নয়াদিল্লি: বেতন বৃদ্ধি সহ ১১-দফা দাবিতে ধর্মঘটে সামিল বাংলাদেশের প্রথম সারির ক্রিকেটাররা। যা ঘিরে ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে দলের আসন্ন ভারত সফর।
গতকাল, টেস্ট ও টি-২০ অধিনায়ক শাকিব-আল-হাসান সহ মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে এই ধর্মঘটের কথা ঘোষণা করেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, দাবি না মেটা পর্যন্ত কোনও প্রকার ক্রিকেটীয় কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকবেন না। প্রায় ৫০ জন ক্রিকেটার এই ধর্মঘট-প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন।
এর ফলে, বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট লিগের ভবিষ্যৎ একদিকে যেমন বিপন্ন হয়ে পড়েছে, তেমনই জাতীয় দলের আসন্ন ভারত সফরের ভবিষ্যৎও ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গিয়েছে। কারণ, চলতি সপ্তাহেই দলের স্পিন-পরামর্শদাতা নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরির তত্ত্বাবধানে ভারত সফরের প্রস্তুতি শিবির শুরু হওয়ার কথা ছিল। ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের কারণে তা বাতিল হতে পারে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩ নভেম্বর ভারতে আসার কথা বাংলাদেশের। এখানে তিনটি টি-২০ ও একটি টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা শাকিবদের। বিশেষ করে, এই টেস্ট ম্যাচগুলি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, সেগুলি চলতি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অঙ্গ।
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে দলের অন্যতম ওপেনার তামিম ইকবাল দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে একহাত নিয়ে বলেন, স্থানীয় কোচ থেকে শুরু করে ফিজিও, প্রশিক্ষক ও গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন অবিলম্বে বৃদ্ধি করা উচিত তাঁরা অত্যন্ত কম বেতন পান।
এদিকে, বাংলাদেশের সফর বাতিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় চিন্তায় ভারত। যদিও, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা মাথা গলাতে নারাজ। বোর্ডের এক কর্তা জানান, গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বিসিসিআই। অন্য বোর্ডের বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না। যতক্ষণ না ওদের তরফে কোনও কিছু জানানো হচ্ছে, আমরা মন্তব্য করব না।
তবে, বাংলাদেশ দল যদি একান্তই না আসতে পারে, তাহলে তিনটি দলকে স্ট্যান্ড-বাই হিসেবে রেখে নতুন ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করেছে ভারতীয় বোর্ড। তালিকায় রয়েছে সদ্য নির্বাসন কাটিয়ে আইসিসি-র তালিকা পুনরায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া জিম্বাবোয়ে। দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামী বছর মার্চ মাসে ভারতে একদিনের সিরিজ খেলতে আসার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার। বাংলাদেশ সিরিজ বাতিল হলে, ওই সিরিজটি এখনই হতে পারে। তৃতীয় দল হচ্ছে আয়ারল্যান্ড।
যদিও, বিসিসিআই-এর একাধিক প্রভাবশালী কর্তার দাবি, বোর্ডের ভাবী সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এই সমস্যার কোনও না কোনও সমাধান বের করে ফেলবেন। এক কর্তা জানান, বিসিবি-র সঙ্গে বেশ ভাল সম্পর্ক সৌরভের। ফলে, তিনি কোনও সমাধানসূত্র বের করতে পারেন। ওই কর্তা আরও জানান, কলকাতায় একটি টেস্ট ম্যাচ হওয়ার কথা। সেই দিক দিয়ে দুদেশের সমর্থকদের মধ্যে প্রবল উন্মাদনা থাকার কথা। বাংলাদেশের প্রচুর সমর্থক কলকাতায় আসতে পারেন। ফলে, টেস্ট না হলে, সেই তাপ-উত্তাপ একেবারে মাটিতে মিশে যাবে।
সৌরভ নিজেও আশাবাদী। একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌরভ বলেন, এটা ওদের ভেতরের সমস্যা। আশা করছি, দ্রুত মিটে যাবে। তাঁর মতে, বাংলাদেশ অবশ্যই ভারতে আসবে। সৌরভ ওই ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন, কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টের জন্য তিনি একাধিক পরিকল্পনা করেছেন। জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ করার ভাবনাচিন্তা রয়েছে। ইতিমধ্যেই, হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কলকাতায় আসবেন। পাশাপাশি, যেহেতু, ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল, সেই জন্য ওই ম্যাচে খেলা উভয় দলের ক্রিকেটারদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। ফলে, সৌরভের আশা, ঠিক সময়েই হবে ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ।