অমিতাভ রথ, ঝাড়গ্রাম: মকর সংক্রান্তিতে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে ৮ থেকে ৮০ সকলে মেতে উঠল 'বুলবুলি পাখির লড়াই' প্রতিযোগিতায়। স্থানীয় মানুষজনেরা বলে থাকেন বুলবুলি পাখির এই লড়াই এখানকার ঐতিহ্যবাহী এক অনুষ্ঠান যেখানে দুটো বুলবুলি পাখিকে লড়াই লাগানো হয়, এই অনুষ্ঠান আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসছে গোপীবল্লভপুরে রাধাগোবিন্দ মঞ্চের সামনে।


ভিন রাজ্য থেকেও এসেছিল পাখিরা অংশ নিতে


প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, সেই অনুষ্ঠানে বাংলার পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশা থেকেও মানুষজনেরা বুলবুলি পাখি নিয়ে এখানে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হিসেবে পুরস্কার রাখা হয়। বংশপরম্পরা হিসাবে এই সমস্ত এলাকার মানুষজনেরা এই সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছেন হাজার কাজের মধ্য দিয়ে এই দিনটি ধুমধাম করে মেতে উঠেন এই সমস্ত এলাকার মানুষজনেরা এই বুলবুল পাখির লড়াই দেখতে গোপীবল্লবপুর রাধাগোবিন্দ মঞ্চের সামনে ছুটে আছেন।


পাখি লড়াই ঘিরে উন্মাদনা এখনও কমেনি


উনিশ শতকের শহর কলকাতায় বুলবুল পাখির লড়াই দেখতে ছাতুবাবুর মাঠ নাহলে দয়াল মিত্তির বাগান বাড়িতে জুড়ি গাড়ি চড়ে সেকালের বাবুরা আসতেন। সেই বাবু কালচার কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে। কিন্তু এ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার গোপীবল্লভপুরে পৌষ সংক্রান্তির দুপুরে এখনও বছরের একটা দিন বুলবুল পাখির লড়াই হয় আজও। মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগেও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বুলবুল পাখির লড়াই হারিয়ে যায়নি। এখনও চলে আসছে। বিরল এই পাখি লড়াই ঘিরে উন্মাদনা এখনও কমেনি।লড়াইকে ঘিরে কমেনি জঙ্গলমহলের বৈষ্ণবতীর্থ গোপীবল্লভপুরের আমজনতার লোকাচার, লোকবিশ্বাস।


আরও পড়ুন, মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান সুজিত বসু-সহ ৪ মন্ত্রীর


হেরে গেলেই ঝুঁটি কেটে দেওয়া হচ্ছিল বুলবুলি পাখির 


গোপীবল্লভপুরের গোস্বামীদের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের কাছে চাঁদোয়া টাঙিয়ে হয় পাখি যুদ্ধ।সম্মুখ সমরে থাকার সময় হাউসিদের হাতে ধরা পাকা কলার টুকরো দেখিয়ে  রাগানো হয় পাখিদের। সঙ্গে লড়াইয়ের দম বাড়াতে দেওয়া হচ্ছিল আখের রস।এভাবে একে একে পাখি এগিয়ে দিয়ে লড়াই এগিয়ে যায়।এবার শতাধিক পাখি লড়াইয়ের মঞ্চে এসেছিল।হেরে যাওয়া বুলবুলের ঝুঁটি কেটে তাদের ছেড়ে দিচ্ছিলেন সেনাপতি। দুটি দলের হয়ে যাঁরা এই পাখি লড়াই পরিচালনা করেন তাঁদের বলা হয় সেনাপতি। ঝুঁটি কাটার সঙ্গে মানমর্যাদা জড়িয়ে রয়েছে। গোপীবল্লভপুরেও পাখির লড়াই হয় দুটি পাড়া বাজারসাই ও দক্ষিণ সাইয়ের মধ্যে। সাই অর্থাৎ পাড়া। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই পাড়ার ব্যাপক উন্মাদনা থাকে।