কলকাতা: টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়মে একগুচ্ছ বদল। খেলার দুনিয়ায় সারাদিন কী ঘটল?


জয়ী অস্ট্রেলিয়া


ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল ভারতীয় ব্যাটারদের দাপট। দ্বিতীয়ার্ধে একইরকম দাপট দেখালেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটাররা। মোহালিতে ভারতের ২০৮ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে ম্য়াচ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া (Ind vs Aus)। তাও ৪ বল বাকি থাকতে। সব মিলিয়ে ম্যাচে উঠল ৪১৯ রান!


সামনে বিরাট লক্ষ্য। অস্ট্রেলিয়া শুরুটা করেছিল ঝড়ের গতিতে। ৩.৩ ওভারে ৩৯ রান যোগ করেন অ্যারন ফিঞ্চ ও ক্যামেরন গ্রিন। এরপর ফিঞ্চ (১৩ বলে ২২ রান) ফিরলেও বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন গ্রিন। ৩০ বলে ৬১ রান করে ভারতীয় বোলারদের চাপে ফেলে দেন গ্রিন। তিন নম্বরে নেমে ২৪ বলে ৩৫ রান করেন স্টিভ স্মিথ।


ফিল্ডারদের জন্য চাপ বাড়ে ভারতের। ব্যক্তিগত ১৯ বলে ৪২ রানে থাকার মাথায় ক্যামেরন গ্রিনের ক্যাচ ফেললেন অক্ষর পটেল। হতভাগ্য বোলারের নাম হার্দিক। পরের ওভারে অক্ষরের বলে স্টিভ স্মিথের (তখন ১৪ বলে ১৯ রান) ক্যাচ ফেলেন রাহুল। সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হল ভারতকে।


অস্ট্রেলিয়াকে এক ওভারেই জোড়া ধাক্কা দিয়েছিলেন উমেশ যাদব। স্টিভ স্মিথকে ৩৫ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ১ রানে ফেরান ভারতীয় তারকা বোলার। উভয় ক্ষেত্রেই রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদল করে সাফল্য পায় ভারত। ১২ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়িয়েছিল ১২৩/৪। তখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, ভারতের পাল্লা ভারি। কিন্তু শেষ দিকে ম্যাথু ওয়েড ২১ বলে অপরাজিত ৪৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে জয়ের রাস্তায় এগিয়ে নিয়ে যান।


ভুবনেশ্বরের লজ্জার রেকর্ড


টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার মনে করা হতো তাঁকে। কিন্তু এশিয়া কাপ থেকে ছন্দে নেই। এশিয়া কাপে ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং নিষ্প্রভ দেখিয়েছিল। খরচ করেছিলেন প্রচুর রান।


অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে লজ্জার রেকর্ড গড়লেন ভুবনেশ্বর কুমার (Bhuvneshwar Kumar)। ৪ ওভার বল করে তিনি খরচ করলেন ৫২ রান। কোনও উইকেট পাননি। ভারতের ২০৮/৬ স্কোর ৪ বল বাকি থাকতে তুলে দেয় অস্ট্রেলিয়া। যে পরাজয়ের পর ভুবনেশ্বর কুমারের তীব্র সমালোচনা চলছে।


টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারে এই প্রথম ৫০ রানের বেশি খরচ করলেন ভুবনেশ্বর। তাঁর বিষাক্ত নাকল বল, স্লোয়ার বাউন্সার, ওয়াইড ইয়র্কার, কোনও অস্ত্রই কাজ করেনি। ক্যামেরন গ্রিন, ম্যাথু ওয়েডদের সামনে বল হাতে কোনও সমস্যাই তৈরি করতে পারেননি উত্তরপ্রদেশের তারকা। ভুবির লাগাতার ব্যর্থতার পর মহম্মদ শামিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে না রাখা নিয়ে সমালোচনাও আরও তীব্র হয়েছে।


ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল ভারতীয় ব্যাটারদের দাপট। দ্বিতীয়ার্ধে একইরকম দাপট দেখালেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটাররা। মোহালিতে ভারতের ২০৮ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে ম্য়াচ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া (Ind vs Aus)। তাও ৪ বল বাকি থাকতে। সব মিলিয়ে ম্যাচে উঠল ৪১৯ রান!


জাডেজার পোস্ট


হাঁটুতে চোট পেয়ে এশিয়া কাপের (Asia Cup) মাঝপর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাডেজা (Ravindra Jadeja)। তারপর সফলভাবে তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপ্রচারও হয়েছে। অস্ত্রোপ্রচারের পর ক্রাচার হাতে নিজের ছবি পোস্ট করেছিলেন জাডেজা। এবার আরও এক নতুন ছবি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করলেন ভারতীয় তারকা। হাসিখুশি মুখে এক নিজের নতুন এক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন ভারতীয় তারকা।


নতুন কী কী নিয়ম আসছে?


আগে কোনও ব্যাটার ক্যাচ দিয়ে আউট হলে দেখা হতো, তিনি অপর প্রান্তের ব্যাটারকে দৌড়ে ক্রস করেছেন কি না। যদি ক্রস করতেন, তাহলে পরের বলে স্ট্রাইক নিতেন অপর প্রান্তের ব্যাটার। আর নতুন ব্যাটার এসে দাঁড়াতে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। কিন্তু সেই নিয়ম বদলে যাচ্ছে। নতুন নিয়মে ক্রিজে আসা ব্যাটারই স্ট্রাইক নেবেন। সে আউট হওয়া ব্যাটার অপর প্রান্তের ব্যাটারের সঙ্গে ক্রস করুন বা না করুন।


করোনার প্রকোপে বল পালিশ করার জন্য লালার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই নিয়ম শুধু বহালই থাকল না, বল পালিশে লালার ব্যবহার চিরকালের জন্য বন্ধ করা হল।


টেস্ট ও ওয়ান ডে ক্রিকেটে ক্রিজে নতুন নামা ব্যাটারকে প্রথম বল খেলার জন্য ২ মিনিটের মধ্যে প্রস্তুত হতে হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেই সময়টা ৯০ সেকেন্ড।


কোনও শট খেলার সময় ব্যাটারের ব্যাটের বা শরীরের একটা অংশ পিচে থাকতেই হবে। তা নাহলে বলটিকে ডেড বল ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি কোনও বল খেলতে ব্যাটারকে পিচ ছাড়তে বাধ্য হতে হলে সেই বলটিকে নো বল ডাকা হবে।


বোলার বল করার জন্য দৌড় শুরু করার পর কোনও ফিল্ডার অবৈধভাবে নড়াচড়া করলে ব্যাটিং দলকে ৫ রান পেনাল্টি হিসাবে দেওয়া হবে। বলটিকে ডেড বল ঘোষণা করা হবে।


মাঁকড়ীয় আউট নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়েছে। আগে বল হাত থেকে রিলিজ করার আগে নন-স্ট্রাইকারকে বোলার রান আউট করলে তাকে আনফেয়ার প্লে মনে করা হতো। তবে এখন থেকে এই নিয়মকে বিতর্কমুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। মাঁকড়ীয় আউটকে রান আউট হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।


আগে বোলার ডেলিভারি স্ট্রাইডে পৌঁছনোর আগে ব্যাটার ক্রিজ ছেড়ে বেরলে বল সরাসরি থ্রো করে রান আউটের চেষ্টা করত ব্যাটার। এখন থেকে এই রকম প্রয়াস করা হলে বলটিকে ডেড বল ঘোষণা করা হবে।


চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঠিক হয়েছিল, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওভার শেষ করতে না পারলে বাকি ওভারে ফিল্ডিং দলকে একজন বাড়তি ফিল্ডারকে ৩০ গজের বৃত্তের মধ্যে রাখতে হবে। সেই নিয়ম এবার ওয়ান ডে ক্রিকেটেও চালু করা হচ্ছে। ২০২৩ বিশ্বকাপের সুপার লিগে সেই নিয়ম কার্যকরী হবে।


দুই দল রাজি হলে ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হাইব্রিড পিচ ব্যবহৃত হবে। আপাতত শুধু মহিলাদের ক্রিকেটে এই নিয়ম রয়েছে।


২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে সব নিয়মগুলি চালু করা হবে।