অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: গার্ডেনরিচে (Gardenreach) টাকা উদ্ধারকাণ্ডে এবার স্ক্যানারে আমির খানের (Aamir Khan) বাবা নিসার খানের (Nisar Khan) ব্যবসা। গার্ডেনরিচে নিসার খানের বাড়ির কাছেই তাঁর পরিবহণ সংস্থার অফিস। নাম 'সঙ্গম ট্রান্সপোর্ট'।


এবার স্ক্যানারে বাবার ব্যবসা


গতকাল অর্থাৎ শনিবার নিসারের বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা উদ্ধারের পর তাজ্জব স্থানীয় বাসিন্দারা। নিসারের অফিস তালাবন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নিসার অফিসে এলেও, আমিরকে খুব একটা দেখা যেত না। এত এত কালো টাকা সাদা করার জন্য কি বাবার পরিবহণ ব্যবসায় টাকা ঢালতেন আমির? এই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে ইডি। খবর সূত্রের। 


গতকালের ছবি যেন টান টান থ্রিলার। প্রত্যেক ঘণ্টায় বেড়েই চলেছে নগদের পরিমাণ। শনিবার গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা।


ইডি সূত্রে দাবি, ইতিমধ্যেই পলাতক মোবাইল গেমিং অ্যাপ প্রতারণাচক্রের মূল পাণ্ডা আমির খান। এবার নজরে আমির খানের বাবা পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খান। কারণ ছেলে বেপাত্তা হওয়ার পর থেকে খোঁজ মিলছে না তাঁর বাবারও। 


বাড়িতে যে এই বিপুল পরিমাণ টাকা মজুত করে রাখা হয়েছে, তা ভাল করেই জানতেন পরিবারের সদস্যরা, এমনই দাবি করা হচ্ছে ইডির তরফে। অন্যদিকে শনিবার ইডি হানার পর, গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলির F7 নম্বরের এই বাড়ির দরজা আর খোলেনি, এমনকী ডাকাডাকিতেও মেলেনি সাড়া।


এই দোতলা বাড়ি থেকে একটু এগোলেই সার্কুলার রোডে পলাতক আমির খানের বাবা নাসির আহমেদ খানের পরিবহণ সংস্থার অফিস, ‘সঙ্গম ট্রান্সপোর্ট’। সেখানেও ঝুলছে তালা। স্থানীয়দের দাবি, উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে বাসিন্দা নিসার আহমেদ খান প্রায় ৩০-৩২ বছর আগে, সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। বাবা-ছেলে দু’জনেই বেপাত্তা হওয়ায়, প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা ভিনরাজ্যে গা ঢাকা দেননি তো? 


গোটা ঘটনায় একইসঙ্গে উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও। ইডি সূত্রে দাবি, টাকার টোপ দিয়ে গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ ওঠে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। ২৬ ডিসেম্বর, পার্ক স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ফেডারেল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ জানানো হয় লালবাজারে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের কাছেও। কিন্তু ইডি সূত্রে দাবি, সেইসময় টনক নড়েনি পুলিশের। FIR করা বা অন্য কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি পুলিশ।


এই পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের দ্বারস্থ হয় ফেডারেল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তারপর আদালতের নির্দেশে, ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিট থানায় আমির খান ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি, একই উদ্দেশ্যে একাধিক ব্যক্তির অপরাধ সংগঠন সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়। 


আরও পড়ুন: Anis Khan Case: ধারাল অস্ত্রের কোপ শরীরে, সুস্থ না হতেই আনিসের ভাইকে সাত তাড়াতাড়ি ছুটি হাসপাতালের!নয়া বিতর্ক


ইডি সূত্রে আরও দাবি, ২০২০ সালের মার্চে করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে দেশজুড়ে যখন লকডাউন চলছিল, সেই পরিস্থিতির সুযোগ নেন গেমিং অ্যাপ প্রতারণার মাস্টার মাইন্ড আমির খান। সেইসময় দিন দিন বাড়তে থাকে E-Nuggets অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ইডির তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেইসময়ই যদি ব্যবস্থা নেওয়া হত, তাহলে এত বড় প্রতারণার ফাঁদ পাততে পারত না অভিযুক্তরা। 


শনিবারের টাকা উদ্ধারের ঘটনায়, পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার খানের মেজো ছেলে এবং মূল অভিযুক্ত আমির খানের দাদাকে আটক করেছে ইডি।