কলকাতা: সাল ২০১৫। জাতীয় টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছাড়লেন জোড়া বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। তাঁর পরিবর্তে নেতৃত্বের মুকুট উঠল বিরাট কোহলির (Virat Kohli) মাথায়।


পরের ৭ বছর টেস্টে ভারতীয় দলকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন কোহলি। অস্ট্রেলিয়া থেকে সিরিজ জিতে ফেরা। ইংল্যান্ডকে ইংল্যান্ডের মাটিতে হারানো। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জয়। ঘরের মাঠে কার্যত অপরাজেয় হয়ে ওঠা। টেস্টে তাঁর নেতৃত্বে একের পর এক কোহিনূর জয় করে ভারতীয় দল। তিনি অধিনায়ক থাকাকালীন টেস্টে বিশ্বের এক নম্বর দল হয় ভারত। প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করে ভারত। টেস্টের আঙিনায় গত সাত বছরে ক্রিকেট বিশ্বে একের পর এক দুর্লভ কাণ্ডকারখানা ঘটিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। যার পুরোধা তিনি, কিংগ কোহলি।


শনিবার টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন কোহলি। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, ‘দলকে সঠিক দিশায় এগিয়ে নিয়ে যেতে ৭ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম, সাধনা ও অক্লান্ত অধ্যাবসায় লেগেছে। পুরোপুরি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কিছুই বাদ দিইনি। কিন্তু সব কিছুরই শেষ থাকে। ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসাবে আমার ইতি টানার সময় হয়েছে। অনেক ভালর পাশাপাশি কিছু খারাপ সময়ও গিয়েছে। কিন্তু কখনও প্রচেষ্টা ও বিশ্বাসের অভাব ছিল না। আমি সব সময় যা করি তাতে একশো কুড়ি শতাংশ দেওয়ায় বিশ্বাসী আর যদি সেটা না পারি, তাহলে জানি সেটা ঠিক নয়। মনের দিক থেকে আমি পুরোপুরি স্বচ্ছ আর দলের কাছে সৎ থাকতে চাই’।


তাঁর নেতৃত্বে ভরসা রাখার জন্য পূর্বসূরি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী-সহ সাপোর্ট স্টাফদের এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিরাট।


টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসাবে ঈর্ষণীয় পরিসংখ্যান। মোট ৬৮টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোহলি। যার মধ্যে ভারত জিতেছে ৪০টি ম্যাচ। ১৭টি ম্যাচে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে ভারতকে। পাশাপাশি ১১টি ম্যাচ শেষ হয়েছে অমীমাংসিতভাবে। টেস্ট জয়ের নিরিখে কোহলি ছাপিয়ে গিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ধোনির মতো কিংবদন্তি অধিনায়কদের। ভারতের একমাত্র অধিনায়ক হিসাবে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে বিদেশের মাটিতে চারটি টেস্ট জেতার নজির গড়েছেন কোহলি। তাও একবার নয়, দু-দুবার। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট সিরিজ হারলেও এশিয়ার একমাত্র অধিনায়ক হিসাবে সেঞ্চুরিয়নে টেস্ট জেতার নজির গড়েছেন বিরাট।


টেস্টে অধিনায়ক কোহলির কাছে হয়তো সবচেয়ে বড় ক্ষত হয়ে থাকবে নিউজিল্যান্ডের কাছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পরাজয়। যদিও কোহলি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, এক ম্যাচের ফলাফলে কোনও দলকে বিশ্বের সেরা বেছে নেওয়া যায় না। দল হিসাবে দীর্ঘ সময় ধরে দাপট দেখাতে পারাটাই আসল কৃতিত্বের। অধিনায়ক হিসাবে তিনি যেটা করে দেখিয়েওছিলেন। টেস্টে গোটা বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া।


কোহলির টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেল একটি অধ্যায়। যে পর্ব ভারতীয় ক্রিকেটকে শিখিয়েছে, চোখে চোখ রেখে আগ্রাসী ক্রিকেট খেললে অসম্ভবকেও করা যায় সম্ভব।