নয়াদিল্লি: লোঢা কমিটির সুপারিশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়৷ বিসিসিআই বা তার কোনও অনুমোদিত সংস্থায় আর থাকতে পারবেন না কোনও মন্ত্রী-আমলা, পারবেন না সত্তরোর্ধ্ব কেউই। পাশাপাশি, কোনও রাজ্য সংস্থা থেকে একটি ভোটই গ্রাহ্য করা হবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে৷ আবার বোর্ডে রাখতে হবে ক্যাগ মনোনীত কোনও সদস্যকে।


ভারতীয় ক্রিকেটের শুদ্ধিকরণে বিচারপতি আর এম লোঢা নেতৃত্বাধীন কমিটি গত জানুয়ারি মাসে যা যা সুপারিশ করেছিল, এদিন তার সিংহভাগই মেনে নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত, যা বদলে দিতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চেহারা৷

এদিন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর এবং বিচারপতি এফ এম আই কালিফুল্লাকে নিয়ে গঠিত সর্বোচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেয়। যার মধ্যে অন্যতম হল- কোনও মন্ত্রী বা সরকারি আধিকারিক থাকতে পারবেন না বিসিসিআই ও তার অনুমোদিত সংস্থার কোনও পদেই৷ স্বার্থের সংঘাত এড়াতেই এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেছিল লোঢা কমিটি। এদিন সেই সুপারিশকেই মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট।

শুধুমাত্র ক্রিকেট সংস্থার কর্তা হিসেবে মন্ত্রী-আমলাদের উপর নিষেধাজ্ঞাই নয়, কোনও রাজ্য সংস্থা থেকে একটি ভোটই গ্রাহ্য করা হবে বিসিসিআইয়ে৷ যে রাজ্যে একাধিক ক্রিকেট সংস্থা রয়েছে, তারা রোটেশন পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবে বিসিসিআই নির্বাচনে৷ যেমন, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে দুটি করে সংস্থা রয়েছে। ফলে, আদালতের নির্দেশানুসারে, এবার থেকে এই সংস্থাগুলি পালা করে বোর্ডের ভোটগ্রহণে অংশ নেবে।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ হল-- ৭০ বছর বয়সের উপরে কোনও ব্যক্তিই থাকতে পারবেন না বোর্ডের কোনও পদেই৷ এর পাশাপাশি, আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। যেমন, লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনে বেঞ্চের নির্দেশ, এবার থেকে বোর্ডে এবার থেকে একজন করে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ) মনোনীত সদস্যকে রাখতে হবে, যিনি বোর্ডের আয়-ব্যয়ের হিসেব ও কোষাগারের উপর নজরদারি চালাবেন।

লোঢা কমিটির যে সুপারিশগুলিকে মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, তার মধ্যে একটি রীতিমত বেকায়দায় ফেলতে পারে বোর্ড সভাপতি অনুরাগ ঠাকুরকে৷ লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুসারে, কোনও ব্যক্তি একইসঙ্গে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার পদ ও বিসিসিআইয়ের পদে থাকতে পারবেন না৷ বোর্ড সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি অনুরাগ ঠাকুর হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট সংস্থারও সভাপতি৷ সেক্ষেত্রে যেকোনও একটি পদ ছাড়তে হবে অনুরাগ ঠাকুরকে৷

তবে, এই রায়ের প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতেই পাল্টা আবেদন করেছে বোর্ড। সেখানে তারা জানিয়েছে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ আইসিসির আইনের পরিপন্থী৷ সেক্ষেত্রে বিসিসিআইয়ে ক্যাগ নিযুক্ত হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অনুমোদন হারাতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড৷

তবে, লোঢা কমিটির দুটি সুপারিশ এদিন মানেনি আদালত। যেমন, কমিটির সুপারিশ ছিল, বোর্ডকে তথ্য জানার অধিকার আইনের (আরটিআই) আওতায় আনা হোক এবং স্পট-ফিক্সিং রুখতে ক্রিকেটে বেটিংকে আইনি বৈধতা দেওয়া হোক। এদিন বিষয়গুলি দেশের আইনসভার ওপর ছেড়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে, সম্প্রচার সত্ত্ব এবং কোনও ফ্রাঞ্চাইজির মালিক বা সদস্য বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকলে স্বার্থের সংঘাত হতে পারে কি না, তা যাচাই করার দায়িত্ব বোর্ডের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, আগামি ৬ মাসের মধ্যে এই নির্দেশিকা কার্যকর করতে হবে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়েছে বিসিসিআই। বোর্ড সদস্য তথা আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল জানান, শীর্ষ আদালতের রায়কে কীভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা খতিয়ে দেখছে বোর্ড। এদিকে, সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন ক্রিকেটার বিষেণ সিংহ বেদী এবং কীর্তি আজাদ।