সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আর পাঁচটা কিশোরের মতোই ছিলেন তিনি। হাসিখুশি। ডানপিটে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো করে বেড়াতেন। কিন্তু যোগেশ কাঠুনিয়া (Yogesh Kathuniya) স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, ভবিষ্যতে সব কেমন ওলট পালট হয়ে যেতে চলেছে।


বাবা-মায়ের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। বৈষ্ণোদেবীর মন্দির থেকে ফেরার পরই যেন দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন যোগেশ। চিকিৎসকেরা দেখে জানান, স্নায়ুর বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর।


শুরু হয় যোগেশের নতুন লড়াই। সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে শুরু করেন ডিসকাস থ্রো। গত বছর টোকিও প্যারালিম্পিক্সে ডিসকাস থ্রোয়ে গোটা দেশকে গর্বের মুহূর্ত উপহার দিয়েছিলেন যোগেশ। জিতে নিয়েছিলেন রুপোর পদক।


কেমন ছিল শুরুর সেই লড়াই? এবিপি লাইভকে ভারতের তারকা প্যারা অ্যাথলিট বলছিলেন, '২০০৬ সালে পরিবারের সঙ্গে বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফেরার পরই স্নায়ুর জটিল সমস্যা ধরা পড়ে। পরের ২ বছর বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলাম। স্কুলে যেতে পারতাম না। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, আর কোনও দিন ঠিক হবে না। বাড়িতে ফিজিওথেরাপি চলত। মা নিজেই ফিজিওথেরাপি করাত। ধীরে ধীরে হাঁটাচলা শুরু করি। কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা পুরোপুরি ফেরেনি। তবে তারপর দেখতে দেখতে ১৬ বছর কেটে গিয়েছে। এখন আর মনে করি না সেসব ঘটনা।'


ডিসকাস শুরু কীভাবে? যোগেশ বলছেন, '২০১৭ সালে তখন কলেজে পড়ি। আমার সিনিয়র সচিন যাদব আমাকে বলেছিল ডিসকাস থ্রোয়ে নামার কথা। বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য যে প্যারা স্পোর্টস হয়, সেটা সচিনই বলেছিল। ওর সঙ্গে গিয়ে স্টেডিয়ামে গিয়ে প্যারা স্পোর্টস দেখি। সেদিন স্টেডিয়ামে ডিসকাস থ্রো-ই দেখেছিলাম।'


বাবা জ্ঞানচন্দ কাঠুনিয়া সেনাবাহিনীতে ছিলেন। বাবার থেকেই কি লড়াকু মানসিকতা পাওয়া? যোগেশ বলছেন, 'বাবাকে দেখেছি ভোর চারটের সময় পিটি করাতে যেত। বাবাও বাস্কেটবল, ভলিবল খেলত। আমার অসুস্থতা দেখে প্রথম দিকে বাবা ভয় পেয়েছিল। পরে অবশ্য আমাকে উৎসাহ দিতে শুরু করে। সময় পেলেই আমার ডিসকাস থ্রো দেখত, আলোচনা করত।'


শারীরিক অক্ষমতার জন্য হেনস্থার শিকারও হয়েছেন। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা এখনও যন্ত্রণাবিদ্ধ করে যোগেশকে। বলছিলেন, 'স্কুলে পড়ার সময় সকলে রাগাত। পড়শিরা কটূক্তি করত। মাকে গিয়ে বলতাম। কান্নাকাটি করতাম। পরে উপেক্ষা করতাম। বন্ধুরা পাশে ছিল। তির্যক মন্তব্য নিয়ে চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিয়েছিলাম।'


যোগেশ যোগ করলেন, 'প্যারালিম্পিক্সে পদক জয়ের অভিজ্ঞতা ভুলতে পারব না। আমি ২৯ অগাস্ট সারারাত ঘুমোতে পারিনি। সকাল ৯টায় আমার ইভেন্ট ছিল। ছটফট করছিলাম। পদক জয়ের পরেও বেশ কয়েক রাত ঘুমোতে পারিনি।'


দেশের উঠতি অ্যাথলিটদের কী পরামর্শ দেবেন? যোগেশ বলছেন, 'তরুণদের বলব, খেলা ভালবাসলে যে কোনও স্পোর্টসই হোক না কেন, পরিশ্রম করো। সাফল্যের কথা ভেবো না। সময় লাগে। রাতারাতি সাফল্য আসে না। কিন্তু সাধনা আর নিষ্ঠা থাকলে সাফল্য আসবেই।'


সামনেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন যোগেশ। বলছেন, 'আমার লক্ষ্য হল ডিসকাস থ্রোয়ে ৫০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করা। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।'


আরও পড়ুন: থামল 'মিস্টার আইপিএল'-এর বর্ণময় কেরিয়ার, সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন সুরেশ রায়না