কলকাতা: দীর্ঘদিন পর দেশের মাটিতে ঘরোয়া ক্রিকেট ফিরতে চলেছে রবিবার, ১০ জানুয়ারি। আর তার আগেই উদ্বেগের কালো মেঘ। জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করেও করোনার থাবা পুরোপুরি এড়ানো গেল না। করোনা আক্রান্ত হলেন বাংলার ট্রেনার ও ম্যানেজার। ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে রবিবারই টুর্নামেন্টে অভিযান শুরু করছেন অনুষ্টুপ মজুমদার, মনোজ তিওয়ারিরা। তার আগে শিবিরে করোনার হানা ঘিরে উদ্বেগে ক্রিকেটারেরা।


বাংলা শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দলের ট্রেনার সঞ্জীব দাস করোনা আক্রান্ত। সঞ্জীবের তত্ত্বাবধানে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ট্রেনিং করেছেন দলের ক্রিকেটারেরা। সেই খবরের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বাংলা শিবিরের উদ্বেগ দ্বিগুণ করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ম্যানেজার অমলেন্দু বিশ্বাস। এবং, দুজনই এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য করোনা আক্রান্ত হলেন।

করোনা আবহে সারা বিশ্বের মতো ভারতেও ক্রিকেট বন্ধ ছিল। সিরিজ অসমাপ্ত রেখে ফিরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সেই সময়ে আইপিএলের আয়োজন করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে সেটা ছিল দেশের বাইরে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। বিভিন্ন রাজ্যে মাঝে কিছু ছোট মাপের টুর্নামেন্ট হয়েছে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু হচ্ছে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টির মধ্যে দিয়েই। অংশ নিচ্ছে ৩৮টি দল। ৬টি করে দল নিয়ে ৫টি এলিট গ্রুপ করা হয়েছে। আর প্লেট গ্রুপে রাখা হয়েছে ৮টি দলকে। রবিবার টুর্নামেন্ট শুরু। এলিট গ্রুপ বি-তে রয়েছে বাংলা। সঙ্গে রয়েছে ঝাড়খণ্ড, হায়দরাবাদ, অসম, ওড়িশা ও তামিলনাড়ু। এই গ্রুপের সমস্ত ম্যাচ হবে কলকাতায়। ইডেন গার্ডেন্স ও সল্টলেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। রবিবার প্রথম ম্যাচে অনুষ্টুপ মজুমদারদের প্রতিপক্ষ ওড়িশা। তার আগেই করোনা কাঁটায় বিদ্ধ শিবির।

জানা গেল, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেই ট্রেনার সঞ্জীবকে দল থেকে আলাদা করে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। তাঁর পরিবর্তে বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ দলের ট্রেনার গৌতম দেবকে সিনিয়র দলের সঙ্গে যোগ দিতে বলা হয়। শনিবার রাতে সঞ্জীবের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তবে তাঁকে ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকতে হচ্ছে। এরই মধ্যে দলের ম্যানেজার আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকেও নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। সিএবি-র এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা এবিপি আনন্দকে বললেন, 'আক্রান্ত দুজনকেই কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আর নিয়ম মাফিক ক্রিকেটারদের নতুন করে টেস্ট করানো হয়েছে।'

এর আগে স্থানীয় টুর্নামেন্ট বেঙ্গল টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ শুরু হওয়ার সময় অভিমন্যু ঈশ্বরণ, মুকেশ কুমার, শ্রেয়াণ চক্রবর্তী-সহ একাধিক ক্রিকেটারের করোনা ধরা পড়েছিল। তবে সেটি ছিল ৬ দলের ছোট মাপের টুর্নামেন্ট। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির মতো ৩৮ দলকে নিয়ে এত বড় মাপের টুর্নামেন্ট নয়। এই টুর্নামেন্টের আগে সব দলকে ৬ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটিয়ে জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকতে হয়েছে। বাংলা, ঝাড়খণ্ড ও হায়দরাবাদ দলের ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরা আছেন বাইপাসের ধারে একটি হোটেলে। অসম, ওড়িশা ও তামিলনাড়ুর ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরা আছেন রাজারহাটের একটি হোটেলে।

প্রশ্ন উঠছে, জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার পরেও কীভাবে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ! বায়ো বাবলে ঢোকার পর সঞ্জীবের প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনি বায়ো বাবলের বাইরে থাকাকালীন আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু জৈব সুরক্ষা বলয়ে অন্তর্ভুক্তির পর বাংলা দলের ম্যানেজারের প্রথম রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন, তা নিয়ে দলেরও অনেকে হতবাক। টুর্নামেন্টের এলিট গ্রুপ সি-র খেলা হবে বঢোদরায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেখানে বোর্ডের ম্যাচ রেফারি পরিমল হেদাও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ৩৮ দলের টুর্নামেন্টে ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, ম্যাচ অফিশিয়াল ও বোর্ডের কর্মীদের মিলিয়ে প্রায় এক হাজার জন যুক্ত। শোনা গেল, বায়ো বাবলে বোর্ডের স্কোরার ও ম্যাচ অফিশিয়ালদের অনেকে রুম শেয়ার করতে বাধ্য় হচ্ছেন। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে প্রথম বল ব্যাটসম্যানের দিকে ধেয়ে যাওয়ার আগে অতিমারির বাউন্সারে বিপাকে বোর্ড।