সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) ম্যাচের আগে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, একপেশে ম্যাচে সৌরাষ্ট্রকে (Bengal vs Saurashtra) হারাবেন তাঁরা।
পরের চারদিন ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) একপেশে ম্যাচই দেখলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে তা সৌরাষ্ট্রের পক্ষে। রঞ্জি ফাইনালে বাংলার জঘন্য পারফরম্যান্স অব্যহত। ২০১৯-২০ মরসুমে রাজকোটে গিয়ে সৌরাষ্ট্রের কাছে হেরেছিল। এবার বাংলার ঘরের মাঠে বাংলাকে দুরমুশ করে দিয়ে গেল জয়দেব উনাদকটের দল। রবিবার দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলা অল আউট হয়ে গেল ২৪১ রানে। মাত্র ১১ রানের লিড নিতে সক্ষম হয়েছিল বাংলা। ১২ রানের লক্ষ্য ছিল সৌরাষ্ট্রের সামনে। এক উইকেট হারিয়ে যে রান তুলে নিল সৌরাষ্ট্র। ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হল সৌরাষ্ট্র।
ম্যাচের শেষে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অভিষেক পোড়েল। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে গেলেন দাদা ঈশান পোড়েল। সৌরাষ্ট্র ক্রিকেটারেরা তখন মাঠেই উৎসবে মত্ত। ক্রিকেটারদের স্ত্রী-সন্তানরা মাঠের মধ্যে। বাংলার যন্ত্রণা বাড়িয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান আর জয়োধ্বনিতে ইডেন কাঁপালেন সৌরাষ্ট্রের ক্রিকেটারেরা।
রবিবার ১৭.৪ ওভার টিকল বাংলার ইনিংস। তার মধ্যেই শেষ ৬ উইকেটের পতন। মাত্র ৭২ রান যোগ করে। মাথার ওপর ২৩০ রানের লিডের বোঝা। তার ওপর দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। শনিবার বাংলা শিবির কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইডেন গার্ডেন্সের স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করে উঠেছিল, ৪৭/৩। ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছিলেন সুমন্ত গুপ্ত, অভিমন্যু ঈশ্বরণ ও সুদীপ ঘরামি।
সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করেছিলেন বাংলা ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই সৈনিক। রুকু, অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Majumdar)। সৌরাষ্ট্র বোলারদের গোলাগুলি সামলে ঝকঝকে ৬১ রান করেছিলেন। মন্নি, মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) ৫৭ রান করে ক্রিজে ছিলেন। দুই ব্যাটারের কাঁধে ভর করে পাল্টা লড়াই শুরু করেছিল বাংলা। বাংলা শিবিরে অমাবস্যার আঁধার কাটিয়ে আলোর সন্ধান দিয়েছিলেন অনুষ্টুপ-মনোজ। চতুর্থ উইকেটে ৯৯ রানের অনবদ্য পার্টনারশিপ গড়ে। যে জুটি ড্রেসিংরুমে এই বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছিল যে, এই সৌরাষ্ট্রের বোলিংয়ের বিরুদ্ধেও রান করা সম্ভব।
যদিও রবিবার ভোরের কুয়াশায় কলকাতার পাশাপাশি ঢাকা পড়ল বাংলা শিবিরও। বাউন্ডারি লাইন থেকে অর্পিত বাসবডার একটা নিখুঁত থ্রো বঙ্গ ব্রিগেডকে বেলাইন করে দিল। চতুর্থ দিন সকালের ষষ্ঠ ওভার। জয়দেব উনাদকটের বলে দুরান সম্পূর্ণ করলেন মনোজ তিওয়ারি। তারপর তিন রান নিতে দৌড়লেন। অর্পিত বাসবডা তখন বাউন্ডারি লাইন থেকে বল কুড়িয়ে থ্রো করেছেন। মনোজ ও শাহবাজ ভুল বোঝাবুঝিতে ক্রিজের এক প্রান্তে। স্টাম্প ভেঙে দিল সৌরাষ্ট্র। ৩৮ বলে ২৭ রান করে ফিরলেন শাহবাজ। বাংলার স্বপ্নভঙ্গের শুরু।
তারপর একে একে ফিরলেন মনোজ তিওয়ারি (৬৮), অভিষেক পোড়েল (৩), আকাশ দীপ (১), আকাশ ঘটক (৪)। শেষ দিকে চালিয়ে খেলে ঈশান পোড়েল ২১ বলে ২২ রান করলেন। মুকেশ কুমার করলেন ২১ বলে ১৫ রান। সৌরাষ্ট্রের বোলারদের মধ্যে সেরা জয়দেব উনাদকট। ৮৫ রানে ৬ উইকেট পেলেন তিনি। ৩টি উইকেট চেতন সাকারিয়ার।
২.৪ ওভারে জয় গোহিলের উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ করল সৌরাষ্ট্র।