সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তিনি যখন বাংলার জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন, তখনও ভারতীয় ক্রিকেট টি-টোয়েন্টির স্বাদ পায়নি। আইপিএল তখনও অলীক কল্পনা। রাঁচির মতো ছোট শহর থেকে উঠে আসা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নামের কেউ জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন, সকলের ধারণার বাইরে। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়রা চুটিয়ে ক্রিকেট খেলছেন। বিশ্বের সেরা স্পিনারের তকমা নিয়ে শেন ওয়ার্ন-মুথাইয়া মুরলীধরনের দ্বৈরথ মধ্যগগনে।
মধ্য আটত্রিশের সেই অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Majumdar) এখনও বাইশ গজে নজর কাড়ছেন। বাংলাকে ম্য়াচ জেতাচ্ছেন। যাবতীয় উপেক্ষা আর অবজ্ঞা ভুলে।
পারফর্ম করেও দল থেকে বাদ পড়লে খারাপ লাগে না?
বৃহস্পতিবার বিজয় হাজারে ট্রফিতে (Vijay Hazare Trophy) পুদুচেরির বিরুদ্ধে ঝকঝকে সেঞ্চুরি করে বাংলাকে ম্যাচ জিতিয়েছেন চন্দননগরের ক্রিকেটার। পুদুচেরিকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলা। ম্যাচের শেষে এবিপি লাইভের প্রশ্নে রাঁচি থেকে মোবাইল ফোনে অনুষ্টুপ বললেন, 'রান করে সুযোগ না পাওয়ার ঘটনা তো গত ২-৩ মরসুম ধরে হয়ে আসছে। মন খারাপ হয়। কিন্তু হাল ছেড়ে দিই না। সমস্ত ক্রিকেটারকেই এটা মেনে নিতে হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয়েছি। আমার বয়স ২৪ বছর হলে মনের অবস্থা অন্যরকম হতো। এখন আর ওসব নিয়ে ভাবি না। হাতে যে সুযোগ আছে সেটাই কাজে লাগাই। নিজের দক্ষতায় আস্থা রয়েছে। জানি সুযোগ পেলে পারফর্ম করবই। দলে থাকাটা আমার হাতে নেই।'
নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন কীভাবে? অনুষ্টুপ বলছেন, 'সরফরাজ খানের কথা ভাবুন। ঘরোয়া ক্রিকেটে এত রান করেও জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছে না। মুম্বইয়ের হয়ে খেলেছে, উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলেছে। ওর মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি এখন পরিণত হয়ে গিয়েছি। আর বাংলার জার্সিতে মাঠে নামাটাই অনুপ্রেরণা। আলাদা কিছুর দরকার পড়ে না।'
বৃহস্পতিবার প্রথমে ব্যাট করে ৪৩.২ ওভারে ১৯৭ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল পুদুচেরি। ৩৯ ওভারে সেই রান তুলে দেয় বাংলা। ১০৬ বলে ১০০ রানে অপরাজিত ছিলেন অনুষ্টুপ। লিস্ট এ ম্যাচে কেরিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে হেরে যাওয়ায় কতটা চাপ ছিল? অনুষ্টুপ বলছেন, 'চাপের ব্যাপার নয়। পরিকল্পনা ছিল ম্যাচ শেষ করে আসব। সেটা পেরেছি বলে ভাল লাগছে।'
সম্প্রতি বড় মঞ্চে চাপের মুখে বারবার হেরে যাচ্ছে বাংলা দল। কোথায় গলদ? দলের সিনিয়র ক্রিকেটার অনুষ্টুপের বিশ্লেষণ, 'গত ২-৩ মরসুমে আমরা অনেক হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হেরেছি। সাদা বলের ক্রিকেটে বোলিং আরও আঁটসাঁট হতে হবে। আগের ম্যাচে ২ ওভারে ৩০ রান হাতে ছিল। জাতীয় দলে খেলা বোলাররা বল করল। অথচ হেরে গেলাম। সেটা সামলে উঠতে হবে। এইরকম মুহূর্তে স্নায়ুর চাপ সামলে ভাল খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ।'
মধ্য আটত্রিশের অনুষ্টুপ বা সাঁইত্রিশ পেরনো মনোজ তিওয়ারি এখনও রান করছেন। দলকে টানছেন। তরুণ প্রজন্ম দায়িত্বশীল হবে কবে? অনুষ্টুপ বলছেন, 'মাঝে মধ্যে আমিও ভাবি, অনুষ্টুপ মজুমদার আর কতদিন? মনোজই বা কতদিন? ভাবলে নিজেও চিন্তিত হই। নতুনদের দায়িত্ব নিতে হবে। চাপের মুখে পারফর্ম করতে হবে।'
তবে ইতিবাচক দিকও খুঁজে পাচ্ছেন অনুষ্টুপ। বলছেন, 'শাহবাজ আমেদ, প্রদীপ্ত প্রামাণিকরা ভাল খেলছে। ওদের ওপরই ভরসা রাখতে হবে। ভাল ব্যাটসম্যান অনেক রয়েছে। তবে ম্যাচ বার করে আনার মানসিকতা দরকার।'
আরও পড়ুন: 'প্লেয়ার্স ক্যাপ্টেন', অধিনায়ক হার্দিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কোচ লক্ষ্মণ