নয়াদিল্লি: পাঁচ মাস আগে চিহ্নিত করা গিয়েছে করোনাভাইরাসকে। তারপর থেকেই ভ্যাকসিন তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ভারত সহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা গেছে, ছয়টি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরি হলে কয়েক কোটি ডোজের প্রয়োজন হবে। তবে সবচেয়ে প্রথমে ভ্যাকসিন সবদিক থেকে উপযুক্ত হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতামত অনুসারে, সবচেয়ে প্রভাবশালী ভ্যাকসিন চিহ্নিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সারা বিশ্বই এতে উপকৃত হয়। এজন্য পরীক্ষার তৃতীয় পর্যায়ের তথ্য জানানো দরকার, যাতে বোঝা সম্ভব হয় যে, সবচেয়ে কার্যকরী ভ্যাকসিন কোনটি বা কোন কোনগুলি। সেইসঙ্গে তা সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার মডেল কী হবে, তাও স্থির করা প্রয়োজন। কারণ, সমস্ত সরকারি গবেষণাগারগুলির সঙ্গে বেসরকারি ল্যাব ও লগ্নিকারীদেরও প্রচুর অর্থ ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যয় করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে ১৫০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে অনুমান।
মানব দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োদের জন্য কয়েক হাজার মানুষের প্রয়োজন হবে। পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ডোজ দিয়ে দেখা হবে, তাঁদের মধ্যে কীভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে উঠছে। নেচার ম্যাগাজিন অনুসারে, বিশ্বে এই প্রথমবার কয়েক হাজার মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করা হবে। সারা বিশ্বে ৩৫ লক্ষের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত। এ সত্ত্বেও খুবই কম সংখ্যাক মানুষের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। এর গুণমানের পর্যায়ও এখনও স্পষ্ট নয়।
কীভাবে বেছে নেওয়া যাবে সবচেয়ে কার্যকরী ভ্যাকসিন: এক ফরাসি বিশেষজ্ঞের মতে, মানব শরীরে প্রয়োগের ফলাফলের সঙ্গে দেখতে হবে ব্যাপকভাবে উত্পাদনের ক্ষমতাও। ভ্যাকসিন তৈরির সামগ্রী কতটা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে এবং কীভাবে তা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হবে।আরএনএ ভিত্তিক ভ্যাকসিনকে ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির অনুমতি ছাড়াও অন্যান্য সংস্থারও অনুমতির প্রয়োজন। কেননা, এ ব্যাপারে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। তবে একথা সবাই মনে করেন যে, ভ্যাকসিন তৈরি অত্যন্ত কঠিন কাজ।
প্রচুর পরিমাণে মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ কম করতে হু তথ্য জানানোর কথা বলেছে, যাতে ওই তথ্য অন্যদের কাজে আসতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল এইডস ভ্যাকসিন ইনিসিয়েটিভের প্রধান মার্ক ফেইনবার্গ বলেছেন, এ ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন এর আগে কখনও হয়নি। একই মত ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সেথ বার্কলেরও। যদিও সহযোগিতার পথে প্রচুর সমস্যাও রয়েছে। কেননা, আমেরিকা হু-র সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমেরিকার অনেক বেসরকারি ল্যাব ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে।
ফেইনবার্গ বলেছেন, হু-র একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করেছে, যা প্রাথমিক ভ্যাকসিনগুলি চিহ্নিত করবে। কৌশলগত অংশদারিত্ব এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে। না হলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। যদিও তিনি মনে করেন যে, হু-র পরিকল্পনা জোরাল নয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটে একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রধান গবেষক ডা. অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, তাঁদের সফল হওযার খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই ভ্যাকসিন তৈরি করা যাবে বলেও তিনি আস্থা প্রকাশ করেছেন। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, তৃতীয় পর্যায়ে মানব শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য লোকের অভাব নেই। চিনের উহান থেকে ইতালি, স্পেন ও আমেরিকা পর্যন্ত প্রচুর মানুষ রয়েছেন, যাঁদের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তৃতীয় পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষামূলক প্রয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করা যেতে পারে।
হু সহযোগীতামূলক ভ্যাকসিন পরীক্ষারও প্রস্তাব দিয়েছে। এতে ভ্যাকসিনের এনরোলমেন্ট হবে এবং সমস্ত পরীক্ষার ওপর নজর রাখা যাবে। প্রভাবসৃষ্টিকারী পরীক্ষা ও ভালো প্রভাবসম্পন্ন ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে কাজের অনুমতি দেওয়া হবে। ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ-এর মেরি পোল কেয়নি বলছেন, হু-র পরিকল্পনা নিয়ে আরও বেশি কাজ করা দরকার, যাতে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন সম্পর্কে বেশি তথ্য জানা যায়। একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, এ ধরনের কাজ প্রয়োজন, যাতে সবচেয়ে ভালো ভ্যাকসিনকে সবার আগে পরীক্ষামূলক প্রক্রিয় পর্যন্ত নিয়ে আসা যায়।
কিছু কিছু ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে। আইএবিআই-এর এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, প্রভাবসৃষ্টিকারী পরীক্ষার ফলাফলের খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। লাইসেন্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের জন্য তৃতীয় পর্যায়ের ফলাফলের প্রয়োজন হয় না। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জরুরি ধারায় এর অনুমতি দিয়ে দেবে। যদিও এফডিএ-র মাপকাঠি খুবই কড়া এবং ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিতে এই মাপকাঠি পূরণ করতে হবে।