নয়াদিল্লি: ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে দেশকে পরিণত করার মাধ্যমে নতুন ভারতের স্বপ্নপূরণ করতে বিনিয়োগ ও খরচবৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় মোদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে। কিন্তু, বিশ্বে প্রতিকূল পরিস্থিতি ও ঘরে আর্থিক মন্দার জেরে ফান্ড মোবিলাইজিং বা বরাদ্দ একত্রিত করাটা কেন্দ্রের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়।
গতবছরই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সীতারমন। প্রথম বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ২০১৪ সালে যখন বিজেপি সরকার গঠন হয়েছিল, তখন ভারত ছিল ১.৮৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতি। ফলে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারি। সেই ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।
গত বছরের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১০০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ অনুমান করা হয়েছিল পরিকাঠামো গঠনে। এর ফলে, দেশে উৎপাদন শিল্পে জোয়ার আসত, রফতানি বৃদ্ধি পেত ও একইসঙ্গে কর্মসংস্থানও হত।
পাশাপাশি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং অনাবাসী ভারতীয়দের বিনিয়োগের রাস্তা প্রশস্ত করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
মূলধনী বাজারে অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন, বিমা মধ্যস্থতায় বেশ কিছু নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া, সিঙ্গল ব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসায় স্থানীয় পণ্য বাধ্যতামূলক করার নিয়ম শিথিল করে বেসরকারি সেক্টরকে আরও চাঙ্গা করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে, কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে বেসরকারি সংস্থাগুলি কতটা সাড়া দিচ্ছে এবং বিনিয়োগ করা অর্থ কতটা ফেরত আসছে, সবকিছুই নির্ভর করছে তার ওপর।
সরকারি সংস্থায় বিলগ্নীকরণ ও বিদেশে সোভারেন বন্ড জারির মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করার সংস্থান রাখা হয়েছিল গত বছরের বাজেটে। পাশাপাশি, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী অর্থ-লগ্নির পন্থা বের করতে এবং পরামর্শ দিতে অর্থমন্ত্রী বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের সুপারিশ করেছিলেন।
আর্থিক ঘাটতিকে জিডিপি-র ৩.৪ শতাংশে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় কেন্দ্রের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে, অর্থ জোগাড় কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার মনে করেছিল গত অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে অন্তত ৯০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু, পরে দেখা যায়, সেটাও যথেষ্ট নয়। এছাড়া, জিএসটি থেকে প্রত্যাশার চেয়ে কম আয় সেই সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এই ক্ষেত্রে সরকারের রিপোর্ট কার্ড একেবারেইন আশাপ্রদ নয়।
বেসরকারি বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার এবং খরচ বৃদ্ধি করতে চেষ্টার কোনও কসুর করেনি সরকার। কোম্পানিগুলিকে করছাড় দেওয়া থেকে শুরু করে পরিকাঠামোয় খরচ ও ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য ঋণের ব্যবস্থা-- সব রাস্তাই চেষ্টা করেছে কেন্দ্র। আর্থিক সমীক্ষায় বেসরকারি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রফতানি ও খরচের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অনাবাসী ভারতীয়দের এদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একাধিক শর্ত শিথিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষায় ‘সোশ্যাল স্টক এক্সচেঞ্জ’-এর পরিকল্পনার কথা খোলসা করেন সীতারমন। এখানে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লিস্টিং করা হবে। এর ফলে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সংগঠন তহবিল গড়তে পারবে এবং সুশাসন বিস্তার লাভ করবে।
গত বাজেটে এভিয়েশন, বিমা মধ্যস্থতাকারী, অ্যানিমেশন ও মিডিয়ায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) দরজা খুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দেশে এফডিআই-য়ের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছিল, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। সীতারমন জানান, বিশ্বে মন্দা সত্ত্বেও, ভারতে এফডিআই-এর স্রোত অব্যাহত ছিল।
ব্যাঙ্কিং সেক্টরের সঙ্কট মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন সীতারমন। গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, অ-ব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকার ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত এককালীন ৬-মাসের ঋণের প্রতিশ্রুতি দেবে। যাতে যে সকল অ-ব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ভাল ভাবে চলছে, তাদের যাতে কোনও আর্থিক টান না পড়ে। পাশাপাশি, সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে ৭০ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও দেন সীতারমন।
গত বাজেটে কোম্পানিগুলিকে করছাড়ের একটি বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন সীতারমন। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভার সংস্থাগুলিকে ৩০ শতাংশ কর-কাঠামোর পরিবর্তে ২৫ শতাংশ কর-কাঠামোয় রাখা হবে। সেই সময়, বার্ষিক ২৫০ কোটি টাকা আয় করা সংস্থাগুলি এই কর-কাঠামোয় থাকত। নতুন ব্যবসা শুরু করছে যারা, অর্থাৎ স্টার্ট-আপ বিজিনেসের ক্ষেত্রে যদি রিটার্ন দাখিল করার সময় সব তথ্য যথাযথ ভাবে দেওয়া থাকে, তাহলে ওই সংস্থা বা তাদের বিনিয়োগকারীদের স্ক্রুটিনি হবে না।
২০১৯ সালের বাজেটে পরের পাঁচ বছরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য মোট ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, যাতে করে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি হতো। বলা হয়েছিল, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন।