিকে-ই। মারডেকা কাপেও রুপো ও ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন ভারতকে। চোট-আঘাতে বারবার ভুগেছে তাঁর ফুটবল কেরিয়ার। এরপর ১৯৬৭ সালে তুলে রাখেন তাঁর বুটজোড়া।

ফুটবলার পিকে-র অবসর। আর, ময়দানে ফুটবলের চাণক্য পিকে-র উত্থান। তাঁর ভোক্যাল টনিক বারবার অনুপ্রাণিত করেছে ফুটবলারদের। মাঠে গিয়ে আগুন ঝরিয়েছেন তাঁরা। অর্জুন পুরস্কার, পদ্মশ্রীর পাশাপাশি তাঁকে বিংশ শতকের সেরা ভারতীয় ফুটবলারের সম্মান দেয় ফিফা। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে ভারতীয় ফুটবলের এক বর্ণময় অধ্যায়ের অবসান।