লন্ডন: ২০০৭-এ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের বিপর্যয়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। কিন্তু ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডসের একটা ফোনের পর সেই মনোভাব বদলে ফেলেন তিনি। এ কথা নিজেই জানিয়েছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ব্যাটিং স্তম্ভ সচিন।
২০০৭-এ সচিন তাঁর দাদা অজিত তেন্ডুলকরের পরামর্শে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন বলে এতদিন জানা ছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বদলের ক্ষেত্রে ভিভের ভূমিকা নিয়ে এতদিন কোনও মন্তব্য করেননি মাস্টার-ব্লাস্টার।
গতকাল রবিবার সচিন বলেছেন, তাঁর কেরিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপ। যে খেলার জন্য জীববের সেরা দিনগুলি পেয়েছিলেন তিনি, তেমনি পেয়েছেন খারাপ দিনও। সচিন বলেছেন, আমি এমনটাই ভেবেছিলাম। ওই পর্বে ভারতীয় ক্রিকেটে এমন কিছু ঘটছিল, যা আদৌ স্বাস্থ্যকর ছিল না। আমাদের কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। আমার মনে হয়েছিল, ওই পরিবর্তনগুলি না হলে আমি ক্রিকেট থেকে অবসর নেব। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ব্যাপারে আমি ৯০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু আমার দাদা আমাকে বলে যে, ২০১১-র বিশ্বকাপের ফাইনাল রয়েছে মুম্বইতে। নিজের হাতে ওই সুন্দর ট্রফিটা ধরে থাকতে কল্পনা করতে পারছ না? এরপর আমি ফার্ম হাউসে চলে যাই এবং তখনি স্যর ভিভের ফোন পেলাম। বললেন, আমি জানি তোমার মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট রয়েছে। আমরা ৪৫ মিনিট কথা বলেছিলাম।তা খুবই আন্তরিক ছিল। কারুর ব্যাটিংয়ের হিরো যদি ফোন করে এমন কথা বলেন, তা অনেক বড় ব্যাপার। এই মুহুর্তটা সবকিছু বদলেই শুধু দেয়নি, সেই সঙ্গে পরবর্তী পর্বে আমি আরও ভালো পারফর্ম করেছিলাম।
একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন সচিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল ভিভও। সচিনকে দেখিয়ে তিনি বলেছেন, এই ছোট্টখাট্টো চেহারার ছেলেটির ওপর তাঁ সর্বদাই বিশ্বাস ছিল।
ভিভ বলেছেন, সুনীল গাওস্করের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ আমি পেয়েছি। আমি মনে করি তিনি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের গডফাদার। তারপর আসে সচিন, এরপর এখন বিরাট কোহলি। কিন্তু সবচেয়ে যেটা আমাকে আশ্চর্য করে তা হল, এমন একটা ছোটখাটো চেহারার ছেলে এত শক্তিশালী হয় কীভাবে।
সচিন জানিয়েছেন, ২০০৩-এর বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারটা তাঁর জীবনের অন্যতম বড় একটা হতাশার ব্যাপার।
তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, এটা একটা আক্ষেপজনক ঘটনা। কারণ, আমরা পুরো টুর্নামেন্টটা দারুণ খেলেছিলাম। এর আগে নিউজিল্যান্ডে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলতে পারেনি। কারণ ওরা জীবন্ত পিচ করেছিল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ খেলতে এসে প্রতি ম্যাচে আমরা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম। পুরো টুর্নামেন্ট একটা দলের কাছেই আমরা হেরেছিলাম। ওই দল ছিল অস্ট্রেলিয়া। আমি মনে করি, ফাইনালে আমরা হয়ত একটু বেশিই চার্জড আপ ছিলাম। কখনও কখনও আগ্রাসী মানসিকতায় লাগাম না থাকলে ফলটা বিপরীত হয়। আর একবার সুযোগ পেলে ম্যাচটা আমরা ভিন্ন মনোভাব নিয়ে খেলতাম।
আগামী ১৬ জুন বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে ভারত। এই ম্যাচে ভারতের জয়ের সম্ভাবনাই অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন সচিন।
প্রাক্তন ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আক্রম বলেছেন, পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা সচিনকে স্লেজিংয়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বুঝেছিলেন যে, সচিনের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে না।