নয়াদিল্লি: অতিমারির প্রকোপ কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতি। তার পরেও আগামী অর্থবর্ষে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (GDP) বৃদ্ধির  লক্ষ্যমাত্রা ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশেই রাখল কেন্দ্র। জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর (National Statistical Office/NSO) যদিও এর আগে ৯.২ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিল।এমনকি আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারও (International Monetary Fund/IMF) আগামী অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। তার পরেও কেন্দ্রের লক্ষ্যমাত্রা কম কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।


অতিমারি-উত্তর পর্বে অনিশ্চয়তার কথা উঠে এসেছে আর্থিক সমীক্ষায়। বিশ্ব জুড়ে মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনীতির শ্লথ গতি—এ সব সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কম রাখা নিয়ে নানা যুক্তি উঠে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষের জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ রেখেছিল কেন্দ্র। মার্চের শেষে তা কতটা পূরণ হয়েছে জানা যাবে। তবে ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে ৭.৩ শতাংশ সঙ্কোচন ঘটেছিল জিডিপি-র। তাই কেন্দ্র মেপে পা রাখতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।   


অতিমারিতে তীব্র ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। লাগাতার লকডাউনে পরিষেবা যেমন ব্যাহত হয়েছে, তেমনই ধাক্কা খেয়েছে চাহিদাও। বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির খাঁড়াও ঝুলছে। তাই শুধুমাত্র চাহিদার জোগান দিয়ে অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতির উন্নতি ঘটাতে গেলে, সরকারি নীতির সংস্কার, মূলধন ব্যয়, স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে পুনরায় চাঙ্গা করে তোলা অবশ্য প্রয়োজন। মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন নিয়ে কৌশল রচনা করতে হবে কেন্দ্রকে, যাতে সংক্রমণ বাড়লেও জোগানে ব্যাঘাত না ঘটে।


আরও পড়ুন: Budget: বহি খাতা থেকে ট্যাব, বদল এসেছে একাধিক রীতিতে; ভারতের বাজেট-ইতিহাসে রয়েছে নানা অজানা তথ্য


অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যে ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের ১১ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। বরং তা ৯.২ শতাংশ থাকবে। তাই বিগত অর্থবর্ষে জিডিপি সংকোচনের বিষয়টি মাথায় রাখলে, ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা যুক্তিপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।


ওমিক্রমনের হাত ধরেই অতিমারির শেষপর্বের সূচনা ঘটেছে বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের। যদিও এখনই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। তার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের খাঁড়াও ঝুলছে। অতিবৃষ্টিতে গত বছর কৃষিকাজে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওঠানামাও রয়েছে। এ ছাড়াও ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ইতিবাচক দিক হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশাবাদী অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।