সন্দীপ সরকার, কলকাতা: একটা সময় সৌরাষ্ট্রের বাঙালি কোচ দেবু মিত্র বলতেন, এ ছেলে জাতীয় দলে খেলবে।


না, কোচের স্বপ্ন সফল করতে পারেননি অর্পিত বাসবডা (Arpit Vasavada)। কিন্তু যা পেরেছেন, সেটাও অনেক ক্রিকেটারের কাছে ঈর্ষণীয়।


সৌরাষ্ট্রকে গত তিন মরসুমের মধ্যে দুবার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন (Ranji Trophy) করেছেন অর্পিত। ২০১৯-২০ মরসুমে বাংলার বিরুদ্ধে ফাইনালে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন। পেয়েছিলেন ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি। আর এবারের ফাইনালে বাংলার বিরুদ্ধে করলেন ৮১ রান। সেটাই দুই দল মিলিয়ে ফাইনালের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। তার আগে সেমিফাইনালে কর্নাটকের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় ইনিংসে চাপের মুখে রোমহর্ষক অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংস। যা সৌরাষ্ট্রকে ম্যাচ জিতিয়েছিল।


সব মিলিয়ে ১০ ম্যাচে ৯০৭ রান। ময়ঙ্ক অগ্রবালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। তিনটি সেঞ্চুরি, যার মধ্যে একটি আবার ডাবল। ৩টি হাফসেঞ্চুরি। প্রায় ৭৬-এর কাছাকাছি গড়। টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের সম্মান পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটার।


ইডেনে বাংলাকে হারিয়ে উঠে স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে উৎসবে মেতেছিলেন অর্পিত। তার ফাঁকে এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'এটা দলগত সাফল্যের জয়। লক্ষ্য করে দেখুন, ফাইনালে সবাই কোনও না কোনওভাবে অবদান রেখেছে। এই সংহতিই আমাদের অস্ত্র।'


বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরণও রঞ্জিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু নক আউট পর্বে অভিমন্যুর ব্যাট অস্তমিত। আর অর্পিতের ব্যাট সেমিফাইনাল, ফাইনালের মতো মঞ্চে বারবার গর্জে ওঠে। কীভাবে বড় ম্যাচে এত সফল? ছেলের খুনসুটি সামলাতে সামলাতে অর্পিত বলছিলেন, 'আসলে আমি নিজেকে কঠিন পরিস্থিতিতে শান্ত, সংযত রাখতে পারি। স্নায়ুর চাপে কাবু হয়ে পড়ি না। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করি। নিজের দক্ষতা অনুযায়ী খেলি। এর বেশি কিছু না।'


বাংলা শিবির থেকে ম্যাচের আগেই বলা হয়েছিল যে, একপেশে ফাইনাল হবে। বাংলাই জিতবে। এইসব কথাবার্তায় কি বাড়তি তাগিদ পেয়ে গিয়েছিলেন? অর্পিত নির্লিপ্ত গলায় বলছেন, 'মাঠের বাইরের কথায় আমরা কান দিই না। খেলাটা তো মাঠে হবে। তাই বাংলা শিবির থেকে কী বলা হয়েছে, তা নিয়ে ভাবিনি।'


২০১৯-২০ মরসুমে ফাইনালে তিনি সেরা হয়েছিলেন। জয়দেব উনাদকট পেয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরার স্বীকৃতি। এবার ঠিক বিপরীত। একজন ব্যাটে, একজন বলে, সৌরাষ্ট্রের দুই ভরসা। অর্পিত বলছেন, 'আমরা সিনিয়র ক্রিকেটার। দায়িত্ব তো নিতেই হবে। জেডি (দলে জয়দেবের ডাকনাম) ও আমি সেই মতো নিজেদের সেরাটা দিই।'


ইডেন থেকেই সৌরাষ্ট্রের ক্রিকেটারেরা গেলেন কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে। রঞ্জি জয়ের সাফল্য উদযাপন প্রাক্তন কোচের শহর থেকেই শুরু করে দিলেন অর্পিতরা।



আরও পড়ুন: ABP Exclusive: বত্রিশের ওপেনার ও পছন্দের ক্রিকেটারে লগ্নি! রঞ্জি বিপর্যয়ের পর প্রশ্নবাণে জর্জরিত বাংলা