কলকাতা: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে দু'বছরও হয়নি। দেশের জার্সিতে খেলেছেন তিনটি ওয়ান ডে ও ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তবু শিলিগুড়ির মেয়ে রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) মধ্যে কাজ করে অদ্ভুত এক সংকল্প। যে কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে তৈরি অষ্টাদশী।
মহিলাদের ওয়ান ডে বিশ্বকাপে (Womens ODI World Cup) ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েই তাই প্রস্তুতির খসড়া সাজিয়ে ফেলেছেন বঙ্গকন্যা। যা শুনলে চমকে উঠতে হয়। কারণ, মহিলা বিশ্বকাপের আগে পুরুষ বোলারদের বলের গতি সামলে প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিচা!
বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার দিনই এবিপি লাইভকে রিচা শুনিয়েছিলেন তাঁর 'সাহসী' পরিকল্পনার কথা। নিউজিল্যান্ডের পিচ থেকে সাহায্য পেয়ে থাকেন পেসাররা। কিউয়ি-ভূমে সফল হতে গেলে জোরে বোলিংয়ের ঝাঁঝ সামলাতেই হবে। রিচাও মানসিকভাবে তৈরি। বলছিলেন, 'আমাদের প্রস্তুতি শিবির হওয়ার কথা ছিল। করোনার জন্য তা বাতিল হয়েছে। শিলিগুড়িতে ক্রিকেট প্র্যাক্টিসের সেরকম মাঠ নেই। জিমও বন্ধ। তাই সমস্যা তো রয়েইছে। আপাতত বাঘাযতীন ক্লাবে প্রস্তুতি সারব। বাবা মনোরঞ্জন ঘোষের তত্ত্বাবধানে।' এরপরই রিচা যোগ করলেন, 'চেষ্টা করব নেটে কয়েকজন পুরুষ ক্রিকেটারের বলে ব্যাটিং করতে। কয়েকজনকে বলেও রেখেছি। ওরা বেশ জোরে বল করে। বলের গতি ঘণ্টায় ১৩৫-১৪০ কিলোমিটার। তাতে নিউজিল্যান্ডে পেসারদের সামলাতে সুবিধা হবে।'
কিন্তু পুরুষ ক্রিকেটারদের বলের বাড়তি গতি সমস্যায় ফেলবে না? ডাকাবুকো কন্যার দৃপ্ত জবাব, 'ছোটবেলা থেকে পুরুষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলেছি। জোরে বল খেলতে ভাল লাগে। ভয় লাগেনি কোনওদিন। ছেলেদের বলে খেলছি বলে যে সিঁটিয়ে থাকব, তা নয়। সাবলীলভাবে ব্যাট করি।'
ওয়ান ডে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত রিচা। শিলিগুড়ির উইকেটকিপার-ব্যাটার বলছেন, 'টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছি। এবার ওয়ান ডে বিশ্বকাপে খেলব। আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত। বিশ্বকাপ সকলে খেলতে পারে না। সেই সামান্য কয়েকজনের মধ্যে নিজেকে দেখে ভাল লাগছে।' যোগ করছেন, '৫০ ওভারের ফর্ম্য়াট মানে নিজেকে প্রমাণ করার আরও বেশি সুযোগ পাব। এটা এমন একটা মঞ্চ, যেখানে সকলে আমাকে দেখবে। তাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত এটিকে মোহনবাগান ফুটবলার, স্থগিত আজকের ম্যাচ
প্রথমে ওয়ান ডে ও পরে টি-টোয়েন্টি, পরপর দুটি ফাইনালে হার। যার মধ্যে একটিতে খেলেছিলেন রিচাও। দুবার ট্রফির সামনে থেকে ফেরা কতটা যন্ত্রণার? রিচা বলছেন, 'ভীষণই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এবার আরও মরিয়া সকলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে পরাজিত দলের সদস্য ছিলাম। ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। তবে তারপর থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছি। ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ট্রফিটা দেশে আনতে সকলে মিলে ঝাঁপাব।'
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করার পর জাতীয় দলের কোচ রমেশ পওয়ারের (Ramesh Pawar) সঙ্গে কথা হয়নি। তবে পওয়ার সব সময় উৎসাহ দেন। সমর্থন করেন রিচাকে। সঙ্গে মেন্টর হিসাবে রয়েছেন ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami)। যিনি নিজেও বিশ্বকাপের দলে রয়েছেন। রিচা বলছেন, 'অনেক কম ক্রিকেটার একজন কিংবদন্তির সঙ্গে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ পায়। শিলিগুড়িতে ঝুমদিকে প্রথম যখন দেখি, এখানে একটা জেলার টুর্নামেন্টের জন্য এসেছিল। তারপর থেকে সবসময় সমর্থন করে গিয়েছে। সামনে থেকে দেখেছি নিজেকে ফিট রাখার জন্য ঝুমদি কীরকম পরিশ্রম করে। তা বাড়তি তাগিদ দেয়।'
ঋদ্ধিমান সাহার (Wriddhiman Saha) শহর থেকে উঠে আসা উইকিটকিপারের প্রিয় তারকা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (MS Dhoni)। রিচা বলছেন, 'আমি ধোনির ভক্ত। ধোনি স্যার কীভাবে প্র্যাক্টিস করেন, কীভাবে উইকেটকিপিং করেন, সব পর্যবেক্ষণ করি। কোনওদিন কথা বলার সুযোগ হয়নি। দুবাইয়ে আইপিএলের সময় কাছ থেকে দেখেছি। ধোনি চেন্নাই সুপার কিংস দলের সঙ্গে ছিলেন আর আমি গিয়েছিলাম মেয়েদের টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য। তবে এরকম হয়েছে আমাদের প্র্যাক্টিসের দিন হয়তো উনি মাঠে আসেননি। তাই কথা হয়নি।'
বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে একটি টি-টোয়েন্টি ও পাঁচটি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলতে অনেক আগেই সে দেশে পৌঁছে যাবে ভারতীয় দল। রিচা বলছেন, 'অনেক আগে নিউজিল্যান্ডে যাচ্ছি। খুব সুবিধা হবে। এটা আমার প্রথম নিউজিল্যান্ড সফর। তবে শুনেছি খুব হাওয়া দেয়। ফলে আগাম পৌঁছে গেলে ওখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাব। বিশ্বকাপে তা সাহায্য করবে।'