নয়াদিল্লি: ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করল আমেরিকা। পাশাপাশি, পেনাল্টি দিতে হবে বলেও ঘোষণা হল। বুধবার এই ঘোষণা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১ অগাস্ট থেকে এই হারে শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এই ঘোষণা করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। শুল্ক ঘোষণার পরও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। (US Tariff on India)

দ্বিতীয় বার আমেরিকার মসনদে ফেরার পরই শুল্কের পাল্টা চড়া শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। ভারতের মতো দেশকেও তিনি রেয়াত করেননি। গত ২ এপ্রিলই আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা করেন তিনি। পরে যদিও সেই ঘোষণায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। সেই থেকে বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে আলাপ-আলোচনা চলছিল। কিন্তু সমাধান যে বেরোয়নি, তা বোঝা গেল ট্রাম্পের ঘোষণায়। (Donald Trump Announces Tariff for India)

ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করে এদিন ট্রাম্প লেখেন, 'মনে রাখবেন, ভারত আমাদের বন্ধু। চড়া শুল্ক নেয় বলে ওদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য তুলনামূলক কমিয়ে দিয়েছিলাম। পৃথিবীতে ওরাই সর্বোচ্চ শুল্ক নেয়। পৃথিবীর অন্য দেশগুলির তুলনায় ওদের (ভারতের) সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করায় বাধা-বিঘ্নও রয়েছে অনেক, অর্থনৈতিক বিধি ছাড়াও কঠোর এবং বিরক্তিকর নীতি-নিয়ম আছে ওদের'।

ট্রাম্প আরও লেখেন, 'তাছাড়া সেনা সরঞ্জামের সিংহভাগই ভারত বরাবর রাশিয়ার থেকে কিনে এসেছে। চিনের পাশাপাশি, রাশিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানিও কেনে ভারত। তাও আবার সেই সময়, যখন প্রত্যেক দেশ চাইছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যালীলা চালানো বন্ধ করুক। সবকিছু মোটেই ঠিক নেই। তাই ভারতকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। পাশাপাশি, ১ অগাস্ট থেকে পেনাল্টিও দিতে হবে। আপনাদের সময়ের জন্য ধন্যবাদ। আমেরিকা আবার শ্রেষ্ঠ হোক'। আমেরিকার পণ্যের উপর চড়া শুল্ক বসানোয়, ভারতের বাজারে তাঁদের বিপুল ঘাটতি হয় বলেও দাবি করেছেন তিনি। শুল্কের পাশাপাশি পেনাল্টির ঘোষণা হলেও, কত শতাংশ পেনাল্টি দিতে হবে, তা খোলসা করেননি ট্রাম্প।

রাশিয়ার থেকে তেল কেনা নিয়ে বার বার ভারতকে সতর্ক করে আসছিল আমেরিকা। ভারত যদিও নিজের অবস্থান থেকে সরেনি। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে তেল কেনার নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক কৌশল নেই। বরং চাহিদা পূরণ করতেই তেল কেনা হচ্ছে তাদের থেকে। পাশাপাশি, ভারতকে তেল বাবদ মোটা ছাড়াও দিচ্ছিল মস্কো। সেই আপত্তি তুলে আসছিল আমেরিকা। এবার শুল্ক চাপানোর জন্য সেই কারণকেই হাতিয়ার করলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে আমেরিকার বাজারে ভারতের পাঠানো গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়া স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, রত্ন, গয়না এবং খাদ্যদ্রব্যের উপর শুল্ক চাপছে। ফার্মাসিউটিক্যাল সামগ্রী, সেমিকন্ডাক্টর এবং কিছু খনিজকে আপাতত এর বাইরে রাখা হয়েছে। টাটা মোটর্স এবং ভারত ফর্জের যে বাজার গড়ে উঠেছে আমেরিকায়, তা জোর ধাক্কা খেতে পারে। ভারতে Apple-এর সামগ্রী অ্যাসেম্বল করে যে সংস্থাগুলি, তারাও জিনিসপত্রের দাম কমাতে বাধ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গয়না ব্যবসায়ীদের বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা।