নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন এই বাজেট নিয়ে প্রত্যাশার পারদ চড়ছিল গত কয়েক দিন ধরেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এদিন সংসদে যে ঘোষণা করেছেন, তাতে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরা কার্যতই হতাশ। কেন্দ্রের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজনৈতিক মহলও। (Interim Budget 2024)



নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়, "দেশের ১ কোটি মধ্যবিত্ত মানুষ করছাড়ে উপকৃত হবেন। এই বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কৃষকদের কথা ভেবে গৃহীত হয়েছে।" (Interim Budget Reactions)



কেন্দ্রের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, "মন দিয়ে বাজেট শুনলাম। দরিদ্র, স্বল্প আয়ের পরিবার এবং মধ্যবিত্তদের জন্য কিছুই পেলাম না। যেমন তেমন করে রোজকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ১০ বছর আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্যই পেলাম না। কত প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে, কত হয়নি, কোনও তুলনাই পেলাম না। তুলনামূলক বিবৃতি পেলাম না আমি।"



কেন্দ্রের এই অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, "বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তেহার এই বাজেট। কিছু ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে ভোট পাওয়া যায়। ওরা হয়ত ভাবছে এই বাজেটে ভোট বাড়বে। কিন্তু দারিদ্র্য, বেকারত্ব, ধর্মীয় বিভাজনের যে পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, এ ব্যাপারে সরকারের কী বক্তব্য, জানা গেল না।"


লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "বেকারদের কর্মসংস্থানের এই কি বাজেট? লোকসভা নির্বাচনের আগে মানুষের মন ভোলানো ছাড়া এই বাজেট আর কিছু নয়।"



কংগ্রেস নেতা সচিন পায়লটের বক্তব্য, "অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করতে গিয়ে যে ভাষণ দিলেন, শুনে মনে হল নির্বাচনী ভাষণ। রাষ্ট্রপতির ভাষণকেও রাজনৈতিক ভাষণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।"



কংগ্রেস নেত্রী  সুপ্রিয়া শ্রীনেত বলেন, "সমস্যার কথা মানতে আপত্তি সরকারের। এখনও সেই নীতি নিয়েই চলছে। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই বাজেটে। কর্মসংস্থান, কৃষি, মহিলা, কারও জন্য কিছু নেই। নির্মলা সীতারামন দাবি করেছেন, মানুষের রোজগার ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু সরকারি পরিসখ্যানই বলছে মানুষের আয় কমেছে ২৫ শতাংশ।"



সমাজবাদী পার্টির প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'যদি কোনও বাজেট, উন্নয়নের দিশা না দেখাতে পারে, আর যদি উন্নয়ন, সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করতে না পারে, তাহলে তা ব্যর্থ! জনবিরোধী বাজেট পেশের এক দশক পূর্ণ করে লজ্জার রেকর্ড তৈরি করল বিজেপি সরকার। যে রেকর্ড কোনওদিনই ভঙ্গ হবে না, কারণ এবার ইতিবাচক সরকারের আসার সময় হয়ে গেছে। এটা বিজেপি-র বিদায়ী বাজেট!' 



দিল্লির মন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেত্রী অতিশী বলেন, "এই বাজেটে আবারও প্রমাণিত হল, এটা 'জুমলা' সরকার। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন প্রত্যেক বছর ২ কোটি কর্মসংস্থান করবেন। কিন্তু ১ কোটি মানুষকেও চাকরি দিতে পারেননি। আজ আবার একটা নতুন 'জুমলা' দেওয়া হল যে ৫৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনও ঘোষণাই নেই।"



আম আদমি পার্টির সাংসদ সুশীল কুমার রিঙ্কুর কথায়, "দেশের যুবসমাজ, দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ আশা করেছিলেন, সরকার ওঁদের কথা ভাববে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই বাজেটের ফল ভোগ করতে হবে বিজেপি-কে, হার হবে ওদের।"



আম আদমি পার্টির আর এক সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল বলেন, "অত্যন্ত অসন্তোষজনক বাজেট। দেশে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব চরমে উঠেছে। কিন্তুি সেই নিয়ে বাজেটে কিছু নেই। সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত খারাপ বাজেট।"



DMK সাংদ টি শিব বলেন, "পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ বাজেটের অপেক্ষা করছে ওরা। আমরা যখন ক্ষমতায় আসব, সেটি পেশ করব। I.N.D.I.A জোট জিতবে। লোকসভা নির্বাচন মিটলে সেরা বাজেট উপহার দেব আমরা।"



শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতর্বেদির কথায়, "কথা এবং কাজের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। গত ১০ বছর ধরে এটাই দেখে আসছি আমরা। দরিদ্র, মহিলা, যুবসমাজের জন্য কিছু নেই। মানুষের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে এই বাজেট।" 


কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদম্বরম বলেন, "বাধ্যতামূলক ভাবে সরকার নিজের পিঠ চাপড়েছে, নিজের গুণকীর্তন করেছে। এই বাজেটে কিছু নেই। নতুন সরকার গঠন হওয়ার আগে এটা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া মাত্র। এর মধ্যে কিছু খোঁজাও উচিত নয়।"



যদিও বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে বলতে শোনা যায়, "অত্যন্ত দূরদর্শী বাজেট। উন্নত ভারতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করল এই বাজেট। মধ্যবিত্তদেরপ জন্য গৃহ প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে, এককথায় তা নজিরবিহীন। আমরা শুধু 'গরিবি হটাও' রব তুলি না। দারিদ্র্য দূর করি। লাখপতি দিদির সংখ্যা বাড়িয়ে ৩ কোটি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পর্যটন, পুনর্নবীকরণ শক্তির উপর জোর দিচ্ছে সরকার।"


আরও পড়ুন: Cervical Cancer Vaccination: সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের টিকা মেয়েদের, ঘোষণা নির্মলার