নয়াদিল্লি: নিজেদের লভ্যাংশ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে ২.১১ লক্ষকোটি টাকার ডিভিডেন্ড দিচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI Dividend)। ২০২৪ অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে এই টাকা দেবে RBI, যা গত অর্থবর্ষের তুলনায় প্রায় ১৪০ শতাংশ বেশি। এর আগে, ২০২৩ অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রকে ৮৭ হাজার ৪১৬ টাকা অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে প্রদান করে RBI. 


চলতি অর্থবর্ষে RBI, বিভিন্ন সরকারি ব্যাঙ্ক এবং অর্থনৈতিক সংস্থাগুলির থেকে ১.০২ লক্ষ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড পাওয়ার লক্ষ্য রাখা হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে। বুধবার মুম্বইয়ে ৬০৮তম বৈঠক বসে RBI-এর সেন্ট্রাল বোর্ডের। সেখানে অভ্যন্তরীণ, বৈশ্বিক অর্থনীতি এববং ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে নিজেদের লভ্যাংশ থেকে কেন্দ্রকে ২ লক্ষ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বোর্ডের সদস্যরা।


আকস্মিক পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য লভ্য়াংশের টাকা সরিয়ে রাখে RBI, অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলা হয় Contigency Risk Buffer (CRB). ঋণ দেওয়া নেওয়া, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বিভিন্ন ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে আয়ের কিছু অংশ CRB হিসেবে রাখা হয়। আগের বার সেই হার ৬ শতাংশ CRB ধার্য করেছিল RBI, এবার ৬.৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। RBI-এর লভ্যাংশ থেকে যত বেশি টাকা মেলে, তত বেশি বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা করতে পারবে কেন্দ্র। ২০২৫ অর্থবর্ষের জন্য বাজেট ঘাটতি কমিয়ে ৫.১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। পাশাপাশি, খরচের জন্যও বেশি টাকা থাকবে হাতে।  


নিজেদের লভ্যাংশ থেকে কিছু টাকা প্রতি বছরই কেন্দ্রের হাতে তুলে দেয় RBI. সঞ্চিত ডলার, রাজস্ব, নোট ছাপার খরচ বাবদ আয়, সুদের হার, বিভিন্ন বিনিয়োগ থেকে ওই টাকা আয় হয় তাদের। এর আগে, RBI-এর তরফে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ডিভিডেন্ড মিলতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছিল,তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ডিভিডেন্ড মিলল।


এর আগে, ২০১৬ সালে কেন্দ্রকে নিজেদের লভ্যাংশ থেকে ৬৫ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা দিয়েছিল RBI. ২০১৭ সালে ৩০ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ৫০ হাজার কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা, ২০২০ সালে ৫৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা, ২০২১ সালে ৯৯ হাজার ১২২ কোটি টাকা, ২০২২ সালে ৩০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে ৮৭ হাজার ৪১৬ টাকা কেন্দ্রকে দেয় RBI. সেই নিরিখে আগের সব রেকর্ড ভেঙে গেল এবার। 


২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই RBI-এর আয়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা দেওয়ার জব্য চাপ সৃষ্টি করা হয় লাগাতার। সেই নিয়ে একসময় চরমে উঠেছিল বিতর্ক। এই ডিভিডেন্ড নিয়ে মতবিরোধের জেরেই রঘুরাম RBI-এর গভর্নরের পদ ছেড়েছিলেন বলে শোনা যায়। পরবর্তীতে উর্জিত পটেলের সঙ্গেও ডিভিডেন্ড নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় সরকারের। মেয়াদ শেষের আগে তিনিও পদ ছাড়েন। RBI-এর লভ্যাংশের টাকা কেন্দ্রের হাতে গেলে, বিপর্যয়ের সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু এর পরও RBI-এর প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় ২০১৮ সালে, যা শেষ পর্যন্ত সরকারকে লভ্য়াংশ দেওয়ার সুপারিশ করে। ওই কমিটি জানিয়েছিল, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ছাড়া আর কোনও টাকা কেন্দ্রকে দেওয়া যাবে না। করোনার সম. সেই জরুরি পরিস্থিতিতির উল্লেখ করেছিল RBI. তবে লাগাতারই কেন্দ্রেক লভ্যাংশের টাকা দিয়ে আসছে RBI.