পাঠকদের মনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লেখিকা - কিন্তু এখনও হুঁশ ফেরেনি বাংলার
ফিল্মের ক্ষেত্রে উদাসীন হলেও তাঁর লেখা গৌতম ঘোষের জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ছবি শঙ্খচিল, অন্যতম চার্টটপার ওয়েবসিরিজ 'নন্দিনী' সায়ন্তনীর ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যেখানে বাংলা সাহিত্য তন্ত্র-মন্ত্র-নানাবিধ ধরাবাঁধা গোয়েন্দা গল্পে ভারাক্রান্ত সেখানে তাজা হাওয়ার প্রবেশ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই৷ এক বারো বছরের কিশোরী যখন কলম ধরেছিলেন, তখন কেউ জানত না যে ভবিষ্যতে ঠিক কী ঘটতে চলেছে৷ কিন্তু সেই বারো বছরের কিশোরীই এখন একের পর এক বাঁধা গতের ওপর আঘাত হেনে চলেছেন৷ আশ্চর্যজনকভাবে তথাকথিত অভিজাত ও সাধারণ পাঠকদের মুগ্ধতা একই সঙ্গে পেয়েছেন তিনি৷ অথচ এই লেখিকাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে স্বয়ং বাংলারই!
সায়ন্তনী পূততুন্ড--এই নামটি নিয়ে বর্তমানে জাতীয় স্তরেও লেখালেখি হচ্ছে৷ পেয়েছেন বহু সম্মাননা৷ ফিল্মের ক্ষেত্রে উদাসীন হলেও তাঁর লেখা গৌতম ঘোষের জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ছবি শঙ্খচিল, অন্যতম চার্টটপার ওয়েবসিরিজ 'নন্দিনী' সায়ন্তনীর ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছে। তিনি নিজে খুব একটা সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ না থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়া সবসময়ই তাঁকে নিয়ে সরগরম৷ কখনও তা ট্রোলিং, কখনও লেখনীর প্রশংসা৷ তাঁর সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র, অধিরাজ ব্যানার্জিকে নিয়ে নিন্দায়-প্রশংসায়, প্রেমে-ঘৃণায় উত্তাল হয়ে যান পাঠকেরা। কিন্তু কেউ কখনও ভেবেছেন যে এমনভাবে একটি কাল্পনিক চরিত্রকে মানুষের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া ঠিক কতটা সহজ কাজ? শার্লক হোমস ছাড়া অন্য গোয়েন্দা চরিত্রকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এইমাত্রায় পাঠকের অবসেশন দেখা যায়নি৷ অধিরাজ ব্যানার্জিকে নিয়ে সাম্প্রতিক যে উন্মাদনা দেখা গিয়েছে তা বিস্ময়কর!
কিন্তু এমন নয় সায়ন্তনী শুধু থ্রিলারই লেখেন৷ তাঁর প্রতিবাদী কলম কখনও শারদীয়া দেশ, আনন্দবাজার পত্রিকায়, দেশের ধারাবাহিকে জন্ম দিয়েছে নন্দিনী, শিশমহল, ভোর, একদিনের ঈশ্বরের মতো কাহিনী যা মানবমনকে ভেঙেচুরে দিতে পারে৷ একদিকে যেমন অধিরাজ সিরিজের সর্বনাশিনী, চুপি চুপি আসছে কিংবা কালরাত্রি গোয়েন্দা সাহিত্যের সংজ্ঞা পালটে দিচ্ছে, অন্যদিকে সেই একই কলমে উঠে আসছে যমপুরাণ, নক্ষত্রের আড়ালে, জলসই কিংবা দেবতার গ্রাসের মত গুরুগম্ভীর উপন্যাস। দুটি ক্ষেত্রেই এরকম সমান দক্ষতা খুব কম সাহিত্যিকই দেখাতে পেরেছেন৷ অশীতিপর পাঠিকা সবিতা মুখোপাধ্যায় জানান--'কালরাত্রি পড়ে চমকে গিয়েছি৷ সায়ন্তনীর লেখা এই আমার প্রথম পড়া৷ গোয়েন্দাগল্প বা চরিত্র এমন হতে পারে? আরও পড়তে চাইব।' অন্যদিকে 'দেবতার গ্রাস' পড়ে ষোলো বছরের ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র অর্কপ্রভ রায়ের বক্তব্য--'এই ধরনের লেখা বাংলায় লেখা হয় আগে জানতাম না৷ এখন আমি ওঁর সমস্ত বইই সংগ্রহে রেখেছি'৷
অথচ এমন একজন সাহিত্যিককে এখনও দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে৷ বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উঠে আসা একেবারেই জুনিয়র থেকে শুরু করে সিনিয়র লেখক লেখিকারা পর্যন্ত সায়ন্তনীকে ট্রোল করেন বা করান৷ তাঁর লেখা 'জলসই' নিয়ে প্রকাশ্যেই সিনিয়র লেখক লেখিকারা বিতর্কের ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন৷ যে শক্তিশালী লেখনী সব বয়সের, সবধরনের পাঠক পাঠিকাকে ক্রমাগতই আকর্ষণ করছে, তাঁকে সর্বসমক্ষে বারবার কাঠগড়ায় তুলেছেন সাহিত্যিকেরাই! কারণ জানতে চাইলে সায়ন্তনীর অর্থপূর্ণ মুচকি হাসি সমেত জবাব--' পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে বসে বেকার দুলালদা হাতে স্মার্টফোন নিয়ে কী ভাবছে, তাতে এখন সত্যিই কিছু যায় আসে না! আমি কাজ বুঝি৷'
হয়তো পরিবর্তনকে চিরদিনই ভয় পেয়ে এসেছে মানুষ৷ আর বাংলা ও বাঙালি শিল্পী বা সাহিত্যিককে চিরকালই সম্মান দিতে শিখেছে তাঁদের মৃত্যুর পর৷ তাই অন্যতম বেস্টসেলার হওয়া, নিজের রাজকীয় জাত বারবার চিনিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও বাংলার সাহিত্যজগৎ হয়তো অসূয়া ও হীনম্মন্যতার থেকেই মেনে নিতে পারছে না সায়ন্তনীকে৷ কিন্তু পাঠকদের সেদিকে বিশেষ খেয়াল নেই৷ তারা তাঁর রচনাশৈলী, শক্তিশালী লেখনীর নেশাতেই বুঁদ হতে বেশি পছন্দ করছেন৷ দেখা যাক বাঙালি সাহিত্যিকদের চিরাচরিত ট্র্যাজেডিকেও সায়ন্তনী পূততুন্ড ভাঙতে পারেন কিনা৷
ব্র্যান্ডওয়ার প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি এবিপি লাইভ, এবিপি আনন্দ ও এবিপি নেটওয়ার্ক কর্তৃক সম্পাদিত নয়
















