সন্দীপ সরকার, কলকাতা: গ্যালারিতে বসে এক ঝাঁক তরুণ স্লোগান তুলছিলেন। 'শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, রুকুদাই ভরসা।' 'জব তক সূরয চান্দ রহেগা, মন্নি ভাইকা নাম রহেগা।'


বাংলা ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই সৈনিক। রুকু, অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Majumdar)। সৌরাষ্ট্র বোলারদের গোলাগুলি সামলে ঝকঝকে ৬১ রান করে গেলেন। মন্নি, মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) ৫৭ রান করে ক্রিজে। দুই ব্যাটারের কাঁধে ভর করে পাল্টা লড়াই শুরু করেছে বাংলা। রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy) এখনও বহত দূর... সৌরাষ্ট্র এখনও এগিয়ে ৬১ রানে। কিন্তু বাংলা শিবিরে অমাবস্যার আঁধার কাটিয়ে আলোর সন্ধান অন্তত দিয়েছেন অনুষ্টুপ-মনোজ। চতুর্থ উইকেটে ৯৯ রানের অনবদ্য পার্টনারশিপ গড়ে। যে জুটি ড্রেসিংরুমে এই বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছেন যে, এই সৌরাষ্ট্রের বোলিংয়ের বিরুদ্ধেও রান করা সম্ভব। 


মাথার ওপর ২৩০ রানের লিডের বোঝা। তার ওপর দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও ব্যাটিং বিপর্যয়। বাংলা শিবির কিছ বুঝে ওঠার আগেই ইডেন গার্ডেন্সের স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করে উঠল, ৪৭/৩। ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছেন সুমন্ত গুপ্ত, অভিমন্যু ঈশ্বরণ ও সুদীপ ঘরামি।


বড়িশা স্পোর্টিংয়ের ক্রিকেটার সুমন্ত রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে অভিষেক ঘটিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ফিরেছিলেন ১ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসেও স্কোরারদের তিনি বিব্রত করেননি। ১ রান করেই ফিরলেন। রান পাননি অন্য ওপেনার অভিমন্যু ঈশ্বরণও। যাঁর বিরুদ্ধে বরাবরের অভিযোগ, তিনি গ্রুপ পর্বে ব্যাট হাতে রাজা। বড় ম্যাচে ফকির। প্রথম ইনিংসে শূন্য করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ রান করে ফিরলেন অভিমন্যু।


গোটা মরসুমে ব্যাট হাতে ভরসা দিয়েছিলেন সুদীপ ঘরামি। সেমিফাইনালেও রান পেয়েছিলেন। ঘরের মাঠে ফাইনালে তিনিও দুই ইনিংসে ব্যর্থ। একটা সময় দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যাট করতে পারবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার, ম্যাচের দ্বিতীয় দিন অর্পিত বাসবডার কভার ড্রাইভ বাঁচাতে ডাইভ মেরে বাঁ কাঁধে চোট পেয়েছিলেন। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল সুদীপকে। ইডেন থেকেই সরাসরি হাসপাতালে যান সুদীপ। তাঁর কাঁধে চোট পাওয়া জায়গায় স্ক্যান হয়। তৃতীয় দিন সকালে ফিল্ডিং করতেও নামেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেন সুদীপ। তবে রান পাননি। ১৪ রান করে ফেরেন।



ফের যখন মনে হচ্ছিল, বাংলার ব্যাটাররা আত্মসমর্পণ করবেন, পাল্টা লড়াই শুরু মনোজ-অনুষ্টুপের। চতুর্থ উইকেটে ৯৯ রান যোগ করলেন দুজনে। অবশ্য শেষবেলায় অনুষ্টুপকে ফিরিয়ে দিয়েছেন জয়দেব উনাদকট। তাঁর উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছিল, অনুষ্টুপের উইকেট কত বড় স্বস্তি। তবে অনুষ্টুপ ফিরলেও, ক্রিজে মনোজের সঙ্গে রয়েছেন বাংলা দলের 'ক্রাইসিস ম্যান' শাহবাজ আমেদ। ১৩ রান করে। সৌরাষ্ট্রের চেয়ে আর ৬১ রানে পিছিয়ে বাংলা। রবিবার, চতুর্থ দিন বাংলার লক্ষ্য দ্রুত সেই খামতি মিটিয়ে অন্তত দুশো রানের লিড নেওয়া। তারপর বোলারদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। তাতে যদি ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়।


হাতে রয়েছে ৬ উইকেট। কাজটা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লও আশাবাদী। বলেছেন, 'গুরুজনদের থেকে শিখেছি, হারার আগে কেউ হারে না। এখনও ম্যাচে রয়েছি।'


বাংলার ক্রিকেটভক্তরাও সেই প্রার্থনাই করছেন।



আরও পড়ুন: পিছিয়ে পড়েও দুরন্ত জয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করল ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দল