সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বাংলার ঘরের মাঠে বাংলা দলকে কার্যত ঘাড় ধরে হারানো। তিন বছরের মধ্যে দুবার ফাইনালে বাংলাকে হারিয়ে রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy) চ্যাম্পিয়ন সৌরাষ্ট্র। ম্যাচের পর মনোজ তিওয়ারিদের (Manoj Tiwary) ক্ষত যেন আরও উস্কে দিলেন সৌরাষ্ট্রের অধিনায়ক জয়দেব উনাদকট (Jaydev Unadkat)। ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বাংলার খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা নিয়েই!


ম্যাচের আগে বাংলার অধিনায়ক মনোজ হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, ফাইনাল একপেশে হবে। আর সৌরাষ্ট্রকে হারিয়ে ট্রফি জিতবে তাঁর দল। যা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন উনাদকট। পরে মাঠে অবশ্য দুই অধিনায়ককে খুনসুটি করতে দেখা গিয়েছিল। এমনকী, মনোজকে 'মন্ত্রী' বলে ডেকে মজাও করেছিলেন উনাদকট।


কিন্তু বঙ্গ অধিনায়কের কথা যে ভেতর ভেতর তাঁদের কতটা তাতিয়ে দিয়েছিল, রবিবার ম্যাচের শেষে তা প্রতিফলিত বাঁহাতি পেসারের কথায়। উনাদকট বললেন, 'আমি ম্যাচের আগেই বলেছিলাম, ভাল খেলা হবে। তবে একপেশে ম্যাচ হবে না। আজ সকালের আগে পর্যন্ত ভালই লড়াই করেছে বাংলা। আমাদের বোলাররা ওদের বোলারদের তুলনায় অনেক নিয়ন্ত্রিত লাইনে বল করেছে। ব্যাটাররা চাপের মুখে খেলেছে।'


দুই দলের মধ্যে কোন ব্যাপারটা তফাত গড়ে দিল? এবিপি লাইভকে উনাদকট বলছিলেন, 'দুই দলের খেলা দেখে মনে হয়েছে, আমাদের ড্রেসিংরুম অনেক বেশি শান্ত। ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ জিততে মরিয়া ছিল বাংলা। রাজকোটে খেলার সময় আমাদেরও এরকম অনুভূতি হয়েছিল। তবে ব্যাটিং-বোলিংয়ে আমরা অনেক বেশি সংযম আর দৃঢ়তা দেখিয়েছি। তার জন্যই আমরা পাঁচ শতাংশ হলেও এগিয়ে ছিলাম।'


এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু এরপরই বোমা ফাটালেন সৌরাষ্ট্র অধিনায়ক। বললেন, 'দুই দলের পার্থক্য নিয়ে আরও একটা কথা বলি। চেতন (সাকারিয়া) যেভাবে ব্যাট করেছে, নাইট ওয়াচম্যান হিসাবে নেমে সকালের এক ঘণ্টা কাটিয়েছিল। পার্থক্যটা হল উইকেট ছুড়ে দেওয়া আর সেটা না দিতে চাওয়ার সংকল্পের মধ্যে। চেতন পেরেছে কারণ, ওর মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে ও পারবে। দলের সকলের মধ্যে সেই বিশ্বাস রয়েছে। আমি সেটার জন্য গর্বিত। বোলার হোক বা ব্যাটার, আমরা মাঠে গিয়ে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর।'


এরপরই যেন বিদ্রুপের সুর উনাদকটের গলায়। বললেন, 'আমাদের প্রথম একাদশে যারা খেলেনি, তাদের মনোভাবের কথাও বলব। আমি বিশদে যেতে চাই না। কোনও প্রশ্নও তুলছি না। তবে যখন বাউন্ডারি লাইনের বাইরে কভারের মধ্যে বলটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল বলটি হারিয়ে গিয়েছে, আমাদের রিজার্ভ ক্রিকেটারেরা সেটিকে বার করে আনে। ফলে শুধু মাঠের এগারোজন নয়, মাঠের বাইরে যারা ছিল, তারাও ট্রফিটা জিততে মরিয়া ছিল।'


ঘটনা হচ্ছে, ম্যাচের তৃতীয় দিন সৌরাষ্ট্রের প্রথম ইনিংস চলাকালীন একটা বাউন্ডারির পর বলটি মাঠের পাশে থাকা কভারের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। বাংলার দুই ক্রিকেটার যে বল খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট করছিলেন বলে মনে হয়েছে সৌরাষ্ট্র শিবিরের কারও কারও। পরে সৌরাষ্ট্রের দুই ক্রিকেটার গিয়ে বলটি খুঁজে বার করেন। সৌরাষ্ট্র শিবিরের অভিযোগ, চাইলে বলটি আগেই খুঁজে বার করতে পারতেন বাংলার ক্রিকেটারেরা। করেননি, কারণ তাঁরা সময় নষ্ট করতে চেয়েছিলেন। ছন্দ নষ্ট করতে চেয়েছিলেন সৌরাষ্ট্রের ব্যাটারদের।



যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল। বাংলার কোচ উনাদকটের মন্তব্য শুনে বললেন, 'বাংলার প্লেয়াররা বল দেখছে আর সেটা দিচ্ছে না, এটা হতে পারে না। ওরা ম্যাচ জিতেছে। জয়দেব আমার ছোট ভাইয়ের মতো। খুব ভাল নেতৃত্ব দিয়েছে। সৌরাষ্ট্রকে অভিনন্দন। জয়দেবের কেরিয়ারের জন্য শুভেচ্ছা রইল।'


কোচ অভিযোগ মানতে না চাইলেও, সৌরাষ্ট্র অধিনায়কের খোঁচা যে কাঁটার মতো বিঁধছে বংলা শিবিরে, বঙ্গ শিবিরের শরীরী ভাষাতেই তার প্রতিফলন। প্রতিক্রিয়াও দিচ্ছেন যে যাঁর মতো। যা শুনে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের কেউ কেউ বলছেন, ইশশ... জবাবটা যদি মাঠে দিত বাংলা...


আরও পড়ুন: একপেশে ম্যাচের হুঙ্কার দিয়ে লজ্জার হার, রঞ্জি ফাইনালে আত্মসমর্পণ বাংলার