পারথ: তাঁর জন্ম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন, পাইলট হবেন। যোগ দেবেন পাক বিমানবাহিনীতে। ৬০ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয়েছিল মাত্র ৬০ জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তিনি। কিন্তু দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কারণে এসে তৃতীয় বর্ষে এসে বাতিল হন সিকন্দর রাজা (Sikandar Raza)। জীবন বইতে শুরু করে অন্য খাতে।


বিদেশে পড়াশোনা। ক্রিকেট প্রেম ছোট থেকেই। পরে জিম্বাবোয়েতে গিয়ে ক্রিকেট খেলা এগিয়ে নিয়ে যান। সেই সিকন্দরের হাতেই বৃহস্পতিবার পারথে ঘায়েল হল তাঁর জন্মভূমি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ১ রানে হারিয়ে চমক দিল জিম্বাবোয়ে। যে জয়ের নায়ক সিকন্দর। লো স্কোরিং ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছিলেন ৯ রান। তবে বল হাতে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন। ৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান খরচ করে তুলে নেন ৩ উইকেট। তাঁর শিকার শান মাসুদ, শাদাব খান ও হায়দার আলি। পাকিস্তান ব্য়াটিংয়ের কোমর ভেঙে দেন সিকন্দরই। সেই সঙ্গে শেষ বলে ২ রান নিতে দৌড়নো শাহিন শাহ আফ্রিদিকে রান আউট করার নেপথ্যেও সিকন্দরের দুরন্ত ফিল্ডিং। তিনিই বল ধরে থ্রো করেন রেগিস চাকাভাকে। যে থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন জিম্বাবোয়ের উইকেটকিপার। পাকিস্তানের হার নিশ্চিত হয়।


অঘটনের পারথ


পারথে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবেননি যে, অঘটন অপেক্ষা করে রয়েছে। বরং প্রথমে ব্যাট করে জিম্বাবোয়ে ১৩০/৮ তোলার পর পাকিস্তানের জয়ের ব্যাপারে সকলেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু অন্যরকম কিছু ভেবেছিলেন জিম্বাবোয়ের ক্রিকেটারেরা। শেষ বল পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করলেন। স্নায়ুর চাপ সামলে ম্যাচও বার করে নিলেন তাঁরা।


পারথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে বৃহস্পতিবার টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেন জিম্বাবোয়ের অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন। জিম্বাবোয়ের ওপেনাররা শুরুটা করেছিলেন সতর্কভাবে। আরভিন নিজে ইনিংস ওপেন করতে নেমে ১৯ বলে ১৯ রান করেন। ওয়েশলি মাধেভেরে ১৩ বলে ১৭ রান করে আউট হন। ৫ ওভারে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৪২/১।


কিন্তু তারপরই ধাক্কা দেন পাক বোলাররা। পরপর ফিরে যান মিল্টন শুম্বা (৮ রান), সিকন্দর রাজা (৯ রান)। তবে ব্যাট হাতে পাল্টা লড়াই করেন সিন উইলিয়ামস। ২৮ বলে ৩১ রান করে তিনিই জিম্বাবোয়ের সর্বোচ্চ স্কোরার। শেষ দিকে চালিয়ে খেলে ব্র্যাড ইভান্স ১৫ বলে ১৯ রান করেন। পাক বোলারদের মধ্যে মহম্মদ ওয়াসিম ২৪ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন। ২৩ রানে ৩ উইকেট শাদাব খানের।


রান তাড়া করতে নেমে অবশ্য শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের ব্যাটিং মূলত দাঁড়িয়ে থাকে দুই ওপেনারের ওপর। বাবর আজম ও মহম্মদ রিজওয়ান সব ম্যাচেই দলকে টানেন। যা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছেন পাক প্রাক্তনীরাও। দুই ওপেনারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাই এদিন ভোগাল পাকিস্তানকে। বাবর ৪ ও রিজওয়ান ১৪ রান করে ফেরেন। এরপর শান মাসুদ (৩৮ বলে ৪৪ রান) ছাড়া আর কেউই বলার মতো কিছু করেননি। সিকন্দর রাজা, ব্র্যাড ইভান্স, ব্লেসিং মুজারাবানিদের দাপটে পাকিস্তান ৯৪/৬ হয়ে যায়।


শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১১ রান। বোলার ব্র্যাড ইভান্স। তিনি ৯ রান খরচ করেন। মাত্র ১ রানে ম্যাচ জেতে জিম্বাবোয়ে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল স্বপ্নকেও সরু সুতোয় ঝুলিয়ে রাখল জিম্বাবোয়ে।


আরও পড়ুন: ভাঙল যুবরাজের রেকর্ড, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নতুন কীর্তি রোহিতের