সন্দীপ সরকার, কলকাতা : ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় (falciparum malaria treatment) আক্রান্ত হয়ে কার্যত মৃত্যুর মুখে চলে যাওয়া বালিকাকে প্রাণে বাঁচিয়ে নজির গড়ল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ ( Institute of Child Health ) । ব্লাড এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন পদ্ধতিতে শরীরের দূষিত রক্ত বদলেই হল মিরাকল! এখন, অপেক্ষা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার।
যমে-মানুষে টানাটানি
১০ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে তখন যমে-মানুষে টানাটানি চলছে, পরিবারও প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছিল। কিন্তু, হাল ছাড়তে চাননি চিকিৎসকরা। ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কার্যত মৃত্যুর মুখে চলে যাওয়া বালিকাকে প্রাণে বাঁচিয়ে নজির গড়ল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ।
ব্লাড এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন (blood exchange transfusion) পদ্ধতিতে শরীরের দূষিত রক্ত বদলেই হল মিরাকল! প্রাণ বাঁচল পার্কসার্কাসের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ার। ১৬ অক্টোবর, থেকে ধুম জ্বর। প্রথমে ভর্তি করা হয় বেলভিউ নার্সিংহোমে। কিন্তু সেখানে পেডিয়াট্রিক ICU না থাকায় স্থানান্তরিত করা হয় পিয়ারলেস হাসপাতালে। অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায়, ২০ অক্টোবর বালিকাকে ভর্তি করা হয় পার্কসার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ-এ।
মাল্টি অর্গান ডিসফাংশন
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১০ বছরের মেয়েটিকে সংজ্ঞাহীন অবস্থা আনা হয়। মাল্টি অর্গান ডিসফাংশনের পাশাপাশি অবস্থা খারাপ ছিল কিডনি, লিভার, ফুসফুসের। হিমগ্লোবিনও কমে যায় অনেকটাই। সঙ্গে ছিল জন্ডিস। প্রায় কোমায় চলে গিয়েছিল বছর দশের মেয়েটি।
সিভিয়ার ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়া কী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূণ গিরি জানাতেন, সিভিয়ার ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে সে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের দাবি, রক্তে ম্যালেরিয়ার পরজীবীর সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে ওষুধ দিয়ে মেয়েটিকে সুস্থ করে তুলতে একাধিক অঙ্গ-প্রত্যক্ষ পাকাপাকিভাবে খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন কি, অতিরিক্ত পরজীবী, রক্ত জালিকাগুলিকে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছিল। ওষুধ দিয়ে সুস্থ করতে গেলে যে সময় লাগত, তাতে ব্রেন হেমারেজ হয়ে যেতে পারত, বলছেন চিকিৎসকরা।
এরপরই অভিনব সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ঠিক হয়, ব্লাড এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হবে। শরীরের দূষিত রক্ত বের করে, নতুন রক্ত শরীরে ঢোকানো হবে। সেইমতো, শরীরে ২টি চ্যানেল করা হয়। একটি ধমনী ও অন্যটি শিরায়। একই সময়ে, ধমনীর চ্যানেলের সাহায্যে সিরিঞ্জ দিয়ে ১০ মিলিলিটার করে দূষিত রক্ত বের করা হয়। অন্যদিকে, শিরা দিয়ে ঢোকানো হয় ১০ মিলিলিটার করে নতুন রক্ত। এভাবেই, ৭৫০ মিলিলিটার দূষিত রক্ত বের করে সম পরিমাণ পরিশুদ্ধ রক্ত বালিকার শরীরে ঢোকানো হয়।
৪ ঘণ্টা ধরে চলে এই পদ্ধতি। এতেই এখন সম্পূর্ণভাবে ম্যালেরিয়ামুক্ত চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া।
ডেঙ্গির দোসর ম্যালেরিয়া! রাজ্যে ভয়ঙ্করহারে বাড়ছে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ