করাচি: আফ্রিদির আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’-এর প্রতিটি পাতাই যেন বারুদে ঠাসা। পাতা ওল্টালেই একের পর এক বিস্ফোরণ! নিজের রেকর্ড নিয়ে সত্য উদঘাটন, সেটাই ছিল প্রথম ‘বিস্ফোরণ’। এরপর প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরকে ‘মানসিক রোগী’ বলা। আত্মপ্রকাশের পর থেকে এভাবেই একের পর এক বোমা ফাটিয়েছে শাহিদ আফ্রিদির আত্মজীবনী। এবার যেটা সামনে এল, তা ছোটখাটো ডায়নামাইট বিস্ফোরণই বটে।


আত্মজীবনীতে শাহিদ আফ্রিদি দাবি করেছেন, পাক ক্রিকেটারদের সঙ্গে বুকিদের যোগাযোগ ছিল। তিনি নিজের চোখে বুকি মাজহার মজিদ ও প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার সলমন বাটের এসএমএস কথোপকথন দেখেছেন। এবং সেই বিষয়ে দলের প্রাক্তন কোচ ওয়াকার ইউনিস ও ম্যানেজমেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন। তবে কাজের কাজ হয়নি। নিজের আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’-এ আফ্রিদি দাবি করেছেন, ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর স্টিং অপারেশেনের আগেই তিনি বুকিদের সঙ্গে পাক ক্রিকেটারদের যোগাযোগের বিষয়টি জানতেন।


প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের অগস্ট মাসে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ক্রিকেটের একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছিলেন তত্কালীন পাক অধিনায়ক সলমন বাট সহ আরও দুই ক্রিকেটার মহম্মদ আসিফ ও মহম্মদ আমের। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন এই তিন ক্রিকেটারই। পরে আইসিসি এই অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের শাস্তি দেয়। যার ফলে কেরিয়ার শেষ হয়ে যায় সলমন বাট ও মহম্মদ আসিফের মতো প্রতিভাবান ও তারকা ক্রিকেটারদের। কেবল আমেরই নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কামব্যাক করেন। ২০১০ সালের ওই ঘটনার আভাস তিনি পেয়েছিলেন এবং সে কারণেই মাঝ পথে দলের নেতৃত্ব ছেড়েছিলেন, আত্মজীবনী-তে এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন পাক তারকা আফ্রিদি। তাঁর দাবি, “ইংল্যান্ডে লর্ডস টেস্টের শুরু থেকেই একটা আশঙ্কা হচ্ছিল। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের হল-টা কী? তখন নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম।   ম্যাচ চলাকালীনই টেস্টের চার দিনের মাথায় সলমন বাটকে দায়িত্ব নিতে বলেছিলাম।”


আফ্রিদি দাবি করেছেন, স্পট ফিক্সিংয়ের আগে গোটা বিষয়টিই ওয়াকার ইউনিসকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করেননি ওয়াকার। আফ্রিদির মতে, সলমন বাট ছিলেন পাকিস্তানের ‘প্রোজেক্টেড ক্যাপ্টেন’। আগামী দিনে তাঁকেই দলের অধিনায়ক করা হবে, তা সিংহভাগ পাকা হয়েই ছিল। ওই অবস্থায় এমন একটা খবর গোটা পরিস্থিতি বেসামাল করে দিত, এই ভয় থেকেই কোনও পদক্ষেপ করতে চাননি সেই সময়ে কোচের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার ওয়াকার। সব জেনে শুনেও ‘নিরুপায়’ ছিলেন সেই সময়ের পাক দলের ম্যানেজার ইয়াবর সঈদও। এরপর নিজ থেকেই দায়িত্ব নিয়ে ক্রিকেটারদের বুকি মাজহার মজিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধও করেছিলেন তিনি। তবে আফ্রিদির কথা শোননি তাঁর সতীর্থরা। যার ফলস্বরূপই ক্রিকেটের কালো অধ্যায়ের একটিতে চিরকালীনভাবে থেকে যেতে হয়েছে পাক দলকে। সংশ্লিষ্টমহলের মত আগামী দিনেও এই কলঙ্ক বয়ে যেতে হবে ইমরানের দেশকে।