ম্যাঞ্চেস্টার: সাউদাম্পটনের পর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ফের শামি-ঝড়। মহম্মদ শামির বিধ্বংসী বোলিংয়ে ধরাশায়ী ক্যারিবিয়ানরা। যোগ্য সঙ্গ দিলেন জসপ্রীত বুমরাহ, যুযবেন্দ্র চাহলরা। যার দৌলতে বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২৫ রানে হারিয়ে জয়ের চলতি বিশ্বকাপে অপরাজেয় তকমা ধরে রাখল ভারত। একইসঙ্গে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আসনও কার্যত নিশ্চিত করে ফেলল মেন ইন ব্লু-রা।


এদিন টসে জিতে প্রথম ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৬৮ রান তোলে বিরাট-বাহিনী। জবাবে ১৪৩ রানেই শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। এদিন কোনও ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানকে ভারতীয় বোলারদের সামনে স্বচ্ছন্দ্য লাগেনি। বিপক্ষ শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেন মহম্মদ শামি।


বিপজ্জনক ক্রিস গেইলকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এদিন বিন্দুমাত্র ছন্দে ছিলেন না গেইল। ১৯ বল খেলে মাত্র ৬ রান করেন তিনি। পঞ্চম ওভারে তাঁকে ফেরান শামি। দলের স্কোর তখন ১০। সপ্তম ওভারে ফের আঘাত হানেন শামি। দুর্ধর্ষ অফ-কাটারে ফিরিয়ে দেন শাই হোপকে(৫)।


এই জোড়া ধাক্কা থেকে আর বেরোতে পারেনি উইন্ডিজরা। তৃতীয় উইকেটে ৫৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সুনীল অম্বরিশ ও নিকোলাস পুরান। কিন্তু, ৩১ রানে অম্বরিশ আউট হতেই ফের ধস নামে ক্যারিবিয়ান ইনিংসে। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়তে থাকে।


এদিন এক বা দুজন ব্যাটসম্যানের বড় রান করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, ভারতীয় বোলারদের দাপটে তা সম্ভব হয়নি। দলের পক্ষে সর্বাধিক রান করেন অম্বরিশ। ২৮ রান করেন পুরান। ১০০ রানের মধ্যেই দলের অর্ধেক ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। এদিন ৬ ব্যাটসম্যান দু-অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি।


বল হাতে ভারতের হয়ে এদিন সবথেকে সফল ছিলেন মহম্মদ শামি। ৬.২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে তিনি ৪টি উইকেট নিয়ে নেন। ৬ ওভারে ৯ রান দিয়ে ২টি উইকেট তোলেন বুমরাহ। এছাড়া, চহাল নেন ২টি এবং হার্দিক পাণ্ড্য ও কুলদীপ যাদব  নেন একটি করে উইকেট।


ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টসে জিতে প্রথম ব্যাটিং করে  ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৬৮ রান তুলল  ভারত। ভারতের এই রানে বড় অবদান রাখেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি (৮২ বলে ৭২), মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (৬১ বলে অপজাজিত ৫৬) এবং হার্দিক পাণ্ড্য (৩৮ বলে ৪৬)। এছাড়া রাহুলও  ওপেন করতে নেমে অবদান রাখেন। তিনি ৬৪ বলে ৪৮ রান করেন তিনি।


এদিন সাবধানী হয়ে শুরু করেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার রাহুল ও রোহিত শর্মা। কিন্তু, ষষ্ঠ ওভারে ঘটে ছন্দপতন। ব্যক্তিগত ১৮ রান করে আউট হন রোহিত। যদিও, তাঁর আউট নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ থেকে গিয়েছে।


দ্বিতীয় উইকেটে ৬৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন রাহুল ও কোহলি। ফের  ২১ তম ওভারে ছন্দপতন।  হাফ-সেঞ্চুরি থেকে ২ রান দূরে থেমে যায় রাহুলের ইনিংস। ক্ষণস্থায়ী হন চার নম্বরে নামা বিজয় শঙ্কর (১৪) ও পাঁচে নামা কেদার যাদব (৭)।


এই সময় ভারতের রানের গতি কিছুটা স্লথ হয়ে যায়। ধোনির সঙ্গে ইনিংস গড়তে শুরু করেন বিরাট। কিন্তু, পিচ মন্থর হতে শুরু করেছিল। ফলে, ব্যাটে বল থমকে আসায় শট খেলায় স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না কোনও ব্যাটসম্যানই।


রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় আউট হন বিরাট। যদিও, তিনি এর মধ্যেই ব্যক্তিগত কীর্তি স্থাপন করেন। সবচেয়ে দ্রুত ২০ হাজার আন্তর্জাতিক রান পূর্ণ করা ক্রিকেটার হলেন তিনি। পিছনে ফেললেন সচিন তেন্ডুলকর  ও ব্রায়ান লারাকে।


কোহলি আউট হতে চালিয়ে খেলতে শুরু করেন তাঁর জায়গায় নামা হার্দিক পাণ্ড্য। মূলত তাঁর জন্যই ২৫০ রানের গণ্ডি পার করতে সক্ষম হয় ভারত। প্রায় অন্তিম লগ্নে  পাণ্ড্য আউট হওয়ার পর ধোনি শেষ ওভারে চালিয়ে খেলে কিছুটা স্বস্তি দেন দলকে।


কিন্তু, যদিও এদিন ফের তাঁর মন্থর গতির ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা হতে বাধ্য। পাশাপাশি, ভারত যতগুলি এদিন ডট-বল খেলেছে, তাও চিন্তার বিষয়। এদিন ১৬৩ বলে রান নেয়নি ভারত। আফগানিস্তান ম্যাচের বিরুদ্ধে এই সংখ্যা ছিল ১৫২।


ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে তিনটি উইকেট দখল করেন কেমার রোচ। দুটি করে উইকেট নেন শেল্ডন কটরেল ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।


আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যে দল খেলেছিল, সেটা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত। ফলে এই মাঠ ও পিচের সঙ্গে পরিচিত বিরাটরা। তাঁরা আজ জিতে সেমিফাইনালে নিজেদের জায়গা পাকা করতে চাইছেন। চলতি বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল ভারত। আজও অপরাজিত থাকাই ভারতের লক্ষ্য।


ভারতীয় দল- রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, বিজয় শঙ্কর, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, কেদার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য, মহম্মদ শামি, কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহল ও জসপ্রীত বুমরাহ।


ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল- ক্রিস গেইল, সুনীল অ্যামব্রিস, শাই হোপ, নিকোলাস পুরান, শিমরন হেটমায়ার, জেসন হোল্ডার, কার্লোস ব্রেথওয়েট, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, কেমার রোচ, শেলডন কট্রেল ও ওশানে টমাস।