নয়াদিল্লি: দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ান সম্পন্ন। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকল (MIRV) প্রযুক্ত ব্যবহার করা হয়েছে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রে, ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এই ক্ষেপণাস্ত্র যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। (Agni 5 MIRV)
এই প্রথম কোনও ক্ষেপণাস্ত্রে MIRV প্রযুক্তি ব্যবহার করল ভারত। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একসঙ্গে একাধিক জায়গায় ওয়ারহেড, পরমাণু বোমা পর্যন্ত ছোড়া যায়। এমনকি শত্রুপক্ষের একাধিক ঘাঁটির মধ্যে ব্যবধান যদি কয়েকশো কিলোমিটারও হয়, সেক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, একই সময়ে সবক'টিতে হামলা চালানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটির গতিবেগ হবে পৃথক, তবে নির্ভুল ভাবে লক্ষ্যভেদ করবে। আবার একই জায়গায় কয়েক মিনিট অন্তর অন্তর ওয়ারহেড নিক্ষেপ করাও সম্ভব। শুধু তাই নয়, শত্রু শিবিরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী যে প্রযুক্তি রয়েছে, তাকে ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানতেও সক্ষম এই MIRV প্রযুক্তি। (Agni 5 MIRV Explained)
এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, সেই অনুযায়ী-
- MIRV প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি মাত্র ক্ষেপণাস্ত্র ছ'টি পরমাণু শক্তিসম্পন্ন ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। এই ছ'টি ওয়ারহেড, ছ'টি পৃথক লক্ষ্যমাত্রা ভেদ করতে সক্ষম।
- অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৫০০০ কিলোমিটার, অর্থাৎ প্রায় গোটা এশিয়া, এমনকি চিনের উত্তর অংশ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। এমনকি ইউরোপের কিছু জায়গাতেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আঘাত হানা সম্ভব। দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- এর আগেও, অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রকে নিয়ে একাধিক পরীক্ষা হয়েছে। তবে এই প্রথম MIRV প্রযুক্তি-সহ উড়ানের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হল।
- দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রে এভিয়নিক্স প্রযুক্তি এবং হাই-অ্যাকিউরেসি সেন্সর রয়েছে, যা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লক্ষ্যে আঘাত হানার সহায়ক।
- অগ্নি-৫ একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও (ICBM). ছোড়ার পর প্রথমে বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে মহাকাশে প্রবেশ করে আবারও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যে আঘাত হানে।
আরও পড়ুন: Lok Sabha Polls 2024: 'ঐতিহাসিক..', দেশজুড়ে সিএএ কার্যকর হতেই ট্যুইট শুভেন্দুর, বললেন..
MIRV প্রযুক্তি নির্ভর অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৫০০০ কিলমিটার। অর্থাৎ ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বেও নির্ভুল আঘাত হানা সম্ভব। পাশাপাশি ভারতের হাতে রয়েছে অগ্নি-১, অগ্নি-২, অগ্নি-৩ এবং অগ্নি-৪ ক্ষেপণাস্ত্রও। সেগুলির পাল্লা ৭০০ থেকে ৩৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে। খুব শীঘ্র অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রও হাতে উঠতে চলেছে ভারতের, যার প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ান সফল হল।
DRDO-র তরফে MIRV প্রযুক্তি নির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্পের নাম রাখা হয় 'দিব্যাস্ত্র'। সফল পরীক্ষার পর সোমবারই DRDO-র বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'দিব্যাস্ত্র অভিযানের আওতায় দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, MIRV প্রযুক্তি নির্ভর অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ান সফল। DRDO-র বিজ্ঞানীদের নিয়ে গর্ববোধ করছি'। এই প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন এক মহিলা বিজ্ঞানীও। পাশাপাশি, অভিযানে বেশ কয়েক জন মহিলা বিজ্ঞানী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলে জানা গিয়েছে।
মহাকাশ থেকে বায়ুমণ্ডলে ফিরে এসে হানা এই পদ্ধতিতে।
DRDO-কে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। তিনি লেখেন, 'ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে কৌশলগত ভাবে ভারতের জন্য মাইলফলক তৈরি করল দিব্যাস্ত্র অভিযানের অন্তর্ভুক্ত অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র। এই কৃতিত্ব অর্জনের জন্য DRDO-কে অভিনন্দন। আমি নিশ্চিত, আত্মনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি, দক্ষতার শীর্ষে পৌঁছবে তারা'।
ছয়ের দশকে MIRV প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষেপণান্ত্র তৈরির কাজ শুরু করে আমেরিকা, ব্রিটেনস, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং চিনের মতো দেশ। রাশিয়ার কাছে যে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, সেটি একসঙ্গে ১৬টি ওয়ারহেড নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এই মুহূর্তে ইজরায়েল MIRV প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। MIRV প্রযুক্তি নির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে পাকিস্তানও। গত বছর অক্টোবরে দ্বিতীয় পরীক্ষামূলক উড়ান সফল হয় তাদের।