সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়


গাড়ি পছন্দ না করলেও ফেরারি(Ferrari) ড্রাইভিং সবার কাছেই থাকে টপ লিস্টে। সম্প্রতি দুবাইতে এই গ্ল্যামারাস গাড়ি চালানোর সুযোগ পেয়েছি আমি। দুবাই সত্যিই গাড়ি পছন্দ করে। সন্ধ্যার ট্র্যাফিকের মধ্যে দাঁড়াতেই তা বিলক্ষণ বুঝতে পারবেন আপনি। যেখানে সুপারকার থেকে বিলাসবহুল SUV একই সংখ্যায় দেখা যায়। সেই তুলনায় আমরা এখানে ট্র্যাফিকে কেবল হ্যাচব্যাক দেখতে পাই। ফেরারি স্বাভাবিকভাবেই এখানে ফিট করে। তবে এটি একটি নতুন ধরনের ফেরারি যা অন্যান্য বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে। ইতিমধ্যেই এর বেশ কয়েকটি গাড়ি ভারতেও বিক্রি হয়েছে৷ 




আসলে Ferrari Roma একটা compact GT (grand tourer)। যার সামনের বনেট অনেকটাই বড়। তা সত্ত্বেও কমপ্যাক্ট ডিজাইন অনুসরণ করা হয়েছে গাড়িতে। প্রথম দেখাতেই গাড়ির জমকালো চেহারা আপনার নজর কাড়তে বাধ্য। আগের ফেরারির মতোই এই গাড়িতে অল্পকিছু লাইন টানা হয়েছে। তাছাড়া আগের ডিজাইন ল্যাঙ্গোয়েজেই বজায় রেখেছে Ferrari Roma। গাড়ির টুইন টেইললাইট ও এলইডি হেডল্যাম্পস এই ডিজাইনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।


Ferrari Roma প্রতিদিন ব্যবহারের গাড়ি হিসাবেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন। গাড়ি নিত্যদিন ব্যবহারের জন্য বাস্তবতার দিকে খেয়াল রেখেছে কোম্পানি। সেই কারণে গাড়ি খুব নিচু হওয়া সত্ত্বেও এর থেকে ঢোকা বা বের হওয়া অনেকটাই সহজ। তবে এই বিষয়টা বুঝতে মস্তিস্ককে কিছুটা সময় দিতে হবে। একবার ধাতস্থ হয়ে গেলেই আর চিন্তা হওয়ার বিষয় নয়।ফেরারি হওয়ার কারণে আপনি স্পষ্টতই এই ফেরারিতে চামড়া, অ্যালক্যানট্রা, অ্যালুমিনিয়াম ও কার্বন ফাইবার দেখতে পাবেন। তবে কেবিনের ডিজাইনের দিকে তাকালে মনে হবে, এটা সত্যিই ভবিষ্যতের কথা ভেবে বানানো হয়েছে।




Ferrari Roma-তে সবকিছুই পরিবর্তিত লক্ষ্য করা যাবে। বদলে গেছে ফেরারির চাবি। এখন সেটা কার্ডের আয়তনে করা হয়েছে। যা পুরোটাই চামড়া দিয়ে ঢাকা। এখন সব গাড়িতে ডিজিট্যাল শব্দ একটা বড় বিষয়। ফেরারিতে চালকের জন্য ১৬ ইঞ্চির এইচডি স্ক্রিন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাঝে রয়েছে ৮.৪ ইঞ্চির এইচডি সেন্ট্রাল স্ক্রিন। এই স্ক্রিন মূলত ক্লাইমেট কন্ট্রোল ও ইনফোটেইনমেন্টের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।এখানেই শেষ নয় যাত্রীর জন্য রয়েছে আলাদা ৮.৮ ইঞ্চির ফুল এইচডি টাচস্ক্রিন।কেবিনে পুরোপুরি বিমানের ককপিটের উপলব্ধি হবে আপনার। এমনকী লম্বা লোকজনও সহজেই গাড়িতে বসতে পারবেন।


বড় এসইউভির থেকে দুবাইতে Ferrari Roma চালানো অনেক সহজ। গতবারের এসইউভি চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে এই কথা বলছি আমি। এখানে ব্লাইন্ড স্পট অ্যাসিস্ট আপনাকে গাড়ির চারিদিকে ব্লাইন্ড স্পটে থাকা লোকজন ট্রাফিক সম্পর্কে বার্তা দিতে থাকবে। এমনকী দুবাইয়ের রাস্তাতেই কম গতিতে চালানো খুব একটা কঠিন কাজ নয়। গাড়িতে twin-turbo V8 ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে ফেরারি। কম গতিতেই ৬২০ হর্স পাওয়ার দেয় এই ইঞ্জিন। গিয়ার বক্সে রয়েছে ৮ স্পিড ডুয়াল ক্লাচ অটো। কেবল ১০০ হর্স পাওয়ার ব্যাবহার করলেও কম গতিতে দারুণ রেসপন্স দিয়েছে গাড়ি। গাড়িতে এয়ার কন ও এসি খুব ভাল কাজ করেছে। সেই কারণে দুবাইয়ের গরমের তাপ গাড়ির ভিতরে বসে পাইনি আমি।




একবার ফেরারি চালানোর স্বাদ পেলে আপনার ফেরারির স্টাইলে এই গাড়ি চালানোর ইচ্ছে জাগবে।দুবাইয়ের রাস্তায় কড়া ট্র্যাফিক নিয়মের মধ্যে এই কাজ করা ছিল খুব ঝুঁকির।কারণ এখানে ৮০-১০০ স্পিড লিমিট। যদিও একটা ফাঁকা রাস্তায় রোমা নিয়ে গতি বাড়িয়েছি আমি। এমনিতে ০-১০০ কিমি গতিতে পৌঁছতে ৩.৪ সেকেন্ড দাবি করে ফেরারি। প্রচন্ড গরমের মধ্যেও দুরন্ত গতিতে গাড়ি চালিয়েছি। সেই ক্ষেত্রে সামান্য একসিলারেশনের পরই টুইন turbo V8 ইঞ্জিন নিজের পারফরম্যান্স দেখিয়ে দেয়। বার বার ইঞ্জিন একসিলারেট করলে এর আওয়াজ আপনাকে রিংটোন করে রাখার ইচ্ছে হবে আপনার। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে রয়েছে ৫ পজিশন মেনেন্তিনো সুইচ। একবার অন করলেই চালু হয়ে যাবে এই মন্স্টার কার। স্টিয়ারিং খুব শার্প ও টার্নিংয়ের সময় চালককে আত্মবিশ্বাস জোগায়।
ভারতে এই মডেল ফেরারির খুব বাস্তবসম্মত ডিজাইন। ৩.৭ কোটি টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এই গাড়ি।