সন্দীপ সরকার, কলকাতা: এরকম গ্রিনটপ উইকেটে তো চলতি মরসুমে খুব একটা খেলেনি সৌরাষ্ট্র, মানিয়ে নেবেন কীভাবে? বিশেষ করে ব্যাটাররা?
এবিপি লাইভের প্রশ্নটা শুনেই ভ্রু কোঁচকালেন জয়দেব উনাদকট (Joydev Unadkat)। সৌরাষ্ট্রের সেরা পেস-অস্ত্র পাল্টা জানতে চাইলেন, 'আপনার মনে হয় এটা গ্রিনটপ?' সৌরাষ্ট্রের তারকাকে পাল্টা বলা গেল, ওপর ওপর দেখে তো মনে হচ্ছে পেসাররা সুবিধা পাবেন, বাড়তি গতি ও বাউন্স থাকবে পিচে... কার্যত থামিয়ে দিয়ে উনাদকট বললেন, 'পিচ দেখে মোটেও খুব একটা গতি ও বাউন্স থাকবে বলে মনে হয়নি। ভাল উইকেট। স্পোর্টিং পিচ।' ফের প্রশ্ন করা হল, টস কি ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে? উনাদকট বললেন, 'টস কোনও ফ্যাক্টর হবে না।'
বৃহস্পতিবার ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) শুরু বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্র (Ben vs Sau) রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) ফাইনাল। যার আগের দিন যাবতীয় চর্চা ইডেনের পিচ নিয়ে। মাঠের সঙ্গে বাইশ গজকে আলাদা করা যাচ্ছে না, এতটাই পুরু ঘাসের আস্তরণ। বুধবার সকাল থেকে বাংলার ব্যাটারদেরও দেখা গেল পেসারদের বলে জোরকদমে অনুশীলন করতে। জাতীয় দল থেকে ফাইনালের আগে সৌরাষ্ট্র শিবিরে যোগ দিয়েছেন উনাদকট। বাঁহাতি পেসারই বাংলার ব্যাটারদের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন। আর সেই কারণে বাংলার নেটে দেখা গেল তিনজন বাঁহাতি পেসার। যাঁদের বিরুদ্ধে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ, অনুষ্টুপ মজুমদাররা। পাল্টা পেসের ঘুটি সাজাচ্ছে বাংলাও। আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার ও ঈশান পোড়েলের সঙ্গে চতুর্থ সিমার হিসাবে খেলানোর কথা আকাশ ঘটককে।
কিন্তু ইডেনের বাইশ গজ কি সত্যিই গ্রিনটপ? নাকি ছদ্মবেশী পিচ? ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে প্রচুর রানের প্রতিশ্রুতি?
বাংলা শিবির থেকে বলা হচ্ছে, গতির কড়াইয়ে ফেলা হবে বিপক্ষকে। পেস-অস্ত্রে ঘায়েল করা হবে সৌরাষ্ট্রকে। রাজকোটের মন্থর গতির, লো বাউন্সের উইকেটে খেলে যারা অভ্যস্ত, তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে গতি ও বাউন্সে। যে কারণে সেমিফাইনালে পারফর্ম করেও বাদ পড়তে চলেছেন প্রদীপ্ত প্রামাণিক। বাঁহাতি স্পিনারের পরিবর্তে খেলতে পারেন মিডিয়াম পেসার আকাশ ঘটক।
কিন্তু উনাদকটের মতে, পিচে কোনও পেস-জুজু নেই। বাংলার বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পালকে প্রশ্ন করা হল, পিচ কি পেসারদের বাড়তি সুবিধা দেবে? ইঙ্গিতপূর্ণভাবে হেসে বাংলা ক্রিকেটের ম্যাকো বললেন, 'দেখুন না কী হয়।'
দুপুরের দিকে শোনা গেল, পিচের ঘাস ছাঁটা হয়েছে। সকালের মতো পুরু সবুজ আস্তরণ থাকছে না পিচে। কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বাংলার পেস শক্তির কথা ভেবেই উইকেটে ঘাস রাখা হচ্ছে। পিচে কি পেসাররাই ছড়ি ঘোরাবেন? বুধবার বিকেলে প্রশ্ন শুনে সুজন মুচকি হাসলেন। বললেন, 'ভাল উইকেট।' ঘাস কাটা হয়েছে? সুজন বললেন, 'ঘাস কাটার যন্ত্র বারই করা হয়নি। ঘাস কাটা হবে কী করে!' যোগ করলেন, 'ইডেনের পিচ যেমন হয় গত কয়েক বছর ধরে, তেমনই হবে।'
অর্থাৎ, পেসারদের জন্য বাড়তি সুবিধা। উইকেটে বাড়তি বাউন্স। গতি। তাহলে তো প্রথম ফিল্ডিং করা দল বাড়তি সুবিধা পাবে?
যা শুনে মুচকি হাসছেন উনাদকট। বলছেন, 'বললাম তো। স্পোর্টিং উইকেট।'
যা রহস্য আরও ঘনীভূত করছে। ইডেনের সবুজ বাইশ গজ কি সত্যিই পেসারদের স্বর্গ হয়ে দেখা দেবে? নাকি ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে ঝুরি ঝুরি রানের হাতছানি?
আরও পড়ুন: ফাইনালের রং পাল্টে দিতে পারে শাহবাজ, বলছেন বাংলার শেষ রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক