গৌতম রায় ও রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: আর জি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এই মুহূর্তে উত্তাল গোটা দেশ এমনকী বিশ্বও। এক মেয়ের এমন অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়ে চলে যাওয়ার কষ্টের মধ্যেই বাংলার আরেক মেয়ের বিশ্বজয়। বাংলার তরুণী সাঁতারু সায়নী দাস ফের রেকর্ড গড়লেন। তাও আবার এমন নজির, যা ভারতের কোনও মহিলা সাঁতারু এর আগে করতে পারেননি। নর্থ আয়ারল্যান্ড থেকে স্কটল্যান্ড এর মধ্যে সাঁতার কেটে নর্থ চ্যানেল জয় করে বাংলার মুকুটে ফের একটি পালক জুড়লেন কালনার বারুইপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাঁতারু।


নর্থ আয়ারল্যান্ড থেকে পাঠানো প্রতিক্রিয়াতে শনিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ সায়নী জানিয়েছেন, ভারতের প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে এই চ্যানেল জয় করার কৃতিত্ব তারই প্রথম। একইসঙ্গে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম কোনও মহিলা সাঁতারু তিনি, যাঁর পাঁচটি চ্যানেল পেরানোর রেকর্ড রয়েছে। এর আগে  ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাটালিনা , মলোকাই, কুক প্রণালী ও এবার নর্থ চ্যানেল জয় করলেন সায়নী। এদিন নর্থ চ্যানেল পার করার পথে ১৩ঘণ্টা ২৩ মিনিটের মত সময় নিয়েছেন সায়নী। সপ্তসিন্ধু পেরনোর স্বপ্ন দেখা সায়নীর সামনে এবার সুগারু ও জিব্রাল্টার এই দুটো চ্যানেল পার করা বাকি রয়েছে। এবিপি লাইভের সঙ্গে ফোনে সাক্ষাতে সায়নী জানান, ''৭ বছর বয়স থেকেই আমি সাঁতারে ঢুকে পড়েছিলাম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে গঙ্গায় ১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিলাম। World Open Water Swimming Association-র কিছু নিয়ম মেনে আমাদের চ্যানেলে নামতে হয়। সাতটা চ্যানেল পার করা মুখের কথা নয়। তিন মাস আগেই আমি কুক চ্যানেল পার করেছিলাম। মাঝে তিন মাস সময় পেয়েছিলাম এই চ্যানেল পার করার জন্য প্রস্তুতির। এরমধ্যেই শিরদাঁড়ার সমস্যা হচ্ছিল আমার। কিছুটা ব্যথা নিয়েই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম।''


বাবা রাধাশ্যাম দাস প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। যদিও নিজে অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। কালনা সাব ডিভিশনের একটি ক্য়াম্পে কোচিংও করাতেন। সায়নীর দিদিও খেলাধূলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাড়িতে ছোট থেকেই খেলার পরিবেশ। কালনার গর্বের মেয়ে বলছেন, ''আমি বাড়িতে থাকলে গঙ্গায় অনুশীলন করি। কারণ কালনার কর্পোরেশনের অধীনস্ত স্যুইমিং পুলে আমাকে অনুশীলন করতে বারণ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১০ সাল থেকেই আমি গঙ্গায় অনুশীলন করি। এছাড়া বাড়ির কাছাকাছি নদী, পুকুরে নিজের মত অনুশীলন করেছি।'' পরিবারের রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে বিরোধিতার জন্য়ই কি এভাবে বঞ্চনার মুখে পড়তে হচ্ছে এত বছর ধরে, প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন সায়নী নিজেই। 


আপাতত আগামী ৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় পা রাখার কথা সায়নীর। বাড়িতে এসে কিছুদিন বিশ্রাম নেবেন। সায়নী বলছেন, ''ইলিশ মাছ আমার ভীষণ প্রিয়। বাড়িতে ফিরে দিদির হাতে আগে ইলিশ মাছ খাব। ওঁর কাছে এটা আবদার রয়েছে আমার। এরপরই পরবর্তী লক্ষ্যের জন্য অনুশীলন শুরু করে দেব।''