মুম্বই: ফের বড়সড় বিতর্ক ভারতীয় ক্রিকেটে। এবার স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগে বিদ্ধ কপিল দেব-দের উপদেষ্টা কমিটি। বিরাট কোহলিদের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল।


জটিলতার কেন্দ্রে মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার আজীবন সদস্য সঞ্জীব গুপ্তার একটি চিঠি। বোর্ডের এথিক্স অফিসার ডি কে জৈনকে লেখা চিঠিতে সঞ্জীব উপদেষ্টা কমিটির তিন সদস্যের বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। কপিল ছাড়া উপদেষ্টা কমিটির বাকি দুই সদস্য অংশুমান গায়কোয়াড় ও শান্তা রঙ্গস্বামী। সঞ্জীবের অভিযোগ, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের সংগঠনের সদস্য কপিল। সেই সঙ্গে ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেন। ফ্লাডলাইট তৈরির ব্যবসাও রয়েছে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারত অধিনায়কের। গায়কোয়াড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বোর্ডের অ্যাফিলিয়েশন কমিটির সদস্য। পাশাপাশি তাঁর একটি অ্যাকাডেমিও রয়েছে। রঙ্গস্বামী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত। তিনজনের বিরুদ্ধে তাই স্বার্থ সংঘাতের অভিযোগ তুলেছেন সঞ্জীব।

অভিযোগপত্র পাওয়ার পর উপদেষ্টা কমিটির তিন সদস্যকে নোটিস পাঠিয়েছেন বোর্ডের এথিক্স অফিসার ডি কে জৈন। জানতে চেয়েছেন তিনজনের বক্তব্য। ১০ অক্টোবরের মধ্যে উত্তর পাঠাতে হবে কপিলদের।

কিন্তু উত্তর সন্তোষজনক না হলে?

আরও বড় বিপত্তি অপেক্ষা করে রয়েছে। বোর্ডের কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপদেষ্টা কমিটিই বাতিল হয়ে যাবে। এবং সেক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে ভারতীয় দলের হেড কোচ হিসাবে রবি শাস্ত্রীর নিয়োগ!

কারণ, কপিলদের উপদেষ্টা কমিটিই শাস্ত্রীকে কোচ হিসাবে বেছে নিয়েছিল। উপদেষ্টা কমিটি বাতিল হলে শাস্ত্রীর নিয়োগও অবৈধ ঘোষণা করা হতে পারে। যদিও, বোর্ড সূত্রে খবর, শাস্ত্রীর উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ, সেক্ষেত্রে নতুন করে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে শাস্ত্রীকে পুনর্নিয়োগ করা হবে। যদিও, সেটা শাস্ত্রী ও ভারতীয় দলের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে মহিলা দলের কোচ হিসাবে ডব্লিউভি রামনের নিয়োগ নিয়েও। কারণ, কপিলদের কমিটিই রামনকে নিয়োগ করেছিল।

এদিকে, এথিক্স অফিসারের নোটিস পেয়েই পদত্যাগ করলেন শান্তা রঙ্গস্বামী। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি জানিয়েছেন, অপমানিত হয়েই এই সিদ্ধান্ত। পরে সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘আমি উপদেষ্টা কমিটি ও ক্রিকেটারদের সংগঠনের ডিরেক্টর পদ – দুই থেকেই ইস্তফা দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গতরাতেই ইমেলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। কোনও ব্যক্তি অভিযোগ করতেই পারে। কিন্তু এথিক্স অফিসার যদি তা শুনে পদক্ষেপ করেন, তাহলে থেকে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না। আমার মনে হয় বোর্ডের নতুন কমিটিকে স্বার্থের সংঘাতের শর্তকে স্বচ্ছ করে তুলতে হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের কীভাবে কোন যোগ্যতা দেখে নেওয়া হবে, সেটাও ভাবতে হবে।’

বারবার প্রাক্তন ক্রিকেটারদের যেভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলা হচ্ছে, তারও কঠোর সমালোচনা করেছেন শান্তা। বলেছেন, ‘প্রথমে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন তেন্ডুলকর ও ভিভিএস লক্ষ্মণকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হল। এবার কপিল, অংশু আর আমাকে নিয়ে। ভারতের ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের প্র্যাক্টিস করাচ্ছে বলে রাহুল দ্রাবিড়কেও নিশানা করা হবে?  এই যদি পরিস্থিতি হয়, তাহলে বেশিরভাগ প্রাক্তন ক্রিকেটারই বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইবে না।’

যদিও পুরো বিতর্কে কপিলদের পাশেই দাঁড়য়েছেন বোর্ডের প্রশাসকদের কমিটির প্রধান বিনোদ রাই। তিনি বলেছেন, ‘এথিক্স অফিসারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বলা আমায় মানায় না।’ তিনি জানিয়েছেন, স্বার্থের সংঘাত থাকলে কপিলদের কোচ বেছে নেওয়ার দায়িত্বই দিতেন না তাঁরা। বলেছেন, ‘সিওএ কোনও স্বার্থের সংঘাত দেখেনি।’ যদিও অন্য সুর ডায়ানা এডুলজির গলায়। সিওএ-র অন্যতম সদস্য বলেছেন, ‘আমি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নই। তবে এথিক্স অফিসার উপদেষ্টা কমিটির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিলে, কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নতুন করে করা উচিত। সেটাই বোর্ডের গঠনতন্ত্রের নিয়ম। সর্বোপরি, এথিক্স অফিসার ও সুপ্রিম কোর্টের কথা আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে।’