কলকাতা: মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য ভারতের টেস্ট দল ঘোষণা করেছেন নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা (Chetan Sharma)। যে দলে রাখা হয়নি তাঁকে। কিন্তু জানানো হয়েছে যে, রঞ্জি ট্রফিতে ভাল খেললেই ফের সুযোগ মিলতে পারে জাতীয় দলে। কিন্তু তিনি, ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha) তো রঞ্জি খেলছেনই না! এবিপি লাইভ যোগাযোগ করতেই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস করলেন বাংলার উইকেটকিপার। দু'মাস আগেই যে তাঁকে দেওয়া হয়েছে অবসরের পরামর্শ! এবং দিয়েছেন খোদ রাহুল দ্রাবিড়! সেই থেকে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ করলেন। বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে জানালেন, কীভাবে তাঁকে জাতীয় দলের নীল নকশা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
প্রশ্ন: প্রধান নির্বাচক চেতন শর্মা বলছেন, আপনাদের জানানো হয়েছে রঞ্জি খেলে নিজেদের নতুন করে প্রমাণ করার কথা। আপনি কেন রঞ্জি খেলছেন না, সে প্রশ্নের উত্তর সিএবি দিতে পারবে বলেও মন্তব্য করেছেন...
ঋদ্ধিমান সাহা: উনি (পড়ুন চেতন শর্মা) যখন আমাকে ফোন করেছিলেন, তখন কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলেছিলেন। তার আগেই অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় রাহুল ভাই আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল। ফেরার পর ফোন করে প্রায় একই কথা বলেছিলেন নির্বাচক প্রধান।
প্রশ্ন: ফোন করে কী বলেছিলেন নির্বাচক প্রধান?
ঋদ্ধিমান: রাহুল ভাই যা বলেছিলেন, সেই একই কথা। কেপ টাউনে ১৪ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তৃতীয় টেস্ট শেষ হওয়ার পর হোটেলে ফিরতেই রাহুল ভাই নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি ভেবেছিলাম হয়তো উনি আমাকে খেলাতে পারেননি সেটাই বলবেন। কিন্তু আমি ঘরে ঢোকার পরই উনি বলেছিলেন, ঋদ্ধি, একটা কথা বলব। কিন্তু কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না। কিছুদিন ধরেই নির্বাচরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট তোমার জায়গায় নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছে। তুমি যদি শ্রীলঙ্কা সিরিজে সুযোগ না পাও চমকে যেও না। আমি জানতে চাই, কেন? আমার পারফরম্যান্স, নাকি বয়স হয়ে গিয়েছে তাই? উনি বলেন, না, তোমার পারফরম্যান্স আর ফিটনেস কোনও ব্যাপার নয়। আমি জানতে চাই, তাহলে তো বয়স? রাহুল ভাই বলেন, না, সেটা ঠিক নয়। আমরা নতুন মুখ দেখতে চাই। কারণ তুমি অনেকদিন হয়ে গিয়েছে খেলছো। ৪০ টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। এখন দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসাবে রয়েছো। সুযোগ আসছে না। সেক্ষেত্রে নতুন কাউকে গ্রুমিং করে দেখতেই পারি। তাই তুমি শ্রীলঙ্কা সিরিজে সুযোগ না পেলে অবাক হয়ে যেও না। আর তার মধ্যে অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নিলে নিতে পারো।
প্রশ্ন: অন্য কোনও সিদ্ধান্ত মানে কি অবসর?
ঋদ্ধিমান: হ্যাঁ। মনে হয় না এটা ওঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সকলে মিলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচক কমিটি, বোর্ড প্রেসিডেন্ট (পড়ুন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) সকলেই নিশ্চয়ই জানতেন। রাহুল ভাইয়ের মারফত বলা হয়েছে। তারপর রঞ্জি ট্রফির দল নির্বাচনের দু'দিন আগে চেতন শর্মা ফোন করেন। জানতে চান, কেমন আছিস। তুই রঞ্জি ট্রফি খেলছিস? শুনে আমার মনে হয়েছিল যে, ওঁকে কেউ বলেছেন ঋদ্ধিকে তো বলেই দেওয়া হয়েছে। ওকে রঞ্জি ট্রফি খেলতে বোলো। আমি জানাই যে, রঞ্জি তো দেরি আছে। তারপরই প্রধান নির্বাচক বলেন যে, আমরা অনেকদিন ধরেই তোমার বদলে অন্য কাউকে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। শ্রীলঙ্কা সিরিজে তুমি থাকছো না। আমি পাল্টা জানতে চাই, শ্রীলঙ্কা সিরিজে থাকছি না কিন্তু তারপর ইংল্যান্ড সিরিজে তো থাকছি? বা তারপরে? তখন উনি বলেন, এখন থেকে তোমাকে আর জাতীয় দলের জন্য ভাবা হবে না। তারপর বলেন, তোমার রঞ্জি ট্রফি খেলা উচিত। এ-ও বলেন যে, পুরোটা তোমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি আবার জানতে চাই, শুধু এই সিরিজের জন্য নাকি বরাবরের মতো? উনি জানান, বরাবরের মতোই। এখন তো অন্য কথা বলছেন। আমাদের ফোনালাপের রেকর্ডিং বার করলে জানা যাবে কে ঠিক বলছে।
প্রশ্ন: এ তো চমকে ওঠার মতোই...
ঋদ্ধিমান: তার থেকেও চমকে ওঠার মতো হচ্ছে যে, কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬১ রানের ইনিংস খেলার পর দাদি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছিল, আমি যতদিন আছি তোকে চিন্তাভাবনা করতে হবে না। আমি আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কানপুরে রান না করলে হয়তো বাদ পড়ে যেতাম। কিন্তু আমি রান করি। দাদি মেসেজ পাঠাল। আর তার পরের সিরিজেই চিরতরে ছেঁটে ফেলা হল। সেটাই বিস্ময়কর লাগছে।
প্রশ্ন: এই ঘটনার পর কি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে?
ঋদ্ধিমান: না। মহারাজদার সঙ্গে আমার কথা হয় না। না আমি মহারাজদার ঘনিষ্ঠ, না মহারাজদা আমার। অনেকেই আছে ফোন করে জানতে চায় কেমন আছো। আমি বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন ছাড়া কারও সঙ্গেই সেটা করি না।
প্রশ্ন: এত বছর দেশের হয়ে খেলার পর কি আরও সম্মান আপনার প্রাপ্য ছিল না?
ঋদ্ধিমান: প্রাপ্য ছিল কি না, সেটা কে নির্ধারণ করবে?
প্রশ্ন: কেন? সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা। আপনি তো জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন?
ঋদ্ধিমান: ক্রিকেটপ্রেমীরা যা মনে করেন, শীর্ষ পদাধিকারীরা হয়তো সেটা মানেন না। তাই এসব হয়েছে। আমি ছোট থেকে কখনও নির্বাচন নিয়ে কথা বলিনি। সে যে দলেই হোক। আমি যখন দেশের হয়ে খেলেছি, নিজের পারফরম্যান্স ছেড়ে দিয়ে দলের কথা ভেবে খেলেছি। সেই কারণে আমার পরিসংখ্যান হয়তো অন্যদের মতো নয়। শুধু নিজেরটা ভাবলে আরও ভাল রেকর্ড থাকতো। আমাকে বলার থাকলে নিউজিল্যান্ড সিরিজের পরই বলতে পারত। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতাম না। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে তো আমাকে রাহুল ভাই নিয়ে গিয়েছিলেন অভিজ্ঞতার জন্য। আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল যখন, আগে জানাতে পারত।
প্রশ্ন: বিরাট কোহলির কী প্রতিক্রিয়া?
ঋদ্ধিমান: বিরাট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরই তো আমাকে ডেকে এই কথা বলা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলেনি। রাহুল ভাইয়ের সিদ্ধান্ত তো ব্যক্তিগত নয়। নিশ্চয়ই অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। আমি দলের শৃঙ্খলা ভাঙতে চাইনি বলে মুখ খুলিনি। কিন্তু সাংবাদিক বৈঠকে অন্য কথা বলা হল।
প্রশ্ন: প্রধান নির্বাচক বলছেন, বয়সটা ফ্যাক্টর নয়...
ঋদ্ধিমান: পুরোটাই হয়তো আমার দিকে ঠেলা হচ্ছে। কেউ অবসর নেবে কি নেবে না, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাকে বলা হয়েছে নতুন কাউকে নিলে তাকে না খেলিয়ে বাদ দিতে পারব না। পুরো ঘটনাটাই পরস্পরবিরোধী।
প্রশ্ন: এরপর নিজের কেরিয়ার নিয়ে কী ভাবছেন?
ঋদ্ধিমান: পরের মরসুমে রঞ্জি ট্রফির আগে মানসিকভাবে কীরকম থাকি, তার ওপর নির্ভর করছে।
প্রশ্ন: এবারের রঞ্জিতে বাংলা নক আউটে উঠলে?
ঋদ্ধিমান: মানসিকভাবে কীরকম জায়গায় থাকি দেখতে হবে। পরিবারের জন্য সময় দিতে চাই। আমাকে গোটা বছর জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হয়। সামনে আইপিএলে আবার জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হবে। সব ভেবে সিদ্ধান্ত নেব।