Anant Ambani: রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (Reliance Industries)  ও রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের (Reliance Foundation) Vantara বড় উদ্যোগ। এবার এল 'ভান্তারা'(Star of the Forest) প্রোগ্রাম। সোমবার এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থা। প্রাণী কল্যাণ ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় এটি একটি বড় কর্মসূচি। যার লক্ষ্য শুধু দেশ নয়, বিশ্বব্যপী আহত, নির্যাতিত ও বিপন্ন প্রাণীদের উদ্ধার করে যত্ন সহকারে চিকিৎসা, পুনর্বাসন দেওয়া।


কোথায় নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ
গুজরাতে রিলায়েন্সের জামনগর রিফাইনারি কমপ্লেক্সের গ্রিন বেল্টের মধ্যে একটি চিত্তাকর্ষক 3,000 একর বিস্তৃত জায়গাজুড়ে ভানতারা খোলা হয়েছে। এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী প্রাণী সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হিসাবে উঠে এসেছে। পশুর যত্ন ও কল্যাণে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ভানতারার বিস্তৃত অঞ্চলকে একটি জঙ্গলের মতো বাসস্থানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যা উদ্ধার করা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর পুনর্বাসনে আদর্শ পরিবেশ হিসাবে কাজ করবে। 


অনন্ত অম্বানির বড় উদ্যোগ
 RIL ও রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অনন্ত অম্বানির নেতৃত্বে ভানতারা ভারতে এই ধরনের প্রথম বড় উদ্যোগ। এমনিতেই  অম্বানি তাঁর পরিবেশের প্রতি সচেতনতা ও স্থায়িত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জামনগরে রিলায়েন্সের রিনিউয়েবল এনার্জি ব্যবসার নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। 2035 সালের মধ্যে নেট কার্বন জিরো স্ট্যাটাস অর্জনের কোম্পানির লক্ষ্যের দিকে কাজ করছেন অনন্ত অম্বানি ৷


ভানতারা মূল লক্ষ্য কী
ভানতারার মিশনের মূল লক্ষ্য হল হল  প্রাণী সংরক্ষণে আধুনিক স্বাস্থ্যপরিষেবা, গবেষণা কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। প্রোগ্রামটি উন্নত গবেষণা এবং জ্ঞান-আদান-প্রদান করতে International Union for Conservation of Nature (IUCN) ও World Wildlife Fund for Nature (WWF) এর মতো সম্মানিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে জোট বেঁধেছে।


কোন কোন প্রাণীর বছরের পর বছর ধরে ভানতারা 200 টিরও বেশি হাতি এবং হাজার হাজার অন্যান্য প্রাণী, সরীসৃপ, পাখিকে অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে সফলভাবে উদ্ধার করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই উদ্যোগটি গন্ডার, চিতাবাঘ এবং কুমিরের মতো প্রধান প্রজাতির পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় দেশে ও বিদেশে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে।মেক্সিকো এবং ভেনিজুয়েলার মতো দেশে  প্রাণী কল্যাণে ভানতারা উদ্যোগ নিয়েছে। 


ভানতারা লঞ্চের এই উদ্যোগ নিয়ে অনন্ত অম্বানি বলেছেন,''ছোট থেকেই এই বিষয়ে 'প্যাশন' ছিল, এখন যা মিশনে পরিবর্তিত হয়েছে। ভানতারা ও এর সঙ্গে জড়িত দারুণ টিম থাকার কারণে এই মিশন সম্ভব হচ্ছে। এখন আমরা দেশের বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সুরক্ষার দিকে নজর দিচ্ছি। আমাদের কাছে খুশির খবর এই যে , আমাদের এই উদ্যোগ দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি ও সুনাম অর্জন করছে। বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগে দেশ-বিদেশের সেরা প্রাণী ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ আমাদের মিশনের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।''


যে দর্শন তাঁকে ভান্তারা প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল, তার খোলসা করেন  অনন্ত অম্বানি। তিনি বলেন, “ভান্তারা আধুনিকতার পাশাপাশি সমবেদনার যুগ-পুরোনো নৈতিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণ। এখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পেশাদারিত্ব সহাবস্থান করছে। আমি জীব সেবাকে 
সর্বশক্তিমানের সেবা বা মানবতার সেবা হিসাবে দেখি।"


হাতি কেন্দ্র
৩০০০ একর জুড়ে বিস্তৃত ভান্তারায় একটি অত্যাধুনিক এলিফ্যান্ট সেন্টারও থাকবে। এতে একটি হাইড্রোথেরাপি পুল, ওয়াটার বডি এবং হাতির বাতের চিকিৎসার জন্য একটি জাকুজিও থাকবে। এখানে ৫০০ জনের একজন প্রশিক্ষিত কর্মী হাতিদের দেখভাল করবেন। এতে ২৫ হাজার বর্গফুটের একটি হাসপাতালও থাকবে। এতে সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। এখানে হাতির অস্ত্রোপচারও করা যাবে। এলিফ্যান্ট সেন্টারে ১৪ হাজার বর্গফুটের একটি রান্নাঘরও থাকবে। এই কেন্দ্রে আয়ুর্বেদের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হবে।


উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র
ভান্তারা প্রোগ্রামের আওতায় ৬৫০ একর জায়গায় একটি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রও রয়েছে। প্রায় ২০০ আহত চিতাবাঘকে উদ্ধার করা হয়েছএ এই কেন্দ্রে। এছাড়া এক হাজারের বেশি কুমিরকেও রক্ষা করা হয়েছে। আফ্রিকা, স্লোভাকিয়া ও মেক্সিকো থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। সার্কাস ও চিড়িয়াখানা থেকে আনা প্রাণী রাখা হবে এতে। এই কেন্দ্রে ২১০০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছে। এই কেন্দ্রে রয়েছে ১ লাখ বর্গফুটের একটি হাসপাতাল এবং একটি চিকিৎসা গবেষণা হাসপাতাল। এর মধ্যে এমন ৭টি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যা বিপদচিহ্নে পৌঁছে গেছে।


রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন কী?
রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হলেন নীতা আম্বানি। এই সংগঠনটি গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী উন্নয়ন, শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করে। সংস্থাটি এখন পর্যন্ত ৫৫৪০০ গ্রামের ৭২ লক্ষ মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছে।