সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বাংলার জার্সিতে যখন তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল, তখনও করোনা নামক অভিশাপ পৃথিবীকে গ্রাস করেনি। আফগানিস্তান তালিবানদের দখলে চলে যায়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধেনি।
সেটা ছিল ২০১৮। পরের ৪ বছরে প্রদীপ্ত প্রামাণিক (Pradipta Pramanik) খেলেছেন সাকুল্যে ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। যার মধ্যে ৪টি ম্যাচ গত এক সপ্তাহে। বৃহস্পতিবার বাংলার বাঁহাতি স্পিনারই দলের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার রাস্তা সুগম করে দিলেন। ছত্তীশগঢ়ের বিরুদ্ধে ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচ করে নিলেন ৪ উইকেট। সৈয়দ মুস্তাক আলি (Syed Mushtaq Ali T20) টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ছত্তীশগঢ়কে ৫৩ রানে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে ফেলল বাংলা। অভিমন্যু ঈশ্বরণদের ১৬১/৫ তাড়া করতে নেমে ১০৮ রানে শেষ হয়ে গেল ছত্তীশগঢ়। ১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দিলেন প্রদীপ্ত।
ম্যাচের পর লখনউ থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে প্রদীপ্ত বললেন, '১২তম ওভারে যখন বল করতে এসেছিলাম, তখনও ম্যাচ যে কোনও দিকে যেতে পারত। চাপ ছিল। মনে হয়েছিল ব্যাট থেকে দূরে বল রাখব। উইকেট ভাল ছিল। আমরা ১০-২০ রান কম করেছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর চাপ সামলে ম্যাচ বার করে নিতে পেরেছি।' যোগ করলেন, 'ব্যাটসম্যান ধরে ধরে পরিকল্পনা তৈরি ছিল। কাকে কোথায় বল করতে হবে, আগে থেকেই তা ঠিক করা ছিল। সেই পরিকল্পনা মাঠে প্রয়োগ করেছি।'
চার বছর আগে ইডেনে অভিষেক ম্যাচে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে ২ ওভারে ২৪ রান খরচ করেছিলেন। সেই ম্যাচে ২৩৫ রান তুলেছিল উত্তরপ্রদেশ। সুরেশ রায়না সেঞ্চুরি করেছিলেন। বাংলার কোনও বোলারকেই সেদিন রেয়াত করেননি উত্তরপ্রদেশের ব্যাটাররা। কিন্তু কোপ পড়েছিল প্রদীপ্তর ওপর। বাঁহাতি স্পিনার বলছেন, 'কিছু বোঝার আগেই সেই ম্যাচটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বুঝেছি, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলারকে বাঁচতে হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিজ্ঞতাটা কাজে দেয়। আমাদের দলে এখন সবাই জানে কার কী করণীয়। নিজের ভূমিকা নিয়ে সকলের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। ফলে পারফরম্যান্স ভাল হচ্ছে।'
বারবার দলে সুযোগ পেয়েছেন। আবার বাদ পড়েছেন। প্রত্যেকবার বাদ পড়ার পরে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন কীভাবে? প্রদীপ্ত বলছেন, 'সব ফর্ম্যাটে পারফর্ম করে বাদ পড়েছি। তাতে মানসিকভাবে চাপ তৈরি হয়ই। তবে দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আগে বাদ পড়লে দুশ্চিন্তা করতাম। বছর দুই আগে থেকে বেশি ভাবা বন্ধ করে দিয়েছি। বেশি ভাবলে মন খারাপ হয়। পারফরম্যান্সে প্রভাব পরে। এখন মাঠে নেমে নিজের কাজটা করি। চাপমুক্ত থাকি।'
এদিন বাংলার হয়ে সফল সদ্য জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হওয়া শাহবাজ আমেদও। ২৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রান করে শাহবাজই দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। বল হাতে দুটি উইকেটও নেন তিনি।
বাংলার শেষ আট নিশ্চিত। চণ্ডীগড়ের সঙ্গে শেষ ম্যাচ কার্যত নিয়মরক্ষার। পাঁচটি গ্রুপ থেকে সেরা পাঁচটি দল সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে। পাঁচটি দ্বিতীয় সেরা দল ও তৃতীয় স্থানে থাকা সবকটি দলের মধ্যে রান রেট যাদের সবচেয়ে ভাল, সেই একটি দল - সব মিলিয়ে ৬টি দল নিজেদের মধ্যে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে।
আরও পড়ুন: বোর্ডের কমিটি থেকে সরে দাঁড়াক, তোপ প্রাক্তন কর্তার, আমল দিচ্ছেন না সৌরভ-অভিষেক