মারগাও: খেলার আগে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের স্লোগান ছিল, ‘রসগোল্লা আমাদের, ম্যাচও আমাদের।’ বাস্তবে হলও সেটাই। রসগোল্লার জিআই স্বীকৃতি নিয়ে লড়াইয়ে যেমন বাংলার কাছে হেরে গিয়েছে ওড়িশা। ফুটবলের লড়াইয়ে তো বাংলার সঙ্গে ওড়িশার কোনও তুলনাই হয় না। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে বাংলার যা সাফল্য, তার সামনে ওড়িশা নেহাতই শিশু। আজ আইএসএল-এ প্রথম জয় তুলে নিয়ে সেটাই প্রমাণ করে দিল এস সি ইস্টবেঙ্গল। খেলার ফল ৩-১। এস সি ইস্টবেঙ্গলের গোল করলেন অ্যান্টনি পিলকিংটন, জ্যাকুয়েস ম্যাঘোমা ও ব্রাইট এনখোবার। শেষদিকে একটি গোল শোধ করে ওড়িশা। প্রথম জয়ের পর ৮ ম্যাচে লাল-হলুদের পয়েন্ট ৬।


প্রথম দিন পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমেই দুরন্ত টাচ, বল কন্ট্রোল, দৌড়, ড্রিবলিং এবং গোল করার দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সবার নজর কেড়ে নিলেন ব্রাইট। তিনি দেখিয়ে দিলেন, বল নিয়ে অনায়াসে তিন-চারজনকে কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন। তাঁর ভাল ফর্মে থাকলে ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতেই পারে।

এবারের আইএসএল-এ এতদিন জয় না পেলেও, কয়েকটি ম্যাচে যথেষ্ট ভাল খেলেছিলেন লাল-হলুদ জার্সিধারীরা। কিন্তু জয় না আসায় দলের উপর চাপ বাড়ছিল। রক্ষণের ভুল এবং স্ট্রাইকারের অভাব ভোগাচ্ছিল রবি ফাওলারের দলকে। তবে আজকের ম্যাচের পর দলের খেলা নিয়ে আশ্বস্ত হতেই পারেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। রক্ষণে রাজু গায়কোয়াড়ের আগমন দলের চেহারাই বদলে দিয়েছে। নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ব্রাইট প্রথম দিনই নিজের জাত চেনালেন। গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার আজও একাধিক নিশ্চিত গোল বাঁচালেন। তিনিও প্রতি ম্যাচেই দলকে ভরসা দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে আইএসএল-এর মাঝপথে এসে লাল-হলুদ জার্সিধারীদের অনেক বেশি ঝকঝকে লাগছে।

আজ খেলার শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গলকে দেখে মনে হচ্ছিল, অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস রয়েছে। ট্রান্সফার উইন্ডোতে যে কয়েকজন ফুটবলার বদল হয়েছে, তার ফলেই দলের খেলায় বদল এসেছে। এতদিনে হয়তো দলকে গুছিয়ে নিতে পেরেছেন ফাওলার। ডানপ্রান্তে মহম্মদ রফিকের দৌড় ও প্রতিটি বলের জন্য লড়াই, বাঁ প্রান্তে ম্যাঘোমার দৌড়, আপফ্রন্টে পিলকিংটনের ছটফটানি, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে স্টেইনম্যানের দাপট ইস্টবেঙ্গলকে প্রথম জয় এনে দিল।

এদিনের ম্যাচের ১৩ মিনিটেই প্রথম গোল পায় ইস্টবেঙ্গল। রাজুর বিখ্যাত থ্রো-ইন থেকে হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন পিলকিংটন। ২৯ মিনিটে তাঁর শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। না হলে তখনই দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। তবে তার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ৩৯ মিনিটে স্টেইনম্যানের কাছ থেকে বল পেয়ে দুজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল করেন ম্যাঘোমা।

দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি গুছিয়ে খেলতে থাকে ইস্টবেঙ্গল। ৭৩ মিনিটে ম্যাঘোমাকে তুলে ব্রাইটকে নামান ফাওলার। একইসঙ্গে তিনি রাজুকে তুলে নিয়ে অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়কে নামান। ব্রাইট শুরু থেকেই বিপক্ষ বক্সে ত্রাসের সঞ্চার করেন। তিনি ৮৮ মিনিটে অসাধারণ প্লেসিংয়ে ভারতীয় ফুটবলে নিজের প্রথম গোল করেন। এরপর সংযোজিত সময়ে একটি গোল পায় ওড়িশা।