নয়াদিল্লি: লুক্সেমবার্গের প্রায় দ্বিগুণ আয়তনের জমি ব্যাঙ্ক তৈরি করছে ভারত। এজন্য মোট ৪৬১৫৮৯ হেক্টর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল। বিশ্বব্যাঙ্কের হিসাব অনুসারে, লুক্সেমবার্গের আয়তন ২৪৩০০০ হেক্টর।
সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস সংক্রমণের একেবারে প্রাথমিক কেন্দ্রভূমি চিন ছেড়ে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছুক শিল্পমহলকে ভারতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতেই রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় গড়ে জমি সংগ্রহের ব্যাপারে কাজ করছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। সূত্রের খবর, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে ১১৫১৩১ হেক্টর শিল্প তৈরির জমি সরকারের হাতেই আছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, তার ফলে সরবরাহ নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত হওয়ার জেরে নির্মাণ বা ম্যানুফ্য়াকচারিংয়ের ঘাঁটি হিসাবে চিনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে বিদেশি শিল্পমহল। কিন্তু ভারতে বিনিয়োগ, শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধাগুলির অন্যতম হল জমি। অতীতে সৌদি আর্মকো থেকে পস্কো, একাধিক বিনিয়োগ প্রকল্প ভেস্তে গিয়েছে জমির সমস্যায়। তা কাটাতে তত্পর হয়েছে মোদি সরকার।
এখন ভারতে কারখানা গড়তে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিজেদেরই জমি অধিগ্রহণ করে নিতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অধিগ্রহণের ব্যাপারে ছোট জমির মালিকদের সঙ্গে আপস-রফা করতে গিয়ে বিলম্বের ফলে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা প্রকল্প সরিয়ে নেন। বার্কলেজ ব্যাঙ্কের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রাহুল বাজোরিয়ার মত, যেসব ফ্যাক্টর প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করে, সেগুলির অন্যতম হল স্বচ্ছতা ও দ্রুত জমি অধিগ্রহণ। এটা হল সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ তৈরির একটা শর্ত এবং সহজে জমি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে আরও সামগ্রিক মনোভাব প্রয়োজন। করোনাভাইরাস অতিমারী হানা দেওয়ার আগে থেকেই ধুঁকতে শুরু করেছিল অর্থনীতি। মন্থর হয়ে পড়ছিল। আর লকডাউনের ধাক্কায় তার দশা বেহাল হতে শুরু করেছে। তাকে চাঙ্গা করতে হলে জমির পাশাপাশি বিদ্যুত, জল ও রাস্তার ব্যবস্থাও করা দরকার।
নির্মাণ শিল্পে গুরুত্ব দেওয়ার ফোকাস হিসাবে দশটি ক্ষেত্রকে বেছে নিয়েছে কেন্দ্র। সেগুলি হল ইলেকট্রিকাল, ফার্মাসিউটিক্যালস, মেডিকেল ডিভাইস, ফুড প্রসেসিং, ইলেকট্রনিক্স, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং, সোলার ইকুইপমেন্ট, কেমিক্যালস ও টেক্সটাইলস। বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলিকে বলা হয়েছে, কোন কোন বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে, তাদের চিহ্নিত করতে।
ভারতে ব্য়বসা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে মূলত জাপান, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, চিন থেকে নানা প্রশ্ন এসেছে সরকারের বিনিয়োগ সংক্রান্ত এজেন্সি ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার কাছে। এই চার দেশই ভারতের শীর্ষ ১২টি ব্যাবসা সংক্রান্ত পার্টনারদের মধ্যে পড়ে। ২০০০ এর এপ্রিল থেকে ২০১৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত চারটি দেশ থেকে ভারতে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে অব্যবহৃত পড়ে থাকা জমি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেওয়ার ভাবনাচিন্তাও করা হচ্ছে। এধরনের জোনে শিল্পের মৌলিক পরিকাঠামো তৈরি। চলতি মাসের শেষ নাগাদ বিদেশি বিনিয়োগ টানার বিস্তারিত স্কিম চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানাচ্ছে ওয়াকিবহাল সূত্রটি।