মুম্বই: প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ইনজামাম উল হক একবার বলেছিলেন যে, ''সেদিনের মত সচিনকে ব্যাট করতে আমি আমার কেরিয়ারে আর কখনো দেখিনি। ওই ইনিংসটার ক্লাসই আলাদা''। শোয়েব আখতার জানিয়েছিলেন, তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা ভারতের বিরুদ্ধে ২০০৩ বিশ্বকাপে হার। উইজডেনের সেরা ওয়ান ডে ইনিংসের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল মাস্টার ব্লাস্টারের সেই ইনিংস। কিন্তু ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৯৮ রানের ইনিংস সচিনকে উপহার দিয়েছিলেন আরো একটি জিনিস। তা হল সচিনের নতুন ডাকনাম। সচিন থেকে সচিন পাজি হয়ে ওঠার সেই গল্প নিয়েই আমাদের আজকের ওস্তাদের মার প্রতিবেদন -


হালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটি বাদ দিলে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত বরাবরই শক্ত গাঁট পাকিস্তানের সামনে। ২০০৩ বিশ্বকাপের আগেও ১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। ২০০৩ বিশ্বকাপে যদিও অনেকেই ভেবেছিলেন যে এবার হয়ত পাশা পালটাতে পারে। আর তার একমাত্র কারণ ছিল পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং লাইন আপ। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন বোধহয় সচিন নিজে। পাকিস্তানের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা ২৭৪ তাড়া করতে নেমে ৭৫ বলে ৯৮ রানের অনবদ্য ইনিংস। ১২টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে এই ইনিংস সাজিয়েছিলেন মুম্বইকর। দ্রাবিড় ও পরে অর্ধশতরান হাঁকানো যুবরাজ সিংহ মিলে ম্যাচের যবনিকা টানলেও প্রথম ৩০ ওভারেই ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। ওয়াসিম আক্রম, শোয়েব আখতার, ওয়াকার ইউনিস তৎকালীন বিশ্বের সেরা ৩ পেস বোলারের সামনে নজরকাড়া সব স্ট্রেট ড্রাইভ, পুল, হুক, কভার ড্রাইভের ঝলক। সেঞ্চুরিয়নের গ্যালারিতেও সেদিন যেন ওয়াংখেড়ের আমেজ। 


সচিনকে তাঁর জুনিয়ররা সবসময়ই সচিন পাজি বলে থাকেন। 'পাজি' অর্থাৎ খুব কাছের বড় ভাইদের এভাবেই সম্বোধন করা হয় পঞ্জাবিতে। সচিনকে পাজি ডাকা  কিন্তু শুরু হয়েছিল সেই ম্যাচের পরই। ম্যাচে পর যখন টিম বাসে প্লেয়াররা উঠতে চলেছে, তখনই আচমকা দলের জুনিয়র ক্রিকেটার যারা ছিলেন অর্থাৎ যুবরাজ, কাইফ, সহবাগ প্রত্যেকে সচিনকে পাজি বলে ডাকতে শুরু করেন। হরভজন সিংহ টিম বাসের সামনে হঠাৎই বলে ওঠেন ''পাজি নম্বর ওয়ান''। সেই শুরু, এরপর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে যত তরুণ ক্রিকেটার এসেছেন, তাঁদের সবার কাছেই সচিন হয়ে উঠেছেন প্রিয় 'সচিন পাজি'।


সেদিনের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিলেন পাকিস্তান। সৈয়দ আনোয়ারের শতরানের দৌলতে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৩ রান বোর্ডে তুলে নেয় পাকিস্তান। ভারতের হয়ে ২টো করে উইকেট নেন আশিস নেহরা ও জাহির খান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৫.৪ ওভারেই জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায় ভারত। সচিনের পাশাপাশি সেদিন অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন যুবরাজ। ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়ও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে সচিনে ৯৮ রানের ইনিংস আলাদা জায়গা করে নিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের আর্কাইভে। 


আরও পড়ুনঃ নিউজিল্যান্ডে প্রবল হাওয়া, গতিময় পিচ, বিশ্বকাপের আগে সাহসী প্রস্তুতি রিচার