ইন্দৌর: ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর। পাকিস্তানের করাচি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ৪ তরুণ প্রতিভার। পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক হয়েছিল ওয়াকার ইউনিস এবং শাহিদ সাইদের। আর ভারতের হয়ে অভিষেক হয়েছিল সলিল অঙ্কোলা এবং এক বিস্ময় বালকের। শাহিদ, ওয়াকার ও সলিল এই তিন জনের মধ্যে ওয়াকার ইউনিসের নাম ডাক থাকলেও বাকি ২জন সেভাবে নজরেই আসেননি। আর যে বিস্ময় বালক সেদিন পাক আক্রমণের সামনে রক্তাক্ত হওয়ার পরও বলেছিল, ‘ম্যায় খেলেগা’, সে টিকে গেল সবথেকে বেশি দিন। ২২ গজে ২৪ বছর। ক্রিকেটীয় মানচিত্রে এমন নক্ষত্র একটাই। নাম সচিন রমেশ তেন্ডুলকর।


বিশ্ব ক্রিকেটে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৩০ হাজারের ওপর রান। একদিনের আন্তর্জাতিকে ১৮ হাজার ৪২৬ আর টেস্টে ১৫ হাজার ৯২১ রানের একমাত্র মালিক। সব মিলিয়ে সাড়ে ছশোর ওপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। ঝুলিতে ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরান। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ২০০ রান করা। সঙ্গে ২০০টি আন্তর্জাতিক উইকেট।  গোটা ভূ-বিশ্বে এই প্রতিভা একটাই। ১৬ বছরে আন্তর্জাতিকে অভিষেক করা সচিন থেমে ছিলেন ২৪ বছর পর। ১৯৮৯ থেকে ২০১২, নভেম্বরেই শুরু আর নভেম্বরই শেষ। কলকাতায় ১৯৯তম আর ওয়াংখেড়েতে ২০০তম টেস্ট খেলে ব্যাট, প্যাড তুলে রেখেছেন সচিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচের পর কেটে গিয়েছে অর্ধ দশকের বেশি সময়। সচিন সবথেকে বেশি কী মিস করেন?


ড্রেসিং রুম। ভারতীয় ক্রিকেটের সাজঘর। ভারতীয় ক্রিকেটে পাঁচ পাঁচটি জেনারেশনের সঙ্গে খেলা একমাত্র ক্রিকেটার মিস করেন ড্রেসিং রুমের গন্ধ, স্বাদ, মেজাজ, রসিকতা। সবটা।


সচিনের জীবনের একশোটা শতরানের মধ্যে সবথেকে প্রিয় কোনটা?


১৯৯৮ সালে ভারত সফরে অস্ট্রেলিয়া। স্পিন যাদুকর শেন ওয়ার্নকে খেলতে বিশেষ প্রস্তুতি নিলেন সচিন। বন্ধু সাইরাজ বাহুতুলে ও নীতীশ কুলকর্নিকে নিয়ে পিচ খুড়িয়ে অনুশীলন। ওই সিরিজ কার্যত পরিণত হল শেন বনাম সচিন দ্বৈরথে। চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৫ রানের ইনিংস। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে তো বটেই সচিনের কাছে এই ইনিংস স্মরণীয়। তারপর ১৯৯৯-তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চেন্নাইতেই ফের শতরান। ২০০৪ সালে পিঠের ব্যাথা নিয়ে ব্যাটিং এবং একটাও কভার ড্রাইভ না মেরে সিডনিতে দ্বিশতরান। স্মৃতিমেদুর সচিন তাঁর একশো শতরানের মধ্যে এই ইনিংসগুলোকে রেখেছেন সবার ওপরে। তবে ১৯৯১ সালের পার্থ টেস্টের শতরান তাঁর ভাবধারা বদলে দিয়েছিল। অজি আক্রমণ সামলিয়ে শতরানের পর তাঁর মনে হয়েছিল, এই আক্রমণের মুখোমুখি হতে পারলে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে যেকোনও আক্রমণের সম্মুখীন হতে পারবেন। এরপর বিশ্বের তাবড় তাবড় পেস বোলারদের সচিন খেলেছেন অবলীলায়। তাঁর সময়ের দুই শ্রেষ্ঠ স্পিনার শেন ওয়ার্ন ও মুথাইয়া মুরলিধরনকে খেলেছেন তুড়ি মেরে।


এই সচিনই আশঙ্কিত, যে ভাবে ‘টেলর মেড’ পিচ বানিয়ে টেস্ট খেলা হচ্ছে, তাতে ক্ষতি হচ্ছে ক্রিকেটের। ব্যাট, বলের দ্বৈরথ তখনই জমে ওঠে যখন ভারসাম্য থাকে। বরাদ করা পিচে সেই ভারসাম্য হারাচ্ছে। কোথাও ব্যাটসম্যানরা সহায়তা পাচ্ছে বেশি তো কোথাও পিচ হয়ে উঠছে বোলারদের স্বর্গরাজ্য। এতে মান কমছে ক্রিকেটেরই। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে প্রয়োজন স্পোর্টিং উইকেট, মত সচিনের। বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তীর মতে অ্যাশেজই হওয়া উচিত লাল বলের ক্রিকেটের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।