সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ঘরোয়া ক্রিকেটের নিক্তিতে বাংলার সাফল্যের ভাঁড়ারে গত ৩৩ বছরের সেরা মুক্তো এসেছিল তাঁর নেতৃত্বেই। ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলা রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সফল সেই বাংলা দলের অধিনায়ক ছিলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sambaran Banerjee)। ক্রিকেট মাঠে প্রাক্তন উইকেটকিপারের আজীবনের অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে চলেছে সিএবি (CAB)। জীবনকৃতি সম্মান পাচ্ছেন সম্বরণ। ময়দান যাঁকে ডাকে 'মাধু' নামে।


আগামী ২৯ অক্টোবর সিএবি-র বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্বীকৃতি দেওয়া হবে সম্বরণকে। ২০২০-২১ সালের পুরস্কার প্রাপক হবেন তিনি। বুধবার যা ঘোষণা করে দেওয়া হল। সম্বরণ উচ্ছ্বসিত। এবিপি লাইভকে বললেন, 'আগেই ভেবেছিলাম এই সম্মান পাব। নিজের রাজ্য সংস্থা, যাদের হয়ে খেলেছি, তাদের স্বীকৃতি সব সময়ই গর্বের। বাংলার হয়ে ক্রিকেট সফর শুরু করেছিলাম ১৯৭৩ সালের ২১ ডিসেম্বর। প্রথম ম্যাচ খেলেছিলাম ইডেনে অসমের বিরুদ্ধে। আমার কাছে খুব সুখস্মৃতি যে, ইডেনেই শেষ ম্যাচ খেলেছি। ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০, দিল্লির সঙ্গে রঞ্জি ফাইনালে জিতে সফর শেষ করেছিলাম।'


১৭ বছরের সফর মসৃণ ছিল না। দীর্ঘ কেরিয়ারে অনেক চড়াই উতরাই দেখেছেন। সম্বরণ বলছেন, 'দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেছি। বাংলার হয়ে ১৭ বছর খেলেছি, ১০ বছর খেলেছি পূর্বাঞ্চলের হয়ে। ইরানি ট্রফি খেলেছি।'


তবু ভারতীয় দলের হয়ে না খেলার আক্ষেপ রয়েছে ৭৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা প্রাক্তন তারকার। রয়েছে তিক্ত স্মৃতিও। সম্বরণ বলছেন, 'জাতীয় দলের টেস্ট ট্রায়ালে ৩-৪ বার গিয়েছি। কোনও কারণে ভারতীয় দলে খেলা হয়নি। হয়তো যোগ্যতা ছিল না। তাই শিকে ছেঁড়েনি।' যোগ করছেন, '১৯৮১ সালে জাতীয় টেস্ট দলের শিবিরে ডাক পাওয়া আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। ১৯৮১ সালে ভারতীয় দলে প্রায় সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হয়তো বাঙালি বলেই বাদ পড়েছিলাম। ট্রায়াল ছিল মুম্বইয়ে। আমি এখনও বিশ্বাস করি, সেই সময়ে উইকেটের পিছনে সেরা ছিলাম আমিই। কিন্তু জাতীয় দলের দরজা খোলেনি। দাত্তু ফাডকরদের নির্বাচক কমিটির কাছে উপেক্ষাই পেয়েছি। অনেকে বলে, ভুল সময়ে আমার জন্ম হয়েছিল। সে তো পদ্মাকর শিভালকর, দিলীপ দোশিদের ক্ষেত্রেও বলা হয়। কিন্তু ওদের কিংবদন্তি বিষেণ সিংহ বেদীর সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। আমি অনেক এগিয়ে থেকেও সুযোগ পাইনি।'


জাতীয় দলে সুযোগ না পেয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন সম্বরণ। পরে নতুন সংকল্প নেন। বলছেন, 'জেদ চেপে গিয়েছিল, কোনওদিন নির্বাচক হলে বাংলা ও পূর্বাঞ্চলের প্রতি বঞ্চনার জবাব দেব। জাতীয় নির্বাচক হিসাবে কী করেছি, ক্রিকেটপ্রেমীরা জানেন।'


তবে সম্বরণের সব আক্ষেপ ভুলিয়ে দিয়েছে রঞ্জি জয়। বলছেন, 'রঞ্জি জেতাটা সতীর্থদের কৃতিত্ব। ওদেরই অবদান। আমি শুধু সঠিক দিশায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি।'


জীবনকৃতি সম্মান কাদের উৎসর্গ করবেন? সম্বরণ বলছেন, 'কার্তিক বসু ও আমার মা ননীবালা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কার্তিক বসুই আমার শিক্ষাগুরু। কাকতালীয় হলেও, জীবনকৃতি পুরস্কারটা তাঁর নামেই। সামার স্কুল ক্রিকেটে যাদবপুর হাইস্কুলের হয়ে আমার খেলা দেখে কার্তিকদা বেছে নিয়েছিল। আমার এই পুরস্কার ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের উৎসাহ দেবে।' যোগ করছেন, 'বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছি। মাঠের বাইরে কোনওদিন যাইনি। এখনও অ্যাকাডেমি চালাই। মাঠই আমার জীবন। এখনও সতেজ রয়েছি মাঠের জন্যই।'


আর স্বপ্ন? সম্বরণ বলছেন, 'জীবদ্দশায় দেখে যেতে চাই বাংলা ফের রঞ্জি জিতছে। মাঠে গিয়ে সেই জয় দেখব।' তরুণদের জন্য তাঁর পরামর্শ, 'খেলা উপভোগ করো। তাহলেই সাফল্য আসবে।'


আরও পড়ুন: ফেভারিট ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে বড়সড় অঘটন আইরিশদের