5G Benefits: 90 এর দশক থেকে টানা মোবাইল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে নতুন যোগাযোগ বিপ্লবের সাক্ষী থেকেছে দেশ। প্রতি দশকে নতুন উদ্ভাবন বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। 2G, 3G-র পর এসেছে 4G প্রযুক্তি। যার ওপর ভিত্তি করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় স্মার্টফোন। 4G প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা ভিডিও কলের সুবিধা পেয়েছি। পাশাপাশি বেড়েছে ইন্টারনেটের গতি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডেটা খরচ শুরু হয় ভারতে। 2022 সালে প্রবেশ করার পর টেলিকম বিপ্লবের নতুন যুগে পা রাখতে চলেছে দেশ। কারণ, এবার দেশে আসতে চলেছে 5G প্রযুক্তি। যা বদলে দেবে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দুনিয়া।


5G পরীক্ষা শুরু করেছে এয়ারটেল
ভারত দ্রুত 5G প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভারতে 5G প্রযুক্তির পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। দেশে সাফল্যের মুখ দেখেছে এই প্রযুক্তি। দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম পরিষেবা সংস্থা ভারতী এয়ারটেল  প্রথমবার হায়দরাবাদে 5G নেটওয়ার্কের সফল পরীক্ষা করেছে। 5G প্রযুক্তির ওপর আরও পরীক্ষা চালাচ্ছে কোম্পানি। 5G প্রযুক্তি পরীক্ষার সময় হায়দরাবাদে মাত্র 30 সেকেন্ডে একটি 1GB ফাইল ডাউনলোড করা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি Nokia-র সঙ্গে কলকাতা শহরের বাইরে 700 MHz স্পেকট্রাম ব্যান্ডে প্রথম 5G ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন করেছে 
এয়ারটেল। যা দেশের গ্রামীণ এলাকায় প্রথম 5G ট্রায়াল।


বর্তমানে দেশের 5G প্রযুক্তির সমাধানের ক্ষেত্রে বিশ্বের নানা প্রযুক্তি কোম্পানি ও উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কাজ করতে চলেছে ভারতী এয়ারটেল । দেশের ব্যবসায়িক জগতে যা একটি বড় উদ্যোগ। এয়ারটেলের এই উদ্যোগ কোম্পানিগুলোর জন্য অপার সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। পাশাপাশি বাড়বে প্রোডাকশন। ভারতকে হাইপার-কানেকটেড বিশ্বের ক্যাটাগরিতে জুড়তে Intel, Qualcomm, CISCO,Accenture, Ericsson-এর মতো সংস্থাগুলির সাথে কাজ করছে এয়ারটেল। কোম্পানির দাবি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে 5G গতি পেতে সক্ষম হবে দেশবাসী।


ইন্টারনেটের গতি হবে 4G-র থেকে 10 গুণ বেশি


সারা দেশে 5G চালু হওয়ার পর বদলে যাবে মোবাইল টেলিফোনির দুনিয়া। 4G ইন্টারনেটেই রয়েছে দুর্দান্ত গতি, তাহলে 5G-র গতি কী হবে একবার ভেবে দেখুন। অনুমান করা হচ্ছে, 5G-র গতি 4G থেকে 10 গুণ বেশি হবে। আশা করা যায়, 5G আসার পরে বিজনেসহাউসগুলির কাজের গতি আরও বাড়বে। এর থেকে সুবিধা পাবে ই-মেডিসিন, শিক্ষা, কৃষিকাজের মতো ক্ষেত্রগুলো। এগুলি ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। 5G পরিষেবা চালু হলে ডিজিটাল বিপ্লবে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। একই সময়ে ইন্টারনেট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইওটি ও রোবোটিক্সের প্রযুক্তিও এগোবে। এতে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। ই-গভর্নেন্সের প্রসার ঘটবে।


5G আসার পর ভারতীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। ই-কমার্স, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দোকানদার, স্কুল, কলেজ এমনকী কৃষকরাও এর পূর্ণ সুবিধা নিতে পারবে। করোনার সময়ে ইন্টারনেটের ওপর সবার নির্ভরতা বেড়েছে। সেই কথা মাথায় রাখলে 5G প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও সহজ করতে সাহায্য করবে। 5G প্রযুক্তি স্বাস্থ্য পরিষেবা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ক্লাউড গেমিংয়ের জন্য নতুন পথ খুলে দেবে। এর মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ির সম্ভাবনা পূরণ হবে।


5g নেটওয়ার্ক আসলে কী ?


আগামী সময় ফিফথ জেনারেশন বা 5G-র। এই প্রযুক্তি 4G নেটওয়ার্কের তুলনায় অনেক দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। 4G নেটওয়ার্কে যেখানে ইন্টারনেটের গড় গতি 45 Mbps। সেখানে 5G নেটওয়ার্কে এই গতি বেড়ে 1000 Mbps হবে। যার ফলে ইন্টারনেটের জগৎ পুরোপুরি বদলে যাবে। এর অর্থ 4G-র থেকে 10 থেকে 20 গুণ দ্রুত ডেটা ডাউনলোডের গতি হবে 5G-র ।যেখানে 4G নেটওয়ার্কে একটি সিনেমা ডাউনলোড করতে ছয় মিনিট সময় নেয়, সেখানে 5G নেটওয়ার্কে এটি ডাউনলোড করতে 20 সেকেন্ড সময় লাগবে। 


সরকারি প্যানেলের রিপোর্ট বলছে, 5G 2035 সালের মধ্যে ভারতে এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক পরিসর বৃদ্ধি করবে। এরিকসনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে 5G 2026 সালের মধ্যে $27 বিলিয়নের বেশি রেভিনিউ দেবে। এরিকসনের আরেকটি প্রতিবেদন বলছে, 2026 সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী 3.5 বিলিয়ন 5G সংযোগ থাকবে, যেখানে ভারতে এই কানেকশনের সংখ্যা হবে 350 মিলিয়ন।


কোন এলাকা 5G দ্বারা প্রভাবিত হবে ?


যেকোনও জায়গা থেকে কাজ করুন: করোনার সংক্রমণের পর থেকে এখনও অনেক কোম্পানি কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ দিচ্ছে। 5G প্রযুক্তি আসার পর এই পরিষেবার প্রসার ঘটবে। হাইব্রিড কাজের সংস্কৃতি আরও বাড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (AI)-এর সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনেক কাজ করা সম্ভব হবে। যার ফলে কর্মীরা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হবেন।


টেলিহেলথ: 5জি প্রযুক্তি আসার পর দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও 5G-র সাহায্যে রোগীদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বড় ধরনের উন্নতি হবে। রোবোটিক সার্জারি করা যাবে সহজেই। 5G-র আসার সঙ্গে সঙ্গে টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে। 


সমীক্ষা বলছে, টেলিমেডিসিন বাজার 2017 থেকে 2023 সালের মধ্যে 16.5 শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। তবে 5G আসার পরে এর আরও দ্রুত প্রসার ঘটবে। গ্রামীণ এলাকায় ভিডিওর মাধ্যমে বড় বড় চিকিৎসকরা সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীদের চিকিৎসা করতে পারবেন। এই প্রযুক্তি সকলকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে সাহায্য করবে। অ্যাম্বুল্যান্সের রোগীকে হাসপাতালে আনার সময় বাঁচানো যাবে। আপনি যার কাছ থেকে অপারেশন করাতে চান সেই ডাক্তার পাওয়া না গেলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার 5G-র মাধ্যমে আপনার চিকিৎসা করতে পারবেন।


রিমোট কন্ট্রোল কার: 5G প্রযুক্তি আসার পর যেখানে চালকবিহীন গাড়ি দেখতে পাওয়া যাবে। যেকোনও রেস্তোরাঁয় বসেই চালকবিহীন গাড়ি কল করতে পারবেন আপনি।


স্মার্ট সিটি: 5G আসার পরে শহরগুলি আরও স্মার্ট হয়ে উঠবে। 5G প্রযুক্তি শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, শহরগুলিকে পরিষ্কার ও নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।


ক্লাউড গেমিং: Airtel ভারতী এয়ারটেল সফলভাবে 5G ইন্টারনেটে দেশের প্রথম ক্লাউড-গেমিং সেশন পরিচালনা করেছে। গুরগাঁওয়ের মানেসারে গেমিং সেশনের আয়োজন করা হয়েছিল। ক্লাউড গেমিং 5G-র জন্য সবচেয়ে বড় ব্যবহারের ক্ষেত্র হতে পারে। ক্লাউড গেমিং ইউজারকে কোনও গেমিং হার্ডওয়্যারে ইনভেস্ট না করেই রিয়েল-টাইমে গেম উপভোগ করতে দেয়। ভারতী এয়ারটেল জানিয়েছে, বর্তমানে ভারতে অনলাইন গেমারদের সংখ্যা 43.6 মিলিয়ন। এই সংখ্যা 2022 সালের মধ্যে 51 কোটি হবে।


বিনোদন: 4G আসার পর দেশে বিনোদনের দুনিয়ায় পরিবর্তন ঘটেছে। OTT প্ল্যাটফর্ম দেখতে পেয়েছি আমরা। মাল্টিপ্লেক্স ও সিনেমা হল ছেড়ে ঘরে বসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ফিল্ম থেকে ওয়েব সিরিজ দেখতে শুরু করেছে দর্শক। 5G আসার পর বিনোদনের ক্ষেত্রে কত বড় পরিবর্তন হবে তা একবার ভাবুন। দ্রুত গতির কারণে অনলাইন কনটেন্টের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটবে।


শিক্ষা: করোনাকালে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে শিক্ষায়। স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। সেই পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করেছে। দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের ফলেই এই কাজ সম্ভব হয়েছে। 5G প্রযুক্তি আসার পরে শিক্ষার্থীদের আরও ভাল ও সহজ উপায়ে শিক্ষিত করা যেতে পারে। যারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত সেইসব শিক্ষার্থীদের সস্তায় সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।


ভারতী এয়ারটেল 5G পরিষেবা চালু করার জন্য প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই দেশের অনেক জায়গায় লাইভ ডেমনস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, শীঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে এই পরিষেবা।  মোবাইল ব্যবহারকারীরা 5G পরিষেবা পাবেন। যার পরে বদলে যাবে মানুষের জীবনধারা।