ডাম্বুলা: দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের (India vs Pakistan) লড়াই মানেই দর্শকদের টানটান উত্তেজনা, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এবং বহু স্মরণীয় ম্যাচ। এই দুই পড়শি দেশের ক্রিকেট ময়দানের লড়াইয়ের বহু ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে আছে। তাদের মধ্যে এশিয়া কাপে (Asia Cup) বিগত দশকের এই তিন ম্যাচের স্মৃতি ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের কোনও সমর্থকই এখনও ভোলেননি।


হরভজন সিংহের গর্জন


এমনই একটি ম্যাচ ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার দাম্বুলায় এশিয়া কাপে খেলা হয়েছিল। এই ম্যাচে একদিকে যেমন শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই দেখা গিয়েছিল, তেমনই দুই দলের ক্রিকেটারদের বাকযুদ্ধও কিন্তু নজর এড়ায়নি। ম্যাচটিতে ভারতকে বল নয়, বরং ব্যাট হাতে জিতিয়েছিলেন হরভজন সিংহ (Harbhajan Singh)। পাকিস্তানের ২৬৭ রানের জবাবে এক সময় বেশ চাপেই ছিল ভারতীয় দল। গৌতম গম্ভীরের ৮৩ রানের পর এক সময় সুরেশ রায়না ভারতকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তিনিও শেষ ওভারে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এমন অবস্থায় ভারতের জয়ের নায়ক হয়ে উঠেন হরভজন সিংহ। তিনিই ১১ বলে অপরাজিত ১৫ রান করে এক বল বাকি থাকতে ভারতকে তিন উইকেটে জয় এনে দেন। ভারতের হয়ে উইনিং শট মারার পর হরভজন থার্ড ম্যানের দিকে তাকিয়ে জয়ের আনন্দে গর্জে উঠেন। কিন্তু কেন?


ডাম্বুলার প্রায় ফাঁকা স্টেডিয়ামে দর্শকদের মধ্যে তেমন উত্তেজনার বহর না দেখা গেলেও, তার কমতিটা পূরণ করে দেন খেলোয়াড়রা। প্রথম ইনিংসটা তুলনামূলক সাদামাটা থাকলেও, গরমাগরমি শুরু হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। গৌতম গম্ভীরকে তাঁর জমানার সেরা স্পিন খেলোয়াড়দের মধ্যে ধরা হত। কিন্তু এই ম্যাচে বারংবার সঈদ আজমলের বল, বিশেষত দুসরা বুজতে হাবুডুবু খেতে হচ্ছিল গম্ভীরকে। তাও তিনি হাল ছাড়েননি। লড়াইটা চালিয়ে যান। এই ইনিংসের মাঝেই এক আপিলকে ঘিরে লেগে যায় কামরান আকমল ও গম্ভীরের মধ্যে।


গম্ভীরের প্যাডে একটি বল লাগার পর পাকিস্তান কিপার আকমল বিরাট আউটের আপিল করেন বটে, তবে তা আম্পায়ার নাকচ করে দেন। গম্ভীর তাঁর পিছনে আকমলের এই অত্যাধিক আপিলেই ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর দিকে তেড়ে যান। শেষমেশ সেইসময় ক্রিজে উপস্থিত মহেন্দ্র সিংহ ধোনি দুইজনকে আলাদা করেন। ম্যাচ কোনওসময় পাকিস্তানের দিকে তো কোনওসময় ভারতের দিকে মোড় নিচ্ছিলই। সেই ম্যাচে একটু বাড়তি মশলা যোগ করে এই গম্ভীর-আকমল বিবাদ। এরপরেই আসে বিবাদের দ্বিতীয় অধ্যায়। এবার প্রতিযোগী ছিলেন শোয়েব আখতার ও হরভজন সিংহ।


দুইজনের কেউই দমে যাওয়ার পাত্র নয়। অতীতেও তাঁরা তাঁদের আচরণের জন্য বারংবার ম্যাচ রেফারির ঘরে ঢু দিয়েছেন। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করেই শোয়েবের বিরুদ্ধে হরভজন ৪৯তম ওভারে পর পর দুই বল মারতে গিয়ে মিস করেন। এরপরেই দুই তারকা পিচের মাঝেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। সেই পর্বের পরে যখন শেষ ওভারে হরভজনের কাছে স্ট্রাইক আসে, তখন হয় এস্পার না হয় ওস্পারের পরিস্থিতি ছিলই। ভাজ্জুর মারা বল যখন মিড উইকেটের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বাউন্ডারি স্পর্শ করে, তখন হরভজনের উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ছিল দেখবার মতো। দুই হাত ছড়িয়ে তাঁর সেলিব্রেশন কিন্তু চিরঅমর। অবশ্যই এই সেলিব্রেশনের লক্ষ্য ছিলেন শোয়েব আখতার। আসন্ন রবিবার (২৮ অগাস্ট) যখন আবার এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুথি হবে, তখন আবারও এমন স্মরণীয় কিছু দৃশ্য, বাকযুদ্ধ দেখা গেলে কিন্তু সমর্থকরা আরও তেঁতে যাবেন। ম্য়াচের উত্তেজনাও নিঃসন্দেহে বাড়বে।


বিরাটের ১৮৩


ওই ম্যাচের ঠিক দুই বছর পরেই বাংলাদেশের ঢাকায় এশিয়া কাপেরই আরেক ম্যাচে এক স্মরণীয় ইনিংস খেলেন বিরাট কোহলি। মাত্র মাসখানেক আগে তৎকালীন বিশ্বের সেরা ডেথ ওভার বোলার লসিথ মালিঙ্গাকে পিটিয়ে 'চেজ মাস্টার' হিসাবে নিজের যাত্রাপথ শুরু করে দিয়েছেন কোহলি। তার পরের মাসেই 'কোহলি ঝড়'র শিকার হয় পাকিস্তান। নিজের কেরিয়ার সেরা ১৮৩ রান করেন কোহলি। 


পাকিস্তানের ৩৩০ রানের জবাবে শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারতীয় দল। এমন অবস্থায় ব্যাটে নামেন তরুণ বিরাট কোহলি। মাত্র ১৪৮ বলে কোহলির ১৮৩ রানের ইনিংসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায় গোটা স্টেডিয়াম। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ২২টি চার ও দুইটি ছক্কায়। এর জেরে ১৩ বল বাকি থাকতেই ছয় উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় ভারতীয় দল। সেই সময় এই ৩৩০ রানই ছিল ওয়ান ডে ইতিহাসে সফলভাবে রান তাড়া করে জয়ের ক্ষেত্রে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোর। এই ম্যাচ ও এই ইনিংস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।


বুম বুম আফ্রিদি


কোহলির এই স্মরণীয় ইনিংসে দুই বছর পরেই ফের একই স্টেডিয়ামে আরও একটি স্মরণীয় এশিয়া কাপ ম্যাচ খেলে ভারত ও পাকিস্তান। এই ম্যাচেও শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই চলেছিল। তবে ভারত নয়, পাকিস্তান জিতেছিল এই ম্যাচ। সৌজন্যে শাহিদ আফ্রিদি। ২৪৫ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান পরাজয়ের দিকেই এগোচ্ছিল। তবে নিজের কেরিয়ারে যেমন বারংবার করেছেন, তেমনই কার্যত একা হাতে খেলার রঙ বদলে দেন শাহিদ আফ্রিদি।


শেষ ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিরুদ্ধে আফ্রিদি পর পর দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচ জেতান। শেষ ছক্কায় তো কার্যত মনে হচ্ছিল বল মাঠের ভেতরেই ক্যাচ হয়ে যাবে। কিন্তু কোটি কোটি ভারতীয়র হৃদয়ভঙ্গ করে তা বাউন্ডারি পার করেই পড়ে। মাত্র ১৮ বলে ৩৪ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেন আফ্রিদি। এছাড়া ম্যাচে মহম্মদ হাফিজও ৭৫ রানের একটি সুন্দর ইনিংস খেলেছিলেন। দুই বল বাকি থাকতে এক উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান।


আরও পড়ুন: ১৯৮৬ সালে শেষ বলে মিয়াঁদাদের ছক্কায় হার এখনও কপিলের কাছে দুঃস্বপ্ন