পীযূষ পাণ্ডে
মুম্বই : দেশে দ্বিতীয় করোনার ঢেউ থাবা বসিয়েছে বিমা ক্ষেত্রে। সাধারণ বিমার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জীবন বিমা ক্ষেত্রও। গ্রাহকের ক্লেইম সেটল করতে নাভিশ্বাস উঠছে স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানিগুলির। সব মিলিয়ে 'রেড মার্ক' পড়ে গিয়েছে ইনসুরেন্স সেক্টরে।
কোভিড পরিস্থিতির জেরে মুনাফা কমে গিয়েছে জীবনবিমা কোম্পানিগুলির। ক্লেইমের পাহাড় জমছে স্বাস্থ্যবিমা এজেন্টদের ঘাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, মুনাফা তো দূর, ৬.২৭ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলি। IRDAI-এর বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, ২০১৯-'২০ অর্থবর্ষে ২৩,৭২০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখ দেখেছে জেনারেল ইনসুরেন্স সেক্টর। যা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে এজেন্টদের কপালে।
একই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে পাবলিক সেক্টর ইনসুরেন্সের ক্ষেত্রে। ২০২০ অর্থবর্ষে পাবলিক সেক্টর ইনসুরেন্সে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮,৭৪১ কোটি টাকা। গত অর্থবর্ষে যে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৮,৫৩৩ কোটি টাকা। বেহাল দশা হয়েছে বেসরকারি বিমা ক্ষেত্রেরও। ২০২০ অর্থবর্ষে প্রাইভেট ইনসুরেন্স সেক্টরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬.২ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬৪৭ কোটি টাকা। আগের থেকে এই ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেশি।
রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালে ক্ষতির মুখ দেখেছে স্বাস্থ্যবিমা সেক্টর। সেখানে এক বছরে ক্ষতি হয়েছে ১৪.৬ শতাংশ, ৬৫১ কোটি টাকা। আগের অর্থবর্ষে যে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৬৮ কোটি টাকা। বিমা ক্ষেত্রের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, জেনারেল ও হেলথ ইনসুরেন্স মিলিয়ে চলতি অর্থবর্ষে ক্ষতি হয়েছে ১৪৯৪ কোটি টাকার। ঠিক এর আগের বছর মুনাফার মুখ দেখেছিল এই দুই বিমার ক্ষেত্র। যেখানে ৬৮৩ কোটি টাকা লাভ করেছিল জেনারেল ও হেলথ ইনসুরেন্স কোম্পানিগুলি।
কোভিড সঙ্কটের মুখে মারাত্মক ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে বিমা কোম্পানিগুলিকে। রিপোর্ট বলছে, ২১টি জেনারেল ইনসুরেন্স কোম্পানির মধ্যে ৯টির গায়ে 'রেড মার্ক' লেগেছে। ক্ষতির মুখ থেকে বাদ পড়েনি সরকারের অধীনে থাকা সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলিও। গত অর্থবর্ষে চারটের মধ্যে তিনটে জেনারেল ইনসুরেন্স কোম্পানি ক্ষতির মুখ দেখেছে। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করেছে বহু বিমা কোম্পানি। যদিও এসবের মধ্যে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জীবন বিমা কোম্পানিগুলি। গত অর্থবর্ষেও লাভের মুখ দেখে জীবন বিমা ক্ষেত্র। মুনাফা কমলেও ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের।
ক্লেইম বাকি
২০২১-এর ৫ মে-র রিপোর্ট বলছে, জেনারেল ইনসুরেন্স কোম্পানিগুলির হাতে ১১.৩৯ লক্ষ কেস রয়েছে। যাদের ক্লেইমের মূল্য ১৫,৯৮৮ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই ৯.৫১ লক্ষ ক্লেইম মিটিয়েছে কোম্পানিগুলি। যার আর্থিক মূল্য ৯১৪১ কোটি টাকা। এখনও ১.৮৭ লক্ষ কেসের ক্লেইম মেটানো হয়নি। যা মেটাতে কোম্পানিগুলির খরচ পড়বে ৬৪৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৭,৮৯৮টি কেস খারিজ করে দিয়েছে জেনারেল ইনসুরেন্স কোম্পানিগুলি।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল ইনসুরেন্স কাউন্সিল-এর সেক্রেটারি এমএন শর্মা বলেন, ''এখনও অ্যাকাউন্টস ক্লোজ করা হয়নি। ইনসুরেন্স কোম্পানিগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ক্লেইমের সংখ্যা। রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ৬০ দিন পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ বহন করি আমরা। তাই ৬০ দিন পূর্ণ না হলে ক্লেইমও ক্লোজ করা যায় না।''