কলকাতা : ভক্তিতেই শক্তি। যুগযুগ ধরে শ্রুতিতে, বিশ্বাসে স্মরণীয় এই কথা। শিবরাত্রি সামনে যখন, যথা বিহিত পূজার নিয়ম পালনের সঙ্গে ভক্তিভরে দেবাদিদেবকে ডাকলে তিনি সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন না, এই বিশ্বাস ভক্তদের। তাই তো, দেশের বিখ্যাত সব শৈবতীর্থে, শিবালয়ে বিশেষ এই দিনে উপচে পড়ে ভিড়। আকাশ-বাতাস মুখরিত হয় ডম্বরু নিনাদে। রীতি-রেওয়াজ মেনে, উপবাস করে ভোলে বাবার কৃপাপ্রার্থনায় মগ্ন হন ভক্তরা। তবে, বাড়িতে বসেও যথাসাধ্য উপাচারে মহাদেবের আরাধনা থেমে থাকে না এদিন। স্ব-স্ব ক্ষমতা অনুযায়ী, স-মন্ত্রে পূজিত হন ঈশ্বর। শিবরাত্রির সেই পুণ্যতিথিতে শিবপূজা কোন বিধি মেনে করা হবে তার জন্য রয়েছে অনেক পুঁথিপত্র। পুরোহিত-কণ্ঠের মন্ত্রোচারণে যেমন এই পূজা করে থাকেন অনেকে, নিজের মতো করেও শিবরাত্রি পালন করেন অনেকে। শিবরাত্রিতে মূলত চারপ্রহরের পূজার মন্ত্রও অনেকের জানা। যা মেনে পুরোহিত সহযোগে বাড়িতে পূজা করেন অনেক ভক্ত।        


নিত্য পূজা বিধি অনুযায়ী, শিবরাত্রি পূজার দিনের শুরুতেই পবিত্র মনে ও শরীরে স্নানাদি সেরে স্বস্তিবাচন ও সঙ্কল্প করে নিতে হয়। তিল, কুশ, হরিতকী, ফুল সহযোগে সঙ্কল্প করতে হয় নিম্নলিখিত মন্ত্রে। 


বিষ্ণুরোঁ তৎসৎ, অদ্য ফাল্গুনে মাসি  কৃষ্ণপক্ষে চতুর্দ্দশ্যাং তিথৌ (বা ত্রয়োদশ্যাং তিথাবারভ্য) অমুকগোত্রঃ শ্রী অম্বুকঃ শ্রী শিবপ্রীতিকাম শিবরাত্রি ব্রতমহং করিষ্যে। পরে নিম্নলিখিত মন্ত্রে জোড়হাতে পাঠ করতে হবে - 


ওঁ (নম) শিবরাত্রিব্রতং হ্যেতৎ করিষ্যেহহং মহাফলম। 
নির্বিঘ্নমস্তু মে চাত্র তৎপ্রসাদাজ্জগৎপতে।।
চতুর্দ্দশ্যাং নিরাহার ভূত্বা শম্ভো পরেহহনি।
ভোক্ষ্যেহহং ভুক্তিমুক্তর্থ্যং শরণং মে ভবেশ্বর।।


নিজের সাধ্যমত পাথরের অথবা মাটির শিবলিঙ্গে পূজা করেন ভক্তরা। কেউ কেউ রাতের চারপ্রহরে চারবার পূজা করেন। চারপ্রহরে চারবার পুজো করতে কেউ না পারলে প্রথম প্রহরেই পর পর চারবার শিবপূজা করার নিয়মও রয়েছে। তবে প্রতিবারই নতুন নতুন শিবমূর্তি গড়ে নিতে হয়। প্রত্যেক প্রহরেই আলাদা আলাদা দ্রব্য দ্বারা স্নান ও অর্ঘ্যদানের সময় আলাদা মন্ত্র পড়তে হয়। পরে শিবপূজা করতে হবে। শিবপূজার নিয়মও সাধারণ শিবপূজার মতই। স্নানের পরে অর্ঘ্যদানের নিয়ম রয়েছে। পাথরের শিব ব্যতীত অন্য (মাটি দ্বারা নির্মিত) শিব বিসর্জনের নিয়ম। 


প্রথম প্রহর


শিবরাত্রি ব্রতের প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে স্নান করাতে হবে শিবলিঙ্গকে। মন্ত্র - ইদং স্নানীয়দুগ্ধং ওঁ হৌঁ ঈশানায় নমঃ। এরপরে অর্ঘ্য নিয়ে প্রদান করতে হয়। নিম্নলিখিত মন্ত্রে -  ওঁ শিবরাত্রিব্রতং দেব পূজাজপপরায়ণঃ। করোমি বিধিবদ্দত্তং গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বর। ওঁ নম শিবায় নমঃ এই মন্ত্র পাঠ করে অর্ঘ্য দিতে হবে। 


দ্বিতীয় প্রহর


শিবরাত্রি ব্রতের দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করানোর নিয়ম। ইদং স্নানীয়ং দধি ওঁ হৌঁ অঘোরায় নমঃ। এই মন্ত্রে স্নান করিয়ে অর্ঘ্য দিতে হবে এই মন্ত্রে - ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্ব্বপাপহরায় চ। শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং প্রসীদ উময়া সহ। এরপরে ওঁ নম শিবায় নমঃ মন্ত্রে অর্ঘ্য শিবলিঙ্গের উপরে দিতে হবে। 


তৃতীয় প্রহর 


শিবরাত্রি ব্রতের তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করাতে হয়। স্নান করানোর সময় পাঠ করতে হয় - ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ওঁ হৌঁ বামদেবায় নমঃ। স্নান করানোর পরে আগের মতো অর্ঘ্য শিবলিঙ্গের উপর দিতে হবে। অর্ঘ্যদান মন্ত্র - ওঁ দুঃখদারিদ্র্য-শোকেন দগ্ধোহহং পার্বতীশ্বর। শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং, উমাকান্ত গৃহাণ মে।


চতুর্থ প্রহর


শিবরাত্রি ব্রতের চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করানোর নিয়ম রয়েছে। ইদং স্নানীয়ং মধু হৌঁ সদ্যোজাতায় নম। এই মন্ত্রে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে অর্ঘ্য দিতে হবে। অর্ঘ্য দেওয়ার সময় পাঠ করতে হবে - ওঁ ময়া কৃতান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্কর। শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যমুমাকান্ত গৃহাণ মে। 


পরে চারপ্রহরের যথাবিহিত পূজা ভক্তিভরে করার পর মহাদেবকে স্মরণ করে জোড়হাতে নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠের নিয়ম। 


ওঁ অবিঘ্নেন ব্রতং দেব ত্বৎপ্রসাদাৎ সমর্পিতম। 
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলোক্যাধিপতে হর।।
যন্মায়াদ্য় কৃতং পুণ্যং তদ্রুদস্য নিবেদিতম। 
তৎ প্রসাদান্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমাপিতম। 
প্রসন্ন ভবো মে শ্রীমন মদ্ভুতি প্রতিপাদ্যতাম। 
ত্বদালোকন-মাত্রেণ পবিত্রোহস্মি ন সংশয়ঃ ।।




অন্যান্য নিয়ম 


পূজা শেষ করে ব্রতকথা শুনতে হয়। তারপরে দক্ষিণা দেওয়ার রীতি রয়েছে। দক্ষিণান্ত সঙ্কল্প মন্ত্র এই রূপ - বিষ্ণুরোঁ তৎসৎ, অদ্য অমুকে মাসি  অমুকে পক্ষে অমুক তিথৌ শ্রী শিবপ্রীতিকামনয়া কৃতৈতচ্ছিবরাত্রিব্রতকর্ম্মণঃ সাঙ্গতার্থং দক্ষিণামেতং কাঞ্চনমূল্যং শ্রীবিষ্ণুদৈবতমহং শ্রীশিবায় তুভ্যং সম্প্রদদে। পরে ডানহাতে একটু জল নিয়ে ওঁ কৃতৈতৎ শিবরাত্রিব্রতমচ্ছিদ্রমস্তু এই মন্ত্রে অচ্ছিদ্রাবধারণের নিয়ম। শিবরাত্রি ব্রত শেষে অনেকে ব্রাহ্মণভোজন করান। চতুর্দশী থাকলে তারমধ্যে না হলে অমাবস্যায় শিবরাত্রির পারণেরও নিয়ম রয়েছে। 


পারণ মন্ত্র


ওঁ সংসার ক্লেশদগ্ধস্য ব্রতেনানেন শঙ্কর।


প্রসীদ সুমুখনাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।


 


ডিসক্লেইমার : এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই প্রকার কোনও ধরনের বিশ্বাস, তথ্যে এবিপি লাইভের কোনও সম্পাদকীয় মতামত নেই। কোনও তথ্য ব্যবহারিক প্রয়োগ করার আগে, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। মন্ত্র বই মানতে পারেন।  


আরও পড়ুন : শিবরাত্রিতে বেলপাতা অপর্ণেরও রয়েছে নিয়ম !