নয়াদিল্লি: বিতর্কে তোলপাড় ভারতীয় ক্রিকেট। বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli) সরিয়ে রোহিত শর্মাকে ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক করা এবং তা নিয়ে কোহলি ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) পরস্পরবিরোধী মন্তব্য, সব মিলিয়ে সরগরম ক্রিকেটমহল।


তবে এরকম প্রকাশ্যে মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যে বিরক্ত কপিল দেব (Kapil Dev)। বিশেষ করে যখন ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠিন একটি সিরিজ খেলতে গিয়েছে, সেই সময়। ভারতের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বলেছেন, 'এই সময়ে কারও দিকে আঙুল তোলা ঠিক নয়। সামনেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। দয়া করে সেদিকে মনোযোগ দিক সকলে।' কপিল যোগ করেন, 'আমি মনে করি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হল বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তবে হ্যাঁ, ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বেশ ভারি পদ। তবে সৌরভ বা কোহলি যেই হোক, প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে খারাপ কিছু বলা ঠিক নয়।'


ভারতীয় ক্রিকেট অনেক বিতর্কিত অধ্যায় দেখেছে। জাতীয় ক্রিকেট দলে অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)-কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের (Greg Chappele) তিক্ততা থেকে শুরু করে বোর্ডের প্রশাসনে হেভিওয়েট ব্যক্তিত্বদের সংঘাত, কোচ অনিল কুম্বলের সঙ্গে অধিনায়ক বিরাট কোহলির (Virat Kohli) মতানৈক্য বা সাম্প্রতিকতম কোহলি-রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ঠাণ্ডা সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা, দেশের ক্রিকেটমহল সরগরম থেকেছে।


কিন্তু তাই বলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানের কথার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেবেন সদ্য অপসারিত অধিনায়ক, তাও আবার ভরা সাংবাদিক বৈঠকে! স্মৃতি হাতড়েও এরকম বেনজির কাণ্ড মনে করতে পারছেন না ভারতীয় ক্রিকেটের হালহকিকত জানা কেউই।


বিরাটকে সরিয়ে রোহিত শর্মাকে ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক করার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, তিনি নিজে বিরাটের সঙ্গে যোগাযোগ করে টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। সৌরভ ঘনিষ্ঠ মহল থেকে এও বলা হয়েছিল যে, বিরাট টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ছাড়ার ব্যাপারে অবিচল ছিলেন এবং বোর্ড কর্তা থেকে শুরু করে নির্বাচকদের কেউই চাননি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুই ফর্ম্যাটের জন্য দুই পৃথক অধিনায়ক রাখতে। সেই কারণেই রোহিতকে পাকাপাকিভাবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার আগে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বোমা ফাটান কোহলি নিজে। জানিয়ে দেন, তাঁকে কেউ নেতৃত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করেননি। বরং তিনি যখন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা বলেছিলেন, তা একবাক্যে মেনে নেওয়া হয়েছিল। এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টের দল নির্বাচনী বৈঠকের দেড় ঘণ্টা আগে তাঁকে জানানো হয়েছিল যে, তিনি আর ওয়ান ডে অধিনায়ক থাকছেন না।


বিরাটের মন্তব্য ভারতীয় ক্রিকেট মহলে তোলপাড় ফেলে দেয়। কারণ, বিরাট যে শুধু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তাই নয়, বোর্ড প্রেসিডেন্টের দাবিকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছেন। এ যেন মুখে না বলেও কার্যত বুঝিয়ে দেওয়া যে, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনি মিথ্যে বলছেন। কোহলির সাংবাদিক বৈঠকের পরই ভারতীয় ক্রিকেটমহলে ঝড় ওঠে। সেই থেকেই সৌরভের বীরেন রায় রোডের বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের ভিড়। যদি পাল্টা কোনও প্রতিক্রিয়া দেন সৌরভ। বোর্ড মহলে এরকমও শোনা যায় যে, সাংবাদিক বৈঠকে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসাবে যোগ দিয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এরকম কথা বলার জন্য শো কজ করা হতে পারে কোহলিকে।


আরও পড়ুন: বলতে বলতে হাঁফিয়ে গিয়েছি যে, রোহিতের সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলা নেই: কোহলি


বৃহস্পতিবার দুপুরে সৌরভ নিজের বাড়ি থেকে বেরনোর সময় এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। পরে সাংবাদিকদের নাছোড় প্রশ্নের মুখে বলেন, 'স্পর্শকাতর বিষয়। এ নিয়ে যা বলার বোর্ড বলবে।'